বৈষম্যহীন টেকসই অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বিশেষত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের যেই চিত্র উঠিয়া আসিয়াছে উহা অনাকাঙ্ক্ষিত হইলেও অপ্রত্যাশিত নহে। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিকট পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ হস্তান্তরিত প্রতিবেদনটিতে বলা হইয়াছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এবং স্বজন-তোষণ নীতির কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিপর্যয় নামিয়া আসিয়াছে। সেই আমলে চাহিদা না থাকিলেও ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অতিরিক্ত স্থাপিত হইয়াছে, যাহার ফলে অলস বসিয়া থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকেও কেবল ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ হিসাবে এক লক্ষ কোটি টাকা দিতে হইয়াছে। অনুরূপভাবে নিছক সরকারঘনিষ্ঠ কোম্পানির মুনাফার লক্ষ্যে আমদানিনির্ভর নীতিমালা বানাইয়া দেশের জ্বালানি খাতকে ঝুঁকির সম্মুখে ঠেলিয়া দেওয়া হইয়াছে। এই দুইয়ের ফলস্বরূপ বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধির খেসারত দিতে হইতেছে সাধারণ ভোক্তাদের বাড়তি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের মাধ্যমে। নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং ভূমি অধিগ্রহণে ব্যাপক দুর্নীতিও ভোক্তাদের স্কন্ধে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপাইয়া দিয়াছে।
বস্তুত ২০১০ সালে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক লোডশেডিং দ্রুত সামাল দেওয়ার নামে যখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন প্রণয়ন করা হয় তখনই বিশেষজ্ঞরা ওই পদক্ষেপকে লুটপাটের সিংহদ্বার উন্মুক্ত করিবার সহিত তুলনা করিয়াছিলেন। সেই দিক হইতে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে তুলিয়া ধরা চিত্রটি অপ্রত্যাশিত নহে। মূলত ওই আইনটি ব্যবহার করিয়াই তৎকালীন সরকার অনুগত ব্যবসায়ীদের বিনা টেন্ডারে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করিতে দিয়াছে। পাশাপাশি যাচাই-বাছাই ব্যতিরেকে ক্ষেত্রবিশেষে বাজারমূল্য অপেক্ষা অধিক দামে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করা হইয়েছে। শুধু উহা নহে, একই প্রক্রিয়ায় বহু অদক্ষ ও ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দানের পাশাপাশি ওইগুলির চুক্তি বারংবার নবায়ন করা হইয়াছে। সর্বাধিক উদ্বেগের বিষয় হইল, সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত গত আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী কোম্পানিগুলির হস্তে জিম্মি হইয়া পড়িয়াছে।
বলাই বাহুল্য যে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত যে কোনো দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। এই খাতে বিপর্যয়ের প্রভাব আমাদের জাতীয় অর্থনীতিও এড়াইতে পারে না। যত দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ত্রুটিসমূহ সংশোধন হইবে ততই বিপর্যয়জনিত ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস সম্ভবপর হইবে। এই ক্ষেত্রে টাস্কফোর্স স্বল্প ও দীর্ঘময়াদি যেই সকল সুপারিশ করিয়াছে সেইগুলি গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া আমরা মনে করি। প্রতিবেদন অনুসারে, টাস্কফোর্সের স্বল্পমেয়াদি সুপারিশগুলির মধ্যে রহিয়াছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) শক্তিশালী ও দক্ষ করিয়া তোলা, অদক্ষ ও ব্যয়বহুল কেন্দ্র বন্ধ করিয়া দেওয়া, বেসরকারি কেন্দ্রগুলির সহিত সম্পাদিত চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন, বাস্তবভিত্তিক জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব প্রদান এবং এই খাতের উত্তম বিনিয়োগকারীদের জন্য কর অবকাশ মঞ্জুর। দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশগুলির মধ্যে রহিয়াছে– একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ তৈরি, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াইতে বিনিয়োগ, নিম্ন আয়ের মানুষের জ্বালানি অধিকার রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ ইত্যাদি। জরুরিভিত্তিতে অসম চুক্তিগুলির অন্যায্য শর্ত লইয়া জোর দরকষাকষিও প্রয়োজন। স্মরণে রাখিতে হইবে, ত্রুটিপূর্ণ চুক্তির কারণে শ্বেতহস্তীসম বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি সচল থাকিলে যদ্রূপ জাতিসমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হইবে, তদ্রূপ সেইগুলিকে অলস বসাইয়া রাখিলেও ক্যাপাসিটি চার্জের ন্যায় অযৌক্তিক ব্যয়ের বোঝা বহন করিয়া যাইতে হইবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচন ২৭ নভেম্বর
প্রতিষ্ঠার দুই দশক পর প্রথমবারের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৭ নভেম্বর এই বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. শেখ গিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
টানা ৩০ ঘণ্টা অনশনে তিন জবি শিক্ষার্থী অসুস্থ
‘নভেম্বরে সম্পূরক বৃত্তির আশ্বাস দিয়েছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যক্রম শুরু হবে। কমিশন পরবর্তী ১১ দিনের মধ্যে তফসিল প্রস্তুত ও ঘোষণা করবে। এছাড়া কমিশন ধাপে ধাপে নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এর মধ্যে থাকবে— জকসু নির্বাচন নীতিমালা ও আচরণবিধি প্রণয়ন; ছাত্র সংগঠন, সাংবাদিক সংগঠন ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে মতবিনিময়; ভোটার তালিকা প্রণয়ন, খসড়া প্রকাশ ও সংশোধন; চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ; মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই ও আপত্তি নিষ্পত্তি; প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ ও প্রচারণা কার্যক্রম।
সবশেষে ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ, একই দিনে অফিসিয়াল ফলাফল প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। দীর্ঘ আন্দোলন, দাবি-দাওয়া ও শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে অবশেষে প্রথমবারের মতো জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করলো প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংবিধি ও বিধি অনুযায়ী রোডম্যাপের প্রতিটি ধাপ বাস্তবায়িত হবে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী