ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে গতকাল মঙ্গলবারও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আজ বুধবার সকাল থেকেই আকাশ ঝকঝকে। সেই রোদ–ঝলমলে আবহে উৎসবের মেজাজে সকাল থেকেই শুরু হয়েছে দিল্লি বিধানসভার ভোট। সাম্প্রতিক কালে রাজধানী–রাজ্যের কোনো বিধানসভার ভোট এত আগ্রহ সঞ্চার করেনি।

আগ্রহ সত্ত্বেও দিল্লিতে ভোটদানের হার বরাবরই অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় কম। এবারও তার অন্যথা হয়নি। আজ সকাল ৭টায় ভোট শুরু হয়ছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৮ দশমিক ১ শতাংশ। সকাল সকাল ভোট দেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাহুল গান্ধী দুজনেই জনগণকে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

আগ্রহের একটা কারণ যদি হয়ে থাকে আম আদমি পার্টির (আপ) কবজা থেকে দিল্লিকে মুক্ত করতে বিজেপির ধনুর্ভঙ্গপণ, অন্য কারণ রাজ্য রাজনীতিতে নিজেদের প্রাসঙ্গিক রাখতে ‘ইন্ডিয়া’র শরিক আপের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের কোমর কষে নামা। এ দুই কারণে ভোটের চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে ত্রিমুখী। সেই চরিত্র দিল্লিতে দীর্ঘ ২৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিজেপিকে আশান্বিত করে তুলেছে। তাদের আশাবাদী হওয়ার কারণ, কংগ্রেসের ভোটব্যাংক লুট করেই আপের মাথাচাড়া দেওয়া। কংগ্রেসের বেশি ভোট পাওয়া মানে আপের ভোটে ভাগ বসানো।

ভোটের পাটিগণিতের হিসাবটা ওখানেই। কিন্তু সেখানেই রয়েছে আরও এক প্রশ্ন, কংগ্রেস কতটা ভোট টানতে পারবে এবং কত বেশি পেলে আপের সঙ্গে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের ফারাকটা কমে যায়। ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটের পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, আপের প্রাপ্ত ভোটের হার ৫৪ শতাংশের মতো। তুলনায় বিজেপির ভোট ৪০ শতাংশের নিচে। কংগ্রেস পেয়েছিল সাড়ে ৪ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস ১০ শতাংশ ভোট বাড়তি পেলে এবং বিজেপি ভোটের হার সামান্য বাড়াতে পারলে আপের সঙ্গে তারা একই কাতারে এসে যাবে। ফলে আপ ও বিজেপি দুই দলেরই নজর কংগ্রেসের প্রতি।

বিধানসভার এই চিত্র অবশ্য বদলে যায় লোকসভা ভোটের ক্ষেত্রে। সেই ভোটে বিজেপি সবাইকে ছাপিয়ে যায়। তাদের ভোট ৫৫–৫৬ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। এর অর্থ, ১০ বছর ধরে দিল্লির জনতা রাজ্য পরিচালনার ভার আপের হাতে রাখতে যেমন পছন্দ করছেন, তেমনই দেশের ভার তুলে দিতে চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদির ওপর। প্রশ্ন হলো, এবার কি সেই ঐতিহ্যই বহাল থাকবে, নাকি রাজ্যেও পালাবদল ঘটবে।

পালাবদলের জন্য বিজেপির সবচেয়ে ধারালো হাতিয়ার দুর্নীতি। আন্না হাজারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের ঢেউয়ে ভেসে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের উত্থান। অরাজনৈতিক আন্দোলনের শরিক হওয়া সত্ত্বেও কেজরিওয়াল গড়ে তোলেন তাঁর রাজনৈতিক দল আম আদমি পার্টি, ২০১২ সালে। এক বছর পর ২০১৩ সালের নির্বাচনে দাঁড়িয়ে দিল্লিতে আপ ২৮টি আসন দখল করেছিল। বিজেপি পেয়েছিল ৩১টি, কংগ্রেস ৮।

কংগ্রেসের সমর্থনে সরকার গড়ে মুখ্যমন্ত্রী হলেও ৪৯ দিনের বেশি কেজরিওয়াল সরকার চালাতে পারেননি। এক বছর রাষ্ট্রপতি শাসন জারি থাকার পর ২০১৫ সালের ভোটে আপ দখল করে ৬৭টি আসন, ৫ বছর পর ২০২০ সালে ৬২। বিজেপি পেয়েছিল যথাক্রমে ৩ ও ৮টি আসন। কংগ্রেস দুবারই শূন্য। সেই কেজরিওয়ালকে হারাতে বিজেপি এবার তাঁকেই দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে ময়দানে নেমেছে। একদিকে আবগারি (মদ) মামলা, অন্যদিকে ৪০ কোটি টাকা খরচ করে মুখ্যমন্ত্রীর আবাস নির্মাণ। এই জোড়া আক্রমণের মাঝে রয়েছে কেন্দ্র–মনোনীত উপরাজ্যপালের লাগাতার অসহযোগিতা। দিল্লিতে এমন প্রবল বিরোধিতার মোকাবিলা কেজরিওয়ালদের আগে করতে হয়নি।

শুধু রাজনৈতিক বিরোধিতাই নয়, দিল্লিতে কেজরিওয়াল যেসব কারণে জনপ্রিয়, উন্নয়নের যে মডেল তিনি তুলে ধরে ভোট ভিক্ষা করে আসছেন, বিজেপিও এবার সেই পথে হেঁটে জনমুখী প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছে। আপের দানখয়রাত নীতির কঠোর সমালোচনা করে এলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দানখয়রাতের দিকেই ঝুঁকেছেন। আপ নারীদের মাসে ২ হাজার ১০০ টাকা দেবে বলেছে, বিজেপি ও কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি ২ হাজার ৫০০ টাকা। আপ গ্রাহকদের মাসে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ফ্রি দিচ্ছে, বিজেপিও তা–ই দেবে বলেছে। কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি ৩০০ ইউনিট। আপ যেসব সুবিধা চালু করেছে, বিজেপি প্রতিটি জারি রাখার কথা বলেছে। খয়রাতের এই অর্থনীতি রাজ্যগুলোর দেনার বহর মাত্রাছাড়া করে তুললেও সেই রাজনীতির বাইরে বেরিয়ে রাজ্য হাতছাড়া করতে কেউ রাজি নয়। হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের দানখয়রাতের কারণে দিল্লির গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারপিছু সরকারের খরচ মাসে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার রুপি।

এবারের ভোটে নজরকাড়া কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অবশ্যই রয়েছে নয়াদিল্লি। এই কেন্দ্র থেকে বিনা বাধায় জিতে আসছেন কেজরিওয়াল। এবার তাঁর চ্যালেঞ্জার বিজেপির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত সাহেব সিং ভার্মার পুত্র প্রভেশ। কংগ্রেসও খাড়া করেছে দিল্লির তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত শীলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দীপকে। দক্ষিণ দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের লাগোয়া কালকাজি কেন্দ্রে আপের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী আতিশিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন বিজেপির সাবেক সংসদ সদস্য রমেশ বিধুরি ও নারী কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেত্রী অলকা লাম্বা।

বড় প্রশ্ন, আম আদমি পার্টি সরকার গড়ার মতো সংখ্যা অর্জন করলে মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন? আবগারি (মদ) মামলায় জামিনে মুক্তি পেলেও আদালতের নির্দেশ ছিল, কেজরিওয়াল সচিবালয়ে যেতে পারবেন না। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে কোনো ফাইলে সইও করতে পারবেন না। ফলে সরকার চালাতে আতিশিকে দায়িত্ব দিয়ে তিনি সরে এসেছিলেন। আপ জিতলে তাহলে মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন—সে প্রশ্ন ইতিমধ্যেই প্রবলভাবে আলোচিত। পদত্যাগ করার সময় কেজরিওয়াল বলেছিলেন, জনতার রায় নিয়ে নতুন করে ফিরে আসবেন। আপের প্রচারণাতেও কেজরিওয়ালই তাদের মুখ্যমন্ত্রী মুখ। কিন্তু আদালতের নতুন নির্দেশ ছাড়া পারবেন কি তিনি চতুর্থবারের মতো মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে?

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কালিয়াকৈরে বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ, ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। রবিবার (১৫ জুন) সকালে উপজেলার সাহেববাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, গত ১৪ জুন কালিয়াকৈর উপজেলা, পৌরসভাসহ জেলার আটটি ইউনিটের কমিটি বাতিল করে গাজীপুর জেলা বিএনপি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বৈঠক করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। পরে শনিবার (১৪) সন্ধ্যায় কালিয়াকৈর উপজেলা ও পৌরসভার কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে উপজেলার বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম সিকদার, সদস্য সচিব করা হয়েছে এম আনোয়ার হোসেনকে। কালিয়াকৈর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে মামুদ সরকার ও সদস্য সচিব করা হয়েছে মহসিন উজ্জামানকে। 

উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ গ্রুপ কমিটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন । আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে শনিবার (১৪ জুন) রাতেই বিক্ষোভ মিছিল করে নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকীর অনুসারীদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন পারভেজ গ্রুপের কর্মীরা।

একই দাবিতে রবিবার (১৫ জুন) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী পারভেজ আহমেদের পক্ষ নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এ সময়ে নতুন কমিটির পক্ষ থেকে আরেকটি মিছিল বের হলে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়। 

পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। খবর পেয়ে সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে এখনো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।

কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, সকাল থেকে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া হলেও এখনো পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। 
 

ঢাকা/রেজাউল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ