বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা। রংপুর সিটি করপোরেশন ভবনে দুই ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে সেবা না পেয়েই ফিরছিলেন মানুষ। কারণ, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক আসেননি। অন্য জটিলতাও আছে। সেবা নিতে এসে নগরবাসীর এমন ফিরে যাওয়া এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। প্রায় প্রতিদিনই তালাবদ্ধ থাকে সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের কার্যালয়। এ ছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারাও নিজেদের দাপ্তরিক কাজের চাপে সময় দিতে পারছেন না। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ২০৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রংপুর সিটির বাসিন্দারা। 
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কিছুদিন পর রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ ৩৩টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। একসঙ্গে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে প্রশাসক ও বিভিন্ন দপ্তরের ১৫ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ৩৩টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ কর্মকর্তারা নিজেদের দাপ্তরিক ব্যস্ততার কারণে সিটি করপোরেশনে তেমন আসতেই পারেন না। এতে জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, ওয়ারিশন সনদ, নাগরিকত্ব-জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনসহ জরুরি সেবা পেতে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। কাজকর্ম ফেলে দিনের পর দিন ঘুরেও সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না। 
এর মধ্যে চারটি ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা দুই কর্মকর্তা বিটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল মালেক ও এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিসুল ওহাব খান নিজ দপ্তরের কাজের চাপে সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন। এ অবস্থায় অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে সিটি করপোরেশনের দাপ্তরিক কার্যক্রম। উন্নয়ন কাজও ব্যাহত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয়ে সেবাগ্রহীতাদের উপচে পড়া ভিড়। অনেকে অনলাইনে আবেদন করে কাগজপত্র নিয়ে এসেছেন। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার প্রত্যায়ন না থাকায় সনদ ছাড়াই ফিরে যান তারা।
নাগরিক সনদ নিতে আসা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চব্বিশ হাজারী এলাকার আলিমুদ্দিন জানান, তিন দিন নগর ভবনে এসে কাউকে না পেয়ে ফিরে যান। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার নগর ভবন থেকে সনদের ফরম কিনে রিকশায় যান তাঁর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আজাদ হোসেনের কার্যালয়ে। সেখানে প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষার পরে সনদ পেয়েছেন। 
২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কামালকাছনা এলাকার নাসরিন বেগম বলেন, কিছু জরুরি কাগজপত্র সত্যায়িত করতে ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকের কাছে গিয়েছিলেন। ওই কর্মকর্তা অন্য কাজে বাইরে থাকায় দু’দিন ঘুরেও সত্যায়িত করতে পারেননি।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহাদেবপুর এলাকার উত্তম কুমার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর না থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পেছনে ছুটতে সময় ও অর্থ দুই-ই ব্যয় হচ্ছে। তার পর সেবা মিলছে না।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন রংপুর মহানগর সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, সিটি করপোরেশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সবাই সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদধারী। তাদের দাপ্তরিক কাজের বাইরে নাগরিক সেবার কাজ সঠিকভাবে দেওয়া সম্ভব নয়। যতটুকু সেবা দিচ্ছেন, তা একেবারেই অপ্রতুল। সামনে জনদুর্ভোগ বাড়বে। 
সিটি করপোরেশনের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধক মোহাম্মদ আলী জানান, প্রতিদিন ভিড় থাকলেও কর্মকর্তাদের প্রত্যায়ন না থাকায় সনদ দিতে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া সার্ভারের সমস্যা তো আছেই। 
রংপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং নগরীর ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ হোসেন বলেন, ওয়ার্ডগুলোতে ঘোষণা দিয়েছি– কোনো সেবা প্রয়োজন হলে অফিস সময়ে আমার অধিদপ্তরের কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় আসতে। সিটি করপোরেশনে দাঁড়িয়ে থাকা সেবাপ্রার্থীরা হয়তো এ তথ্য না জানায় সেখানে অপেক্ষা করেছেন।
৯, ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সিটি করপোরেশনের সচিব উম্মে ফাতিমা বলেন, প্রথম দিকে কিছু সমস্যা হলেও বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন, নাগরিকত্ব সনদসহ সার্বিক বিষয়ে দ্রুত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বশরীরে ওয়ার্ডে যেতে না পারলেও ওয়ার্ডভিত্তিক উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সমন্বয় করে কাজ করছি। 
জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রশাসক দিয়ে জনপ্রতিনিধির কাজ চালানো সম্ভব নয়। প্রশাসকদের অনেক আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকে। জনপ্রতিনিধির ক্ষেত্রে তা নেই। তার পরও কোনো কাজ ফেলে রাখি না। আর কাজ করতে গেলে এ রকম কিছু সমস্যা তো হতেই পারে

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

পাবনা-ঢাকা রুটে আবারও বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা

রাবেয়া বেগম আজ রোববার সকাল নয়টার দিকে ঢাকা থেকে পাবনার বেড়াগামী আলহামরা পরিবহনের বাসে উঠেছিলেন। গন্তব্যের ২০ কিলোমিটার আগে পৌঁছার পর জানতে পারেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর হয়ে পাবনার বাস যেতে পারবে না। শাহজাদপুর বাসস্ট্যান্ডের অনেক আগে তালগাছি এলাকায় সব যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তাঁকে বেড়ায় পৌঁছাতে হয়।

পাবনা ও শাহজাদপুরের অনেক যাত্রীকে আজ রোববার দিনভর এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই দুর্ভোগের কারণ, পাবনা ও শাহজাদপুর বাসমালিকদের পুরোনো দ্বন্দ্ব। আজ সকাল থেকে দুই এলাকার বাস চলাচল আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। পাবনা থেকে শাহজাদপুর হয়ে ঢাকা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে কোনো বাস চলাচল করছে না। একইভাবে শাহজাদপুর থেকেও পাবনার দিকে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না।

বাসমালিক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে চলতি বছরেই অন্তত চারবার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। আর গত সাত-আট বছরে বাস চলাচল বন্ধ ছিল অন্তত ৩০ বার। একবার বাস চলাচল বন্ধ হলে তা চালু হতে সময় লেগেছে পাঁচ দিন থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত।

বাসমালিক ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা যায়, শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতি ও পাবনার নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রুট ও সময়সূচি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। পাঁচ-ছয় দিন আগে নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির লোকজন শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতির মালিকানাধীন নবীনবরণ পরিবহন নামের একটি বাস আটকায়। এর প্রতিবাদে শাহজাদপুরের বাসমালিকেরা নগরবাড়ী সমিতির মালিকানাধীন বাসগুলো চলাচলে বাধা দেন। ঘটনার জেরে গতকাল শনিবার পাবনার দাশুড়িয়ায় নবীনবরণ পরিবহনের একটি বাস আটকে রাখে পাবনা বাসমালিক সমিতি। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় আজ সকালে শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতি শাহজাদপুরের ওপর দিয়ে পাবনার সব বাসের চলাচল বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে পাবনার সড়ক দিয়েও শাহজাদপুরের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাবনা ও শাহজাদপুর উভয় সমিতির দুই শতাধিক বাস আজ সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবহনশ্রমিকেরাও।

এদিকে পাবনা থেকে বেড়া হয়ে ঢাকাগামী বেশির ভাগ পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। দু–একটি বাসের কাউন্টার খোলা থাকলেও সেসব বাস বেড়া থেকে যাত্রী নিয়ে কাজীরহাট ফেরিঘাট হয়ে অথবা নাটোরের বনপাড়া হয়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে ঢাকা যাচ্ছে।

পাবনা এক্সপ্রেস পরিবহনের বেড়া কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মঞ্জুরুল হাসান বলেন, ‘শাহজাদপুর হয়ে পাবনার কোনো বাস যেতে না পারায় আমাদের বাসগুলো হয় ফেরি হয়ে, না হয় নাটোরের বনপাড়া ঘুরে ঢাকা যাচ্ছে।’

শাহজাদপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাবনা ও নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতি আমাদের বাস চলাচলে বাধা দেওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে যাত্রীদের যেমন দুর্ভোগ হচ্ছে, তেমনি উভয় মালিক সমিতিরই ক্ষতি হচ্ছে। দুই পক্ষ আলোচনায় বসলে আশা করি সমাধানের পথ পাওয়া যাবে।’

পাবনা বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোমিন মোল্লা বলেন, ‘শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতির লোকজন প্রায় এক মাস ধরে নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির বাসগুলো শাহজাদপুরের ওপর দিয়ে যেতে দিচ্ছিল না। আজ থেকে তারা পাবনার সব বাসের চলাচল বন্ধ করে দিল। শাহজাদপুর মালিক সমিতি ছোটখাট যেকোনো ব্যাপার হলেই তাদের এলাকার ওপর দিয়ে পাবনার বাস চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাবনা-ঢাকা রুটে আবারও বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা