টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অফুরন্ত সম্ভাবনা
Published: 2nd, February 2025 GMT
এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মৌসুম। ফেসবুক গ্রুপগুলোয় হরহামেশাই তর্ক হয় ক্যাম্পাস কিংবা সাবজেক্ট রিভিউ নিয়ে। ক্যাম্পাস কেমন, সাবজেক্ট ভালো কী মন্দ, চাকরি-বেতন কিংবা উচ্চশিক্ষার সুযোগ কেমন– আরও যে কত প্রশ্নের আবির্ভাব! টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট রিভিউয়ের এক ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে একজন লিখলেন, ইঞ্জিনিয়ারিংই যেহেতু করবে কাপড় নিয়ে কেন। অন্য একটি কমেন্টে চোখ আটকে গেল। লিখেছেন, ‘গ্র্যাজুয়েট হয়েছি তিন দিন হলো আর চাকরির বয়স দুই মাস।’ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ কেবল আমাদের পরিহিত কাপড় নিয়ে নয়, এর বিস্তৃতি ব্যাপক। আজ তাহলে দেশে সবচেয়ে বেশি চাকরির সুযোগের বিষয়টি নিয়ে জানা যাক। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সবার আগে টেক্সটাইলের মৌলিক বিষয়গুলো শেখানো হয়। পলিমার সায়েন্স, ন্যাচারাল ফাইবার, ম্যান-মেইড ফাইবার ইত্যাদির মাধ্যমে টেক্সটাইলের ক্ষুদ্র অংশ ফাইবার নিয়ে জানা হয়। তারপর ইয়ার্ন, ফেব্রিক, অ্যাপারেল এবং ওয়েট প্রসেসিংয়ের বিভিন্ন কোর্সের বিষয়াবলি শেখানো হয়।
ইন্ডাস্ট্রিতে একটি পোশাক তৈরি করতে নানা প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হয়। শুরুতে আমদানিকৃত কটন বা তুলার আঁশ বা ফাইবারকে বিশুদ্ধকরণ করা হয়। তারপর তা স্পিনিং প্রক্রিয়ায় সুতা বানানো। সুতা থেকে ফেব্রিক আর ফেব্রিক থেকে অ্যাপারেল এবং তা থেকে ব্যবহার উপযোগী পোশাক বানানো হয়। কার্ডিং, লোমিং, ড্রায়িং, প্রিন্টিং, কাটিং, সুইং, ইন্সপেকশন, ফিনিশিংসহ বহু প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাতে। পরে এসব শেখানো হয়। ইন্ডাস্ট্রিতে প্রকৌশলদের কাজ প্রোডাকশন, রিসার্চ, ফাইবারের গুণগত মানোন্নয়ন, মেশিনারি ডিজাইন করে কার্যকরী উপায়ে পোশাক উৎপাদন করা– যেন তা বেশিদিন টিকে, আরামদায়ক হয়, দেখতে আরও সুন্দর ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে।
আমরা মুখে মাস্ক ব্যবহার করি। বৃষ্টিতে ছাতা ব্যবহার কিংবা রেইনকোট গায়ে দিই। আবার অগ্নিনির্বাপকের কাজে দমকলকর্মীরা পরেন বিশেষ ধরনের পোশাক। নভোচারীরা মহাকাশে ভ্রমণ করে স্পেস স্যুট পরেন। সবকিছু টেক্সটাইল প্রকৌশলবিদ্যার অংশ। চার বছরের স্নাতক শেষ করে ইন্ডাস্ট্রিতে আছে প্রচুর চাকরি। আমাদের দেশ টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানিতে পৃথিবীতে দ্বিতীয়। বহু প্রতিষ্ঠানে উইভিং-নিটিং প্রোডাকশন, ডায়িং কিংবা মার্চেন্ডাইজিং ইত্যাদিতে চাকরির শেষ নেই। সিংহভাগ চাকরি বেসরকারি হলেও কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে চাকরির সুযোগ। আবার কেউ চাইলে উচ্চশিক্ষায় যেতে পারেন দেশের বাইরে। বহির্বিশ্বে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ ব্র্যান্ডিংয়ে কাজ করে যাচ্ছে টেক্সটাইল প্রকৌশলীরা। দেশে এতসব টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন হয় দক্ষ প্রকৌশলীর। তাই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ল্যাবে হাতে-কলমে তা শেখানো হয়, পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট ও ইন্টার্নশিপের সুযোগ থাকে অনেক বেশি। গ্র্যায়জুয়েশনের আগে চাকরিতে প্রবেশের রেওয়াজ আছে। অনেকে কপাল কুঁচকিয়ে এই চিন্তা করেন, পাস করার আগেই চাকরিতে ঢুকবেন কিনা।
যেখানে পড়ানো হয়
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে চারটি অনুষদের অধীনে আছে মোট ১১টি বিভাগ। শিক্ষার্থীরা বিভাগভিত্তিক স্পেশালাইজড বিষয় পড়ানো হলেও সব বিভাগের ডিগ্রি এক; তা হলো বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং। তাছাড়া সরকারি যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় তা হলো খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া কলেজ ও ইনস্টিটিউট মিলে বুটেক্সের অধিভুক্ত রয়েছে মোট দশটি প্রতিষ্ঠান। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ কর র
এছাড়াও পড়ুন:
আমদানি বৃদ্ধি ইতিবাচক, ধারাবাহিকতা থাকতে হবে
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও ভোগ্যপণ্যের ঋণপত্র খোলার হারে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সেটিকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। তবে তিন মাসের চিত্র দিয়ে সামগ্রিক অবস্থা এখনো মূল্যায়ন করার সময় হয়নি।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে হঠাৎ প্রায় ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। এটা সুখবর হলেও কোনো বড় প্রকল্পের মালামাল আমদানিতে এত বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। যদি সত্যিকারের নতুন নতুন কারখানার যন্ত্রপাতি আমদানির মাধ্যমে এ প্রবৃদ্ধি ঘটে, তাহলে তা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ধারাবাহিকতা থাকলেই বলা যাবে, দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে। বিনিয়োগ হলে সামনে কর্মসংস্থানও বাড়বে। আর তাতে অর্থনীতিতেও গতি সঞ্চার হবে।
মূলধনি যন্ত্রপাতির মতো ভোগ্যপণ্যের ঋণপত্র খোলার হারও বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তিন মাসের যে তুলনা করে দেখিয়েছে, তাতে ঋণপত্র খোলার হার ২০ শতাংশ বেড়েছে।
সব মিলিয়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা আগামী কয়েক মাস অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিতে কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে।
মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার, পরিচালক, টি কে গ্রুপ