Samakal:
2025-12-13@19:14:31 GMT

টাস্কফোর্সের সুপারিশ আমলে লউন

Published: 1st, February 2025 GMT

টাস্কফোর্সের সুপারিশ আমলে লউন

বৈষম্যহীন টেকসই অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বিশেষত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের যেই চিত্র উঠিয়া আসিয়াছে উহা অনাকাঙ্ক্ষিত হইলেও অপ্রত্যাশিত নহে। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিকট পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ হস্তান্তরিত প্রতিবেদনটিতে বলা হইয়াছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এবং স্বজন-তোষণ নীতির কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিপর্যয় নামিয়া আসিয়াছে। সেই আমলে চাহিদা না থাকিলেও ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অতিরিক্ত স্থাপিত হইয়াছে, যাহার ফলে অলস বসিয়া থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকেও কেবল ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ হিসাবে এক লক্ষ কোটি টাকা দিতে হইয়াছে। অনুরূপভাবে নিছক সরকারঘনিষ্ঠ কোম্পানির মুনাফার লক্ষ্যে আমদানিনির্ভর নীতিমালা বানাইয়া দেশের জ্বালানি খাতকে ঝুঁকির সম্মুখে ঠেলিয়া দেওয়া হইয়াছে। এই দুইয়ের ফলস্বরূপ বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধির খেসারত দিতে হইতেছে সাধারণ ভোক্তাদের বাড়তি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের মাধ্যমে। নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং ভূমি অধিগ্রহণে ব্যাপক দুর্নীতিও ভোক্তাদের স্কন্ধে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপাইয়া দিয়াছে। 

বস্তুত ২০১০ সালে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক লোডশেডিং দ্রুত সামাল দেওয়ার নামে যখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন প্রণয়ন করা হয় তখনই বিশেষজ্ঞরা ওই পদক্ষেপকে লুটপাটের সিংহদ্বার উন্মুক্ত করিবার সহিত তুলনা করিয়াছিলেন। সেই দিক হইতে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে তুলিয়া ধরা চিত্রটি অপ্রত্যাশিত নহে। মূলত ওই আইনটি ব্যবহার করিয়াই তৎকালীন সরকার অনুগত ব্যবসায়ীদের বিনা টেন্ডারে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করিতে দিয়াছে। পাশাপাশি যাচাই-বাছাই ব্যতিরেকে ক্ষেত্রবিশেষে বাজারমূল্য অপেক্ষা অধিক দামে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করা হইয়েছে। শুধু উহা নহে, একই প্রক্রিয়ায় বহু অদক্ষ ও ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দানের পাশাপাশি ওইগুলির চুক্তি বারংবার নবায়ন করা হইয়াছে। সর্বাধিক উদ্বেগের বিষয় হইল, সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত গত আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী কোম্পানিগুলির হস্তে জিম্মি হইয়া পড়িয়াছে।

বলাই বাহুল্য যে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত যে কোনো দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। এই খাতে বিপর্যয়ের প্রভাব আমাদের জাতীয় অর্থনীতিও এড়াইতে পারে না। যত দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ত্রুটিসমূহ সংশোধন হইবে ততই বিপর্যয়জনিত ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস সম্ভবপর হইবে। এই ক্ষেত্রে টাস্কফোর্স স্বল্প ও দীর্ঘময়াদি যেই সকল সুপারিশ করিয়াছে সেইগুলি গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া আমরা মনে করি। প্রতিবেদন অনুসারে, টাস্কফোর্সের স্বল্পমেয়াদি সুপারিশগুলির মধ্যে রহিয়াছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) শক্তিশালী ও দক্ষ করিয়া তোলা, অদক্ষ ও ব্যয়বহুল কেন্দ্র বন্ধ করিয়া দেওয়া, বেসরকারি কেন্দ্রগুলির সহিত সম্পাদিত চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন, বাস্তবভিত্তিক জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব প্রদান এবং এই খাতের উত্তম বিনিয়োগকারীদের জন্য কর অবকাশ মঞ্জুর। দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশগুলির মধ্যে রহিয়াছে– একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ তৈরি, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াইতে বিনিয়োগ, নিম্ন আয়ের মানুষের জ্বালানি অধিকার রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ ইত্যাদি। জরুরিভিত্তিতে অসম চুক্তিগুলির অন্যায্য শর্ত লইয়া জোর দরকষাকষিও প্রয়োজন। স্মরণে রাখিতে হইবে, ত্রুটিপূর্ণ চুক্তির কারণে শ্বেতহস্তীসম বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি সচল থাকিলে যদ্রূপ জাতিসমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হইবে, তদ্রূপ সেইগুলিকে অলস বসাইয়া রাখিলেও ক্যাপাসিটি চার্জের ন্যায় অযৌক্তিক ব্যয়ের বোঝা বহন করিয়া যাইতে হইবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হইয় ছ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মন্ত্রিপরিষদ সচিব‌কে বাদ দেওয়াসহ আইন‌ঢেলে সাজানোর আহ্বান: টিআইবি

মন্ত্রিপরিষদ সচিব‌কে বাদ দেওয়াসহ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ‍্যাদেশটি ঢেলে সাজানোর জন‍্য সরকারের প্রতি আহ্বান জা‌নি‌য়ে‌ছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

শ‌নিবার (১৩ ডিসেম্বর) এক বিবৃ‌তি‌তে সংস্থা‌টি ব‌লে‌ছে, বহুল প্রত্যাশিত সংস্কার-প্রক্রিয়াকে কীভাবে আমলাতান্ত্রিক অনমনীয়তা, এমনকি অন্তর্ঘাতের মাধ্যমে জিম্মি করা হচ্ছে, তার উদাহরণ হিসেবে অধ‍্যাদেশ প্রণয়ন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত অংশীজনকে অন্ধকারে রেখে বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে শুধুমাত্র এই প্রক্রিয়ায় সরকারি নিয়ন্ত্রণের কর্তৃত্ববাদি চর্চা অব্যাহত রাখার জন‍্য। যা সংস্কারবিরোধী আমলাতন্ত্রের স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে সরকারের আত্মসমর্পণের বিব্রতকর দৃষ্টান্ত।

আরো পড়ুন:

প্রতিটি আইন করার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার: টিআইবি

জাহানারার যৌন হয়রানির অভিযোগ, তদন্তে বিশেষজ্ঞ সদস্য চায় টিআইবি

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ‍্যাদেশ ২০২৫-এ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মৌলিক পরিবর্তন ঘটিয়ে কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া আমলাতন্ত্রের করায়ত্ত করার ফলে সরকারি প্রভাবের বাইরে থেকে কমিশন গঠনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ করায় গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছে টিআই‌বি।

সংস্থাটির টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ গেজেট আকারে ৯ নভেম্বর ২০২৫ প্রকাশের পর টিআইবিসহ সব অংশীজন এতে কিছু দুর্বলতা সত্ত্বেও আশান্বিত হয়েছিল যে, আমলাতন্ত্রের হাতে জিম্মিদশা কাটিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন জনপ্রত‍্যাশা ও আন্তর্জাতিকমানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গঠিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু ঠিক একমাসের মধ্যে ৮ ডিসেম্বর যে বাছাই কমিটি এই সম্ভাবনা বাস্তবায়নের মূলভিত্তি হতে পারতো, সেই কমিটিকেই সরকারি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। বাছাই কমিটিতে এই পরিবর্তন বস্তুত ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মানবাধিকার কমিশনসহ বাংলাদেশের অন‍্য সব কমিশনের অকার্যকরতার পেছনে যেভাবে সরকারি প্রভাব দীর্ঘকাল ধরে ভূমিকা রেখেছে, সেই একই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ষড়যন্ত্রের একটি দৃষ্টান্তমাত্র, কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।”

বাছাই কমিটির ওপর এ আমলাতান্ত্রিক জবরদখল ও সরকারের তা মেনে নেওয়া চরম হতাশাজনক উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এই সংশোধনের মাধ্যমে নিষ্ঠুর, অমানবিক আচরণ প্রতিহত করার লক্ষ‍্যে জাতীয় প্রতিরোধ ব‍্যবস্থা বিভাগ প্রতিষ্ঠার যে প্রশংসনীয় বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে তার এবং সার্বিকভাবে এ আইনের ভিত্তিতে গঠিতব‍্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও কার্যকরতার সব সম্ভাবনাকে ধূলিসাৎ করার জন‍্য শুধুমাত্র বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের অন্তর্ভুক্তিই যথেষ্ট।”

“তাছাড়া কমিশনের আদেশ প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে গৃহীত পদক্ষেপ কমিশনকে অবহিত করার বাধ্যবাধকতার পরিবর্তে ‘অবহিত করা যাইবে’ প্রতিস্থাপন করার মতো আরো কিছু বিধান সংযোজন করার ফলে অধ‍্যাদেশটির মাধ্যমে প্রত‍্যাশিত সব ইতিবাচক সম্ভাবনা পদদলিত করা হয়েছে,” বলে মন্তব্য করেন ড. জামান।

অনতিবিলম্বে আমলাতন্ত্রের অন্তর্ঘাতমূলক সংস্কারবিরোধী চক্রের কাছে আত্মসমর্পণের বিব্রতকর অবস্থান থেকে সরে এসে অধ‍্যাদেশটির ওপর চাপিয়ে দেওয়া বিধান, বিশেষ করে বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত বাতিল করে নতুন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ‍্যাদেশটি ঢেলে সাজানোর জন‍্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠনের জন‍্য ৬২ নম্বর অধ্যাদেশ, যা ৯ নভেম্বর ২০২৫ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়, তার অনুচ্ছেদ ৭-এ বর্ণিত বাছাই কমিটিতে আমলাতন্ত্রের কোনো প্রতিনিধি ছিলো না, যা মানবাধিকার কমিশনের অকার্যকরতার দীর্ঘদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সরকারসহ সব অংশীজনের স্বীকৃতির পরিচায়ক। অথচ, পরবর্তীতে ৮ ডিসেম্বরের গেজেটে প্রকাশিত সংশোধিত অধ্যাদেশ ৭৪-এ বাছাই কমিটিতে আমলাতান্ত্রিক আধিপত্য নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে এ অধ‍্যাদেশ প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব অংশীজনকে অন্ধকারে রেখে একতরফাভাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির নীতিমালা প্রণয়নে কমিটি গঠন
  • মন্ত্রিপরিষদ সচিব‌কে বাদ দেওয়াসহ আইন‌ঢেলে সাজানোর আহ্বান: টিআইবি
  • কম্বাইন্ড ডিগ্রি কারিকুলাম বিলম্বে উদ্বেগ বাকৃবিতে
  • ২০২৭ সালে কি নতুন শিক্ষাক্রম পাওয়া যাবে