মেট্রোরেলে যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে আয় হয়েছে ২৪৩ কোটি ৯১ লাখ ৭ হাজার ৬২৫ টাকা। এর আগের অর্থবছরে আয় হয় ১৮ কোটি টাকা। মেট্রোরেল চালুর পর গত সোমবার সর্বোচ্চ দুই লাখ ৮২ হাজার যাত্রী মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেছেন। 

সোমবার রিপোর্টার্স ফর রেল এন্ড রোডের (আরআরআর) সদস্যদের সঙ্গে বিনিময়ে সভায় মেট্রোরেলের নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সরকারি কোম্পানি ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ এ তথ্য জানিয়েছেন। রাজধানীর দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেল ডিপোতে এ সভা হয়।
 
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের এমআরটি-৬ লাইনের দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশ চালু হয়। পরের বছরের অক্টোবরে চালু হয় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। আগামী জুনে মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশ উদ্বোধনের মাধ্যমে ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি-৬ লাইনের পুরোটা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। 

মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, প্রথম বছর পরীক্ষামূলক ট্রেন চলেছিল। তখন দিনে ১০ বার ট্রেন চলত। এখন ট্রিপের সংখ্যা ২০০। ডিএমটিসিএলের লক্ষ্য দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী পরিবহন। তখন মেট্রোরেলে ভর্তুকি থাকবে না। এ দিন বেশি দূরে নয়। দিয়াবাড়ি থেকে টঙ্গী পর্যন্ত এমআরটি-৬ লাইন বর্ধিত হলে যাত্রী আরও বাড়বে।

আগামী মে মাস থেকে শুক্রবার সকালেও ট্রেন চলালোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবদুর রউফ। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগানো নিষিদ্ধ হলেও, নান্দনিকতাকে বৃদ্ধিতে গ্রাফিতি গ্রহণযোগ্য। কিন্ত প্রাফিতিতে মনের আনন্দে এখন অনেকে পোস্টার লাগাচ্ছে। তা বন্ধে সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশকে চিঠি দিচ্ছি।
 
৫ আগস্টের ডিএমটিসিএলের কর্মীরা পেশাগত মর্যাদা, গ্রেড ও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতি করেছিলেন। আবদুর রউফ বলেন, এখন পর্যন্ত ২০০ জন কর্মী চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। একজন কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরির পর চলে যাচ্ছে। হুট করে নতুন লোক পাচ্ছি না। যা চ্যালেঞ্জ।
 
সভায় অংশ নেন ডিএমটিসিএলের পরিচালক নাসির উদ্দিন আহমেদ, পরিচালক মো.

আফতাবুজ্জামান, আরআরআর সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. তাওহীদুল ইসলাম, সহসভাপতি পার্থ সারথি দাস এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য মুনিমা সুলতানা প্রমুখ। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল র পর

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলভীবাজারে শীত আসতেই তৎপর পাখিশিকারিরা, নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ

হেমন্তের সকাল। হালকা কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতল প্রকৃতি দেখে সঠিক সময় ঠাহর করা একটু মুশকিল। তবে ঘড়ির কাঁটা বলছে সাড়ে ছয়টা। কাউয়াদীঘি হাওরপারের ওয়াপদা-কাশিমপুর হাটের কাছাকাছি যেতেই এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা। নানা প্রসঙ্গে শেষে তিনি এই প্রতিবেদককে খবর দিলেন, ‘হাটে একটু খিয়াল করবেন। জাল দিয়ে হাওরে পাখি শিকার করা হচ্ছে। হাটে এসব পাখি বিক্রি করে অনেকেই।’

তবে সেদিন মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের ওই হাটে গিয়ে বিক্রির জন্য আনা কোনো পাখির দেখা পাওয়া যায়নি। একাধিক সূত্র জানায়, মৌসুমের এ সময়ে পরিযায়ীসহ দেশি পাখির শিকার বাড়ে। আর এসবের অধিকাংশই বিক্রি হয় চুপিসারে।

ওয়াপদা-কাশিমপুর হাটটি পড়েছে ফতেহপুর ইউনিয়নের কাউয়াদীঘি হাওর ও কুশিয়ারা নদীর তীরে। ২৮ নভেম্বর সকালে হাট থেকে ফেরার পথে হাওরপারের কাশিমপুর এলাকার মাঠে পাখি শিকারের জন্য পাতা জালের ফাঁদ দেখা গেছে। অনেকগুলো খুঁটিতে বাঁধা অবস্থায় এসব জাল পেতে রাখা হয়েছে। রাতের বেলা যখন হাওরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাখিরা ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ায়, তখন এসব জালে আটকা পড়ে এগুলো। এরপর এসব পাখি স্থানীয় বাজারে বা লুকিয়ে নির্দিষ্ট কয়েকজনের কাছে বিক্রি করা হয়।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, জালের পাশাপাশি বন্দুক বা এয়ারগান ব্যবহার করেও হাওরে পাখি শিকার করা হচ্ছে। মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওরপারের কিছু এলাকায় মাঝেমধ্যেই এমন শিকার চলে। হাওরপারের অনেক বাড়িতে সাদা বক, পানকৌড়িসহ স্থানীয় ও পরিযায়ী পাখি আশ্রয় নেয়; সকাল হলে তারা দলে দলে হাওর ও মাঠের দিকে উড়ে যায়, বিকেলে ফিরে আসে। রাতের অন্ধকারে কিছু শিকারি টর্চের আলো ফেলে বন্দুক দিয়ে এসব পাখিই শিকার করে। কোনো কোনো বাড়ির লোকজন বাধা দিলেও সবার পক্ষে তা সম্ভব হয় না।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এখনো শীত তীব্র হয়নি, কিন্তু পরিযায়ী পাখি আসা শুরু করতেই শিকারিদের তৎপরতা বেড়েছে। হাকালুকি, কাউয়াদীঘি ও হাইল হাওর এলাকায় খেতের ধারে ও বিলের পাশে জাল পেতে রাখা হচ্ছে। রাতের অন্ধকারে এসব জাল চোখে না পড়ায় পাখি আটকা পড়ে; সকালে পেশাদার শিকারিরা তা নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছে বিক্রি করে। হাকালুকি হাওরে প্রায় প্রতি শীতেই বিষটোপ ব্যবহার করে পাখি শিকারের ঘটনাও ঘটে।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকজন শিকারির হাত থেকে পাখি উদ্ধার ও অবমুক্ত করার ছবি-ভিডিও শেয়ার করেছেন। ২ ডিসেম্বর একজন দুটি কালেম পাখি এবং ১৩ নভেম্বর চারজন মিলে চারটি সরালি হাঁস অবমুক্ত করেছেন—এমন দৃশ্য প্রকাশ্যে এসেছে। তবে অধিকাংশ শিকারই গোপনে হওয়ায় ঘটনা খুব কমই জানা যায়। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিযায়ী পাখি বাড়ে, সেই সঙ্গে বাড়ে শিকারও।

হাওরপারের অনেক বাড়িতে সাদা বক, পানকৌড়িসহ স্থানীয় ও পরিযায়ী পাখি আশ্রয় নেয়; সকাল হলে তারা দলে দলে হাওর ও মাঠের দিকে উড়ে যায়, বিকেলে ফিরে আসে। রাতের অন্ধকারে কিছু শিকারি টর্চের আলো ফেলে বন্দুক দিয়ে এসব পাখিই শিকার করে।

রোববার পরিবেশকর্মী তুহিন জুবায়ের তাঁর ফেসবুক আইডিতে শ্রীমঙ্গলের মীর্জাপুরে শাপলা বিলের একটি ভিডিও প্রকাশ করে লিখেছেন, হাওরাঞ্চলে এখনো নিয়মিত পাখি শিকার হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে—নৌকার ভেতর শাপলার পাশে বাঁধা দুটি সাদা বক, আর তরুণ এক শিকারির হাতে শাপলার আঁটির সঙ্গে ঝুলছে আরেকটি বক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তুহিন জুবায়ের বলেন, পাখি পরিবেশের অন্যতম অংশ। পরিযায়ী পাখি জলজ পরিবেশকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাখি শিকার নিষিদ্ধ, অথচ এই আইন কার্যকর করতে প্রচার, প্রয়োগ যতটা দরকার, তাতে ঘাটতি আছে। জীববৈচিত্র্য ও হাওর রক্ষায় প্রশাসন ও স্থানীয় পর্যায়ে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করা জরুরি।

নিজেদের জনবলসংকটের কথা স্বীকার করেছেন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবুল কালাম। তিনি জানান, বিভিন্ন হাট-বাজারে অভিযান চলছে, পাখি উদ্ধার ও অবমুক্ত করা হচ্ছে। কিছু শুভানুধ্যায়ী তথ্য দেন, সেসব জায়গায়ও অভিযান হয়। হাইল হাওর, বাইক্কা বিল ও ভৈরব বাজার এলাকায় নিয়মিত অভিযান দেওয়া হয়েছে। তবে জনবলসংকটের কারণে শিকার পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না।

আবুল কালাম আরও বলেন, উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হতো। বিভিন্ন সংগঠন ও পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শিকার-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানো হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ