বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হাবিব আনিসুর রহমান আর নেই। বুধবার বেলা ১২টা ১০ মিনিটে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সহধর্মিণী কথাসাহিত্যিক নাসিমা আনিস সমকালকে জানান, হাবিব আনিসুর রহমান কিডনি রোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও রক্তে সংক্রমণজনিত রোগে ভুগছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। 

সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর রাজধানীর কাঁটাবন সেন্ট্রাল মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সহধর্মিনী, ছেলে-মেয়েসহ তিনি অসংখ্য পাঠক, শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন। 

পরিবার জানায়, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছেলে দেশে আসার পর নিজ গ্রাম মেহেরপুরের বল্লভপুরে হাবিব আনিসুর রহমানকে সমাধিস্থ করা হবে।

হাবিব আনিসুর রহমান ৬ জানুয়ারি ১৯৫৪ মেহেরপুরের বল্লভপুরে জন্মগ্রহণ করেন। সমসাময়িক বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি ব্যক্তির ইতিহাসভিত্তিক স্বতন্ত্র ধারা যোগ করতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করা হয়। 

নাসিমা আনিস জানান, হাবিব আনিসুর রহমান জীবনের সরল উপস্থাপনে বিশ্বাস করতেন। কলমে তুলে আনতে চেয়েছেন তাঁর শৈশব, যৌবন, নিজ শহর ও  গ্রামের মানুষের অব্যক্ত গল্পগুলো। ষোলটি গ্রন্থের লেখক হাবিব আনিসুর রহমানের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো: গল্পগ্রন্থ- গুলেনবারি সিনড্রোম ও অন্যান্য গল্প, অষ্টনাগ ষোলচিতি, পোড়ামাটির জিলাপি ও অন্যান্য গল্প;  উপন্যাস- পক্ষি ও সারমেয় সমাচার, পুষ্পরাজ সাহা লেন, আমাদের নতিপোতা গ্রামের ইতিহাস, নেফারতিতি, রৌদ্র ও ত্রাতাগণ। এছাড়া, বন্দিভূতের ফন্দি, ছোটকু মোটকু তাঁর কিশোর গল্পগ্রন্থ।    

যৌবনে দূরারোগ্য গুলেনবারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েছিলেন, এতে তাঁর স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে সুস্থ হলেও রোগের প্রভাব থেকে কখনও পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেননি। তিনি পায়ের পাতার একাধিক আঙুল জীবনের শেষাবধি নাড়াতে পারতেন না। ২০১০ সাল থেকে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘকাল ডায়লাইসিসের মাধ্যমে সুস্থ থাকার লড়াই করেছেন। এরই মাঝে নিরলস চালিয়ে গেছেন সাহিত্যচর্চা। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য মৃত্যুর মাত্র চারদিন আগে ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ সোনার বাংলা সাহিত্য পরিষদের পক্ষ থেকে এসবিএসপি সাহিত্য পুরস্কার ও সম্মাননা ২০২৪এ ভূষিত হন। তাঁর অন্যান্য পুরস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে জীবননগর সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা (২০১১), কাঙাল হরিনাথ মজুমদার পদক (২০১৫)। 

হাবিব আনিসুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর অর্জনের পর বিষয়ভিত্তিক গবেষণায় অংশ নেন এবং ১৯৭৯ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষকতায় যোগদানের পর দীর্ঘ দশ বছর চট্টগ্রাম কলেজে ইতিহাসের প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ও যশোর সরকারি এম এম কলেজে শিক্ষকতা করেন ও ২০০৫ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। পরে স্বেচ্ছাবসর গ্রহণ করে লেখায় মনোনিবেশ করেন। 
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

প্যারোলে মুক্তি পেয়ে স্ত্রীর জানাযায় মতি, কান্নাজড়িত কণ্ঠে চাইলেন ক্ষমা

কারাগারে থাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি ৩ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তার সহধর্মিণী রোকেয়া রহমানের জানাজায় অংশ নিয়েছেন।

শনিবার (১ নভেম্বর) বেলা সোয়া ২টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের আইলপাড়া এলাকার বালুর মাঠে জানায়া অনুষ্ঠিত হয়। কড়া পুলিশি পাহারায় মতিউর রহমান মতি জানাযার মাঠে উপস্থিত হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

স্ত্রী হারানো মতিকে দেখে তার আত্মীয়-স্বজনসহ উপস্থিত শত শত মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন। অঝোরে কাঁদতে থাকা মতিউর রহমান মতিও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

এসময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানাজায় উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেন, আমি দীর্ঘ ১০ মাস যাবত কারাগারে। আমার স্ত্রীর মৃত্যুর সময় আমি তার পাশে থাকতে পারিনি।

আমার দুর্ভাগ্য যে, এর আগে আমার বড় ভাই যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখনও আমি কারাগারে ছিলাম। আজকেও আমার অনুপস্থিতিতে আপনারা আমার ভাইয়ের মতো সবাই আমার স্ত্রীর জানাযার জন্য সকল কিছু করেছেন।

তিনি আরও বলেন, তার সঙ্গে আমি ৩২ বছরের সংসার জীবন কাটিয়েছি। সে সবসময় আমাকে আগলে রেখেছেন। আমার স্ত্রী যদি চলার পথে আপনাদের সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ কিংবা ভুল করে থাকে, আমি তার হয়ে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই।

আপনারা সবাই তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তার জন্য দোয়া করবেন। আমি তার জানাজায় অংশ নিতে পেরেছি, এটাই আমার জন্য অনেক।

পারিবারিক সূত্র জানায়, মতির সহধর্মিণী রোকেয়া রহমান দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।

সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোকেয়া রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বিকালে হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ এলাকায় নিয়ে আসা হলে শত শত নারী-পুরুষ বাড়িতে ছুটে আসে এক নজর তার মরদেহ এলাকার জন্য।

রোকেয়া রহমান এলাকারবাসীর কাছে সামাজিক ও মানবিক মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এলাকার অসহায় ও গরীব মানুষ বিয়ে, চিকিৎসা সহ কোনো সাহায্যের জন্য তার কাছে গিয়ে খালি হাতে ফেরেনি। তার মধ্যে কোন অহংকার ছিল না।

সাধারণভাবে সবার সাথে মিশতেন। জানাযার জন্য তার মরদেহ বাড়ি থেকে বের করার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শত শত নারী। অনেকে লাশবাহী গাড়ির পিছনে পিছনে ছুটে আসেন। এসময় এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠে।

এদিকে একাধিক মামলার আসামি হিসেবে মতিউর রহমান মতি কারাগারে থাকায়, স্ত্রীর জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে উকিলের মাধ্যমে আবেদন করা হয়। সকালে কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে ৩ ঘন্টার জন্য প্যারোলে মুক্তির কাগজ পত্র পৌছালে দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। 

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, মতিউর রহমান মতিকে কারা কর্তৃপক্ষ দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মোট ৩ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দিয়েছেন। জানাজা ও দাফন কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে তাকে নিরাপত্তায় আনা হয় এবং সময় শেষে তাকে পুনরায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্যারোলে মুক্তি পেয়ে স্ত্রীর জানাযায় মতি, কান্নাজড়িত কণ্ঠে চাইলেন ক্ষমা
  • ১৯ নং ওয়ার্ডে নার্গিস মাকসুদের ব্যাপক গনসংযোগ