SunBD 24:
2025-12-13@04:24:22 GMT

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Published: 4th, February 2025 GMT

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান গ্রেফতারআগরতলা বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ভিসা সেবা চালু হচ্ছে কালফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিতরমজানে দুর্নীতিমুক্ত ত্রাণ প্যাকেজ চালু করবে পাকিস্তানরিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামানজেনিথ ইসলামী লাইফের সব সূচকেই প্রবৃদ্ধি১৫ বছরের জঞ্জাল পরিষ্কার করেই নির্বাচন হতে হবে: গোলাম পরওয়াররমজানে কম লাভ করে জনগণের পাশে দাঁড়াতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টারগুচ্ছভর্তি পরীক্ষায় থাকছে ২০ বিশ্ববিদ্যালয়জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কমে ৯.

৯৪ শতাংশ

উৎস: SunBD 24

এছাড়াও পড়ুন:

মানি অর্ডার ও চিঠির দিনগুলো

আশির দশকের প্রথম দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। আমার সেশন ছিল ১৯৮৩-৮৪। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে হলে সিট পাওয়ার কথা চিন্তাও করা যেত না। বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে কাজলায় মেসে উঠি। থাকা-খাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বরাদ্দ ছিল মাসে ৫০০ টাকা। মেসে সিটভাড়া ৫০ টাকা। তিন বেলা আহার বাবদ পড়ত প্রতিদিন ১০-১২ টাকা। খাবার বলতে সকালে আলুভর্তা-ভাত। দুপুরে ও রাতে থাকত মাছ বা ডিম, সঙ্গে পাতলা ডাল। মাসে দু-একবার জুটত গোশত, তা-ও খুব ছোট এক বা দুই টুকরা।

যখন টাকায় টান পড়ত, কখনো কখনো ১০০ টাকা অতিরিক্ত পেতাম। টাকা আসত পোস্ট অফিসের মাধ্যমে মানি অর্ডারে। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার বলরামপুর গ্রামে আমাদের বাড়ি থেকে টাকা আসতে সময় লাগত প্রায় এক সপ্তাহ।

ডাকপিয়ন মামা মেসে এসে সাইকেলে বেল বাজাতেন। আমরা বুঝে যেতাম, মামা এসেছেন। আমরা সবাই রুম থেকে বের হতাম। মামা ৫০০ টাকা ভাংতি করে নিয়ে আসতেন। চারটি ১০০ টাকার নোট, ৫০ টাকার নোট একটি, দুটি ২০ টাকার নোট ও দুটি ৫ টাকার নোট দিতেন। ওনাকে ৫ টাকা বকশিশ দিতাম। খুব খুশি হতেন।

মানি অর্ডার ফরমের নিচে চিঠি লেখার কিছু জায়গা থাকত। মামা টাকাপ্রাপ্তির স্বাক্ষর নিয়ে চিঠির ওই অংশটুকু মানি অর্ডার ফরম থেকে ছিঁড়ে দিয়ে যেতেন।

কোনো প্রয়োজন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে শহরে যেতাম। আসার সময় বাস মিস করলে বন্ধুরা মিলে দুই টাকার বাদাম কিনে গল্প করতে করতে হাঁটা ধরতাম পদ্মার বাঁধের ওপর দিয়ে। বিকেলের নরম আলোয় পদ্মার রুপালি ঝিলিক আর রাস্তার ধারে গাছের ছায়ায় শান্ত ও স্নিগ্ধ পথ ধরে পাঁচ কিলোমিটার পথ কখন যে শেষ হয়ে যেত, বুঝতেই পারতাম না।

এক শীতের রাতে টের পেলাম, মেসের পাশের বাসায় তেলের পিঠা বানানো হচ্ছে।

কী করে পিঠা খাওয়া যায়? তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সহকারী সম্পাদক। ছিলাম দৈনিক উত্তর বার্তা ও রাজশাহী বেতারের প্রতিনিধি। প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছিল।

অনুষ্ঠানের কার্ড নিয়ে ওই বাসায় ঢুকলাম। কার্ড দিয়ে চলে আসার ভান করতেই ভাবি বসতে বললেন। খুব বেশি আপত্তি না করে বসে পড়লাম। একটা পিঠা খেয়েই বাদবাকি পিঠা জ্যাকেটের পকেটে ভরে চলে এলাম জরুরি কাজের কথা বলে। মেসে আসার পর সব পিঠা রুমমেটরা ভাগ করে খেল।

বিকেলে বা বন্ধের দিনে কোনো বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন হলে স্লিপে নাম ও রুম নম্বর লিখে হলের গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। কোনো ছাত্রী হলে ঢুকলে অনুরোধ করে তাঁর হাতে স্লিপ ধরিয়ে দিতাম। কেউ নিতেন, কেউ নিতেন না। কখনো ওই স্লিপ পৌঁছাত, কখনো পৌঁছাত না। অনেকেই হলের ভেতরে গিয়ে স্লিপ ফেলে দিতেন।

তখন দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। রাজশাহী বেতার থেকে চুক্তিপত্র পেলাম। দুই দিন পর ‘নবারুণ’ অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করতে হবে। বেলা দুইটায় অনুষ্ঠান। বেতারে জীবনের প্রথম অনুষ্ঠান, তা-ও আবার সরাসরি। অন্য রকম উত্তেজনা কাজ করছিল মনে। ভাবলাম, মাকে জানাই। কিন্তু চিঠি পৌঁছাতে তো এক সপ্তাহ লাগবে। অবশেষে আর্জেন্ট টেলিগ্রাম করলাম।

প্রিয় পাঠক, প্রথম আলোয় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে আপনাদের লেখা। আপনিও পাঠান। গল্প-কবিতা নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতা। আপনার নিজের জীবনের বা চোখে দেখা সত্যিকারের গল্প; আনন্দ বা সফলতায় ভরা কিংবা মানবিক, ইতিবাচক বা অভাবনীয় সব ঘটনা। শব্দসংখ্যা সর্বোচ্চ ৬০০। দেশে থাকুন কি বিদেশে; নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বরসহ পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায়: [email protected]

অনুষ্ঠানের দিন দুপুরবেলা টেলিগ্রাম পেয়ে মা পাড়ার নারীদের ডেকে এনে একসঙ্গে ছেলের অনুষ্ঠান শোনেন রেডিওতে। পরে চিঠিতে এ কথা জানিয়েছিলেন মা। ছুটিতে বাড়ি গেলে অনেকে দেখতে এসেছিল আমাকে। রেডিওতে আমার কথা শুনে তারা সবাই বিস্মিত।

এরপর রেডিওতে অনেক অনুষ্ঠান করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে কলেজে শিক্ষকতার চাকরি নেওয়ার পরও বাংলাদেশ বেতারে অনেক অনুষ্ঠান করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য ‘অন্বেষা’ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছি দীর্ঘদিন।

টাঙ্গাইলের কালিহাতী শাজাহান সিরাজ কলেজের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি এ বছরের জুলাই মাসে। এখন বৈষয়িক ব্যস্ততার ফাঁকে লেখালেখি করছি, বই পড়ছি। কিছু সাংগঠনিক কাজও আছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আজও মনে পড়ে, যেখানে সময় থেমে থাকত, কিন্তু আমরা ছুটতাম আনন্দ-হাসিতে। বড় মায়াময় ও মানবিক ছিল মানি অর্ডার ও চিঠির দিনগুলো।

সম্পর্কিত নিবন্ধ