দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ব্যস্ত হযবরল নাগরিক সেবায়
Published: 2nd, February 2025 GMT
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা। রংপুর সিটি করপোরেশন ভবনে দুই ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে সেবা না পেয়েই ফিরছিলেন মানুষ। কারণ, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক আসেননি। অন্য জটিলতাও আছে। সেবা নিতে এসে নগরবাসীর এমন ফিরে যাওয়া এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। প্রায় প্রতিদিনই তালাবদ্ধ থাকে সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের কার্যালয়। এ ছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারাও নিজেদের দাপ্তরিক কাজের চাপে সময় দিতে পারছেন না। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ২০৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রংপুর সিটির বাসিন্দারা।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কিছুদিন পর রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ ৩৩টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। একসঙ্গে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে প্রশাসক ও বিভিন্ন দপ্তরের ১৫ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ৩৩টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ কর্মকর্তারা নিজেদের দাপ্তরিক ব্যস্ততার কারণে সিটি করপোরেশনে তেমন আসতেই পারেন না। এতে জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, ওয়ারিশন সনদ, নাগরিকত্ব-জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনসহ জরুরি সেবা পেতে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। কাজকর্ম ফেলে দিনের পর দিন ঘুরেও সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না।
এর মধ্যে চারটি ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা দুই কর্মকর্তা বিটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল মালেক ও এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিসুল ওহাব খান নিজ দপ্তরের কাজের চাপে সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন। এ অবস্থায় অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে সিটি করপোরেশনের দাপ্তরিক কার্যক্রম। উন্নয়ন কাজও ব্যাহত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয়ে সেবাগ্রহীতাদের উপচে পড়া ভিড়। অনেকে অনলাইনে আবেদন করে কাগজপত্র নিয়ে এসেছেন। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার প্রত্যায়ন না থাকায় সনদ ছাড়াই ফিরে যান তারা।
নাগরিক সনদ নিতে আসা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চব্বিশ হাজারী এলাকার আলিমুদ্দিন জানান, তিন দিন নগর ভবনে এসে কাউকে না পেয়ে ফিরে যান। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার নগর ভবন থেকে সনদের ফরম কিনে রিকশায় যান তাঁর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আজাদ হোসেনের কার্যালয়ে। সেখানে প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষার পরে সনদ পেয়েছেন।
২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কামালকাছনা এলাকার নাসরিন বেগম বলেন, কিছু জরুরি কাগজপত্র সত্যায়িত করতে ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকের কাছে গিয়েছিলেন। ওই কর্মকর্তা অন্য কাজে বাইরে থাকায় দু’দিন ঘুরেও সত্যায়িত করতে পারেননি।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহাদেবপুর এলাকার উত্তম কুমার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর না থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পেছনে ছুটতে সময় ও অর্থ দুই-ই ব্যয় হচ্ছে। তার পর সেবা মিলছে না।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন রংপুর মহানগর সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, সিটি করপোরেশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সবাই সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদধারী। তাদের দাপ্তরিক কাজের বাইরে নাগরিক সেবার কাজ সঠিকভাবে দেওয়া সম্ভব নয়। যতটুকু সেবা দিচ্ছেন, তা একেবারেই অপ্রতুল। সামনে জনদুর্ভোগ বাড়বে।
সিটি করপোরেশনের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধক মোহাম্মদ আলী জানান, প্রতিদিন ভিড় থাকলেও কর্মকর্তাদের প্রত্যায়ন না থাকায় সনদ দিতে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া সার্ভারের সমস্যা তো আছেই।
রংপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং নগরীর ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ হোসেন বলেন, ওয়ার্ডগুলোতে ঘোষণা দিয়েছি– কোনো সেবা প্রয়োজন হলে অফিস সময়ে আমার অধিদপ্তরের কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় আসতে। সিটি করপোরেশনে দাঁড়িয়ে থাকা সেবাপ্রার্থীরা হয়তো এ তথ্য না জানায় সেখানে অপেক্ষা করেছেন।
৯, ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সিটি করপোরেশনের সচিব উম্মে ফাতিমা বলেন, প্রথম দিকে কিছু সমস্যা হলেও বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন, নাগরিকত্ব সনদসহ সার্বিক বিষয়ে দ্রুত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বশরীরে ওয়ার্ডে যেতে না পারলেও ওয়ার্ডভিত্তিক উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সমন্বয় করে কাজ করছি।
জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রশাসক দিয়ে জনপ্রতিনিধির কাজ চালানো সম্ভব নয়। প্রশাসকদের অনেক আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকে। জনপ্রতিনিধির ক্ষেত্রে তা নেই। তার পরও কোনো কাজ ফেলে রাখি না। আর কাজ করতে গেলে এ রকম কিছু সমস্যা তো হতেই পারে
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য
প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।
ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।
আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছেপ্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।
তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩