কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) আন্তঃবিভাগ শহীদ আব্দুল কাইয়ূম স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টে দেওয়া সনদে বানান ভুলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

জানা গেছে, গত বছরের ১৩ নভেম্বর শুরু হয় আন্তঃবিভাগীয় শহিদ আব্দুল কাইয়ূম স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট। কয়েকবার মারামারির ঘটনায় খেলা স্থগিত হলেও পরবর্তীতে ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে, একই দিনে সকাল ১০টায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে ০-২ গোলে হারিয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।

ফাইনালের দিন পুরস্কার দেওয়া হলেও সনদ দেওয়া বাকি ছিল। পরে গত ২৭ জানুয়ারি শারীরিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে সনদ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রেরণ করা হয়। বিভাগ থেকে ১ ফেব্রুয়ারি সনদ সংগ্রহ করেন শিক্ষার্থীরা। সনদ হাতে পাওয়ার পর বানান ভুলের বিষয়টি চোখে পড়ে তাদের।

সেখানে দেখা যায়, সনদে তৃতীয় স্থান অধিকারী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দলের খেলোয়াড়দের প্রদান করা সনদে ‘3rd Palace’ লেখা রয়েছে। যার শুদ্ধ বানান ‘3rd place’।

এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের খেলোয়াড় তৌকির আহমেদ বলেন, “বানান ভুল করা কুবির শারীরিক শিক্ষা বিভাগের নিত্যদিনের কাজ। শুধু এবারই নয়, আগেও অনেকবার এ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। কখনো শিক্ষা বানান ভুল, তো কখনো কুমিল্লা বানান ভুল। সনদের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করা তাদের কাছে খুবই তুচ্ছ ও স্বাভাবিক বিষয়। তবে, এতগুলো বানানের মধ্যে শুধু একটি বানান ভুল করার জন্য শারীরিক শিক্ষা বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই!”

একই বিভাগের শিক্ষার্থী ও অধিনায়ক মোবাশ্বের আলী মিনার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় খেলাধুলার সনদের প্রতি খেলোয়াড়দের একটা অন্যরকম আগ্রহ থাকে। দুই মাসের একটা টুর্নামেন্ট শেষে আমরা সনদ পেয়ে যখন বানান ভুল দেখি, তখন আমরা স্বাভাবিকভাবে হতাশ হই। ভুল বানানযুক্ত এ সনদগুলো এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজের প্রমাণ হিসেবে কোথাও ব্যবহার করতে চাইলে পারব না। এর আগে আমাদের আরেকটা টুর্নামেন্টের সনদেও বানান ভুল আসছিল। ফলে সেগুলো আমরা কোথাও ব্যবহার করতে পারিনি। সনদের প্রতি প্রশাসনের এত উদাসীন হওয়া খুবই দুঃখজনক।” 

এ বিষয়ে শারীরিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনিরুল আলম বলেন, “আমি এ বিষয়টি আজ জানতে পেরেছি। একটি বানান ভুল আছে। ভুল তো হতেই পারে, যেকোন জায়গায়ই ভুল হয়। আমরা বিভাগকে জানিয়েছি, বানান সংশোধন করে আবার প্রদান করব।”

ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক ড.

মোহাম্মদ সোহবার উদ্দিন বলেন, “বানান ভুলের কথা আমি মাত্র শুনলাম। আমি বলে দেব, যাতে স্বল্প সময়ের মধ্যে ভুলগুলো সংশোধন করে দেওয়া হয়। বিগত সময়ে কি ভুল হয়েছে, আমার তা জানা নেই। তবে আগামীতে আমরা আরও সর্তক থাকব।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব দ কত

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ