সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব প্রকাশ ৮ ফেব্রুয়ারি: আইন উপদেষ্টা
Published: 4th, February 2025 GMT
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সংস্কার কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, ‘‘ওই দিন থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ শুরু করবে। একই সঙ্গে কমিশন ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে পারে।’’
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংকালে এসব তথ্য জানান আইন উপদেষ্টা ড.
আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘আজ ছয়টি কমিশনের প্রধানরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ছয়টি কমিশনের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট কমিশনগুলোর প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।’’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘৮ ফেব্রুয়ারি একইসঙ্গে সংস্কার কমিশনের প্রধানরা সংস্কার কমিশনে আশু করণীয় কী, মধ্যম মেয়াদি কী আছে এবং দীর্ঘ মেয়াদি কী আছে সেগুলো পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী করণীয় কী আছে সেগুলো পর্যালোচনা, কমিশনগুলো রিপোর্ট, সব রাজনৈতিক দল, জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলো যারা আছেন তাদের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’
পরবর্তীতে জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে জাতীয় ঐক্য কমিশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আমরা আশা করছি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তারিখ নির্ধারণ করা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন কমিশনের প্রধান এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
সংবিধান বাতিল নাকি পুনরায় লেখা হবে জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘সংবিধান বাতিল সংশোধনী ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ছয়টি কমিশনের প্রধানদের কাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হবে। এরপর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে যারা বসবেন তারা কমিশনের প্রধান নয় জাতীয় কমিশনের সদস্য হিসেবে বসবেন। সংবিধানের ব্যাপারে কোন পদ্ধতিতে ঐকমত্য পৌঁছানো হবে, সেই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত হবে।’’
ঢাকা/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন উপদ ষ ট র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
সব অংশীদারকে আন্তরিক হতে হবে
রাজনৈতিক ঐকমত্যের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার যে সংলাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে, তাতে দেশবাসীর মনে নতুন করে আশাবাদ জেগেছে বলা যায়। রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গত বছর সরকার যে ১১টি কমিশন গঠন করেছিল, সেগুলোর বেশির ভাগই ইতিমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর মধ্যে আছে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও বিচারবিষয়ক সংস্কার কমিশন।
বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণকালে একে জাতীয় ও বিশ্বের সম্পদ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সংস্কার কমিশনগুলোর এই সুপারিশ ইতিহাসে স্থান করে নেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এর আগে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছিলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি ছয়টি সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে এবং কমিশনপ্রধানেরা মিলিত হয়ে আশুকরণীয়, মধ্যকরণীয় ও নির্বাচনের পরে করণীয় বিষয়ে সুপারিশমালা পেশ করবেন। আর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সব রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনের পক্ষের শক্তি, সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আমরা মনে করি, বিভিন্ন কমিশন যেখানে কাজ শেষ করেছে, সেখান থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার ও অংশীজনদের কাজ শুরু হবে। এই অংশীজনদের মধ্যে আছে অন্তর্বর্তী সরকার, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজন। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে অভিযোগ এসেছে, এর আগে যেসব সংলাপ হয়েছে, তাতে তারা যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে মতামত প্রকাশের সুযোগ পায়নি। এবার সংলাপটা এমনভাবে করতে হবে, যাতে সব পক্ষ খোলামেলাভাবে ও যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে।
নির্বাচন আগে না সংস্কার আগে—রাজনৈতিক মহলে যে বিতর্ক আছে, সেটা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করি। আশা করা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হলে এর অবসান হবে।
আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক পটভূমিতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য অংশীজনের সমর্থন ও সহায়তা না পেলে তারা কোনো কাজে সফল হবে না। আবার অন্তর্বর্তী সরকারও অংশীজনদের বাদ দিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিলে তা-ও সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এখানে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা ও বোঝাপড়া থাকতে হবে।
আমরা যতটা জানি, কোনো দলই সংস্কারের বিষয়ে আপত্তি করেনি। তবে সংস্কারের মাত্রা নিয়ে মতপার্থক্য আছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়েও মতভেদ থাকতে পারে। কোনো গণতান্ত্রিক সমাজে এটা অস্বাভাবিক নয়। কথা হলো এই ভিন্নমতকে আমরা কীভাবে মোকাবিলা করব? আলোচনা ও যুক্তিতর্কই এ ক্ষেত্রেই একমাত্র পথ।
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর জনমনে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, সেটা পূরণ করার দায়িত্ব যেমন অন্তর্বর্তী সরকারের, তেমনি আন্দোলনের অংশীজনদেরও। তাঁরা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটাতে যে দৃঢ় ঐক্যের পরিচয় দিয়েছেন, নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়েও তাঁরা ঐকমত্যে পৌঁছাবেন বলে আশা করা যায়। সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে, তাঁরা যে সংগঠন বা দলের হয়ে কথা বলছেন, তাঁরা কেবল তাদেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন না। প্রতিনিধিত্ব করছেন ১৭ কোটি মানুষকে। জনমানুষের প্রত্যাশাকে সবাইকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।
বিগত তিনটি নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেননি। অতএব অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন একটি নির্বাচন করতে হবে, সেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন, সব প্রতিযোগী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাবেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসতে না পারে, সে জন্য সংস্কারের বিষয়টিও উপেক্ষা করা যাবে না। নির্বাচনের দিন-তারিখ কিংবা সংস্কারের মাত্রা কী হবে—এগুলো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠারও কোনো বিকল্প নেই।