Samakal:
2025-06-16@11:16:46 GMT

টাস্কফোর্সের সুপারিশ আমলে লউন

Published: 1st, February 2025 GMT

টাস্কফোর্সের সুপারিশ আমলে লউন

বৈষম্যহীন টেকসই অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বিশেষত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের যেই চিত্র উঠিয়া আসিয়াছে উহা অনাকাঙ্ক্ষিত হইলেও অপ্রত্যাশিত নহে। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিকট পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ হস্তান্তরিত প্রতিবেদনটিতে বলা হইয়াছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এবং স্বজন-তোষণ নীতির কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিপর্যয় নামিয়া আসিয়াছে। সেই আমলে চাহিদা না থাকিলেও ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অতিরিক্ত স্থাপিত হইয়াছে, যাহার ফলে অলস বসিয়া থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকেও কেবল ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ হিসাবে এক লক্ষ কোটি টাকা দিতে হইয়াছে। অনুরূপভাবে নিছক সরকারঘনিষ্ঠ কোম্পানির মুনাফার লক্ষ্যে আমদানিনির্ভর নীতিমালা বানাইয়া দেশের জ্বালানি খাতকে ঝুঁকির সম্মুখে ঠেলিয়া দেওয়া হইয়াছে। এই দুইয়ের ফলস্বরূপ বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধির খেসারত দিতে হইতেছে সাধারণ ভোক্তাদের বাড়তি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের মাধ্যমে। নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং ভূমি অধিগ্রহণে ব্যাপক দুর্নীতিও ভোক্তাদের স্কন্ধে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপাইয়া দিয়াছে। 

বস্তুত ২০১০ সালে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক লোডশেডিং দ্রুত সামাল দেওয়ার নামে যখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন প্রণয়ন করা হয় তখনই বিশেষজ্ঞরা ওই পদক্ষেপকে লুটপাটের সিংহদ্বার উন্মুক্ত করিবার সহিত তুলনা করিয়াছিলেন। সেই দিক হইতে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে তুলিয়া ধরা চিত্রটি অপ্রত্যাশিত নহে। মূলত ওই আইনটি ব্যবহার করিয়াই তৎকালীন সরকার অনুগত ব্যবসায়ীদের বিনা টেন্ডারে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করিতে দিয়াছে। পাশাপাশি যাচাই-বাছাই ব্যতিরেকে ক্ষেত্রবিশেষে বাজারমূল্য অপেক্ষা অধিক দামে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করা হইয়েছে। শুধু উহা নহে, একই প্রক্রিয়ায় বহু অদক্ষ ও ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দানের পাশাপাশি ওইগুলির চুক্তি বারংবার নবায়ন করা হইয়াছে। সর্বাধিক উদ্বেগের বিষয় হইল, সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত গত আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী কোম্পানিগুলির হস্তে জিম্মি হইয়া পড়িয়াছে।

বলাই বাহুল্য যে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত যে কোনো দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। এই খাতে বিপর্যয়ের প্রভাব আমাদের জাতীয় অর্থনীতিও এড়াইতে পারে না। যত দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ত্রুটিসমূহ সংশোধন হইবে ততই বিপর্যয়জনিত ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস সম্ভবপর হইবে। এই ক্ষেত্রে টাস্কফোর্স স্বল্প ও দীর্ঘময়াদি যেই সকল সুপারিশ করিয়াছে সেইগুলি গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া আমরা মনে করি। প্রতিবেদন অনুসারে, টাস্কফোর্সের স্বল্পমেয়াদি সুপারিশগুলির মধ্যে রহিয়াছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) শক্তিশালী ও দক্ষ করিয়া তোলা, অদক্ষ ও ব্যয়বহুল কেন্দ্র বন্ধ করিয়া দেওয়া, বেসরকারি কেন্দ্রগুলির সহিত সম্পাদিত চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন, বাস্তবভিত্তিক জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব প্রদান এবং এই খাতের উত্তম বিনিয়োগকারীদের জন্য কর অবকাশ মঞ্জুর। দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশগুলির মধ্যে রহিয়াছে– একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ তৈরি, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াইতে বিনিয়োগ, নিম্ন আয়ের মানুষের জ্বালানি অধিকার রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ ইত্যাদি। জরুরিভিত্তিতে অসম চুক্তিগুলির অন্যায্য শর্ত লইয়া জোর দরকষাকষিও প্রয়োজন। স্মরণে রাখিতে হইবে, ত্রুটিপূর্ণ চুক্তির কারণে শ্বেতহস্তীসম বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি সচল থাকিলে যদ্রূপ জাতিসমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হইবে, তদ্রূপ সেইগুলিকে অলস বসাইয়া রাখিলেও ক্যাপাসিটি চার্জের ন্যায় অযৌক্তিক ব্যয়ের বোঝা বহন করিয়া যাইতে হইবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হইয় ছ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’ বলেছে দলটি।

আজ শুক্রবার রাতে এনসিপির এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাত বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।

এনসিপির বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এনসিপি। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে লন্ডনে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি ‘সংসদ নির্বাচন’ বিষয়ে দলটিকে আস্থায় আনতে সফল হয়েছে সরকার। জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। কিন্তু বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রধান দাবি তথা বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করে এনসিপি।

নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে বারবার প্রতীয়মান হচ্ছে—এ কথা উল্লেখ করে এনসিপি আরও বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, জুলাই সনদ কার্যকর করা এবং বিচারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন গণ-অভ্যুত্থানকে স্রেফ একটি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পরিণত করবে এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন–আকাঙ্ক্ষাকে অবদমিত করবে।

জনগণের দাবি তথা জুলাই সনদ রচনা ও কার্যকর করার আগে নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষিত হলে তা জনগণ মেনে নেবে না বলে উল্লেখ করেছে এনসিপি। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়গুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও জুলাই সনদ রচনা এবং কার্যকর করেই আসন্ন জুলাইকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করার উদ্যোগ নিতে সরকারকে জোর দাবি জানাচ্ছে এনসিপি।’

জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জুলাই সনদ কার্যকর করা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনসিপি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গুম বিষ‌য়ে আইন প্রণয়ন ও কমিশন গঠন কর‌বে সরকার: আইন উপদেষ্টা
  • গুম বিষয়ে আইন হচ্ছে, আইনের আওতায় কমিশন গঠনের পরিকল্পনা: আইন উপদেষ্টা
  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার যেভাবে হলে ভালো হয়
  • জাফলংসহ দেশের পর্যটন উন্নয়নে সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
  • পরিবেশবান্ধব পর্যটনে সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
  • লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি