দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ইত্যাদি ধারণের ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছিল ঐতিহ্য ও আর্থসামাজিক সম্ভাবনার জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে। গত মাসের শেষ দিন বিটিভিতে প্রচার হয়েছিল পর্বটি। ঠাকুরগাঁওয়ে ধারণকৃত সেই অনুষ্ঠানটি করতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল অনুষ্ঠানটির পরিচালক ও উপস্থাপক হানিফ সংকেতকে।শুটিংয়ের একপর্যায়ে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়েছিল দর্শক। থেমে যায় শুটিং। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় সে ঘটনার দৃশ্য। ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি লোক হওয়ার কারণে স্থানাভাবে অনেক দর্শকই আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনার ছাদ, রাস্তা, দেয়াল ও গাছে উঠে উপভোগ করেন শুটিং। একপর্যায়ে আবার শুরুহয় শুটিং।

এই পর্বটির পুনঃপ্রচার করা হবে আজ ৭ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার-রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর। মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছিল প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার রাজা টংকনাথের রাজবাড়ির সামনে। ইত্যাদির এই পর্বে দেখানো হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের সন্তান একসময়ের ঠাকুরগাঁওয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রাণপুরুষ, বর্তমানে রাজনীতিবিদ জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তার জীবনের অনেক অজানা কথা।


এবারের অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেছেন দুই প্রজন্মের দুই জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রবি চৌধুরী ও লিজা। গানটির কথা লিখেছেন লিটন অধিকারী রিন্টু। সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন কিশোর দাস। এছাড়াও অনুষ্ঠানের শুরুতেই রয়েছে ঠাকুরগাঁওকে নিয়ে মনিরুজ্জামান পলাশের কথায় একটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে নৃত্য। পরিবেশন করেছেন স্থানীয় শতাধিক নৃত্যশিল্পী। নাচটির কোরিওগ্রাফি করেছে রোহিত খান তুহিন, কণ্ঠ দিয়েছেন তানজিনা রুমা, রাজীব, অয়ন চাকলাদার ও সানজিদা রিমি। গানটির সুর করেছেন হানিফ সংকেত এবং সংগীত আয়োজন করেছেন মেহেদী।


ইত্যাদির এবারের পর্বে রয়েছে কয়েকটি হৃদয় ছোঁয়া প্রতিবেদন। রয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের উপর একটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আমগাছ, ঠাকুরগাঁওয়ের পনির বা চিজ উৎপাদন, লোকায়ন জীবন বৈচিত্র্য জাদুঘর এবং ধারণস্থান রাজা টংকনাথের রাজবাড়ির উপর রয়েছে একটি প্রতিবেদন। ঠাকুরগাঁওয়ের অরেঞ্জ ভ্যালির মাল্টা ও কমলা বাগানের উপর রয়েছে একটি চমৎকার প্রতিবেদন। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ক’জন প্রবীণ মিলে গড়ে তুলেছেন একটি ব্যতিক্রমধর্মী সংগঠন। এই সংগঠনের উপর রয়েছে একটি অনুকরণীয় প্রতিবেদন। ২০১৮ সালে যখন সুনামগঞ্জের টেকেরঘাটে ইত্যাদি ধারণ করা হয় তখন এখানে মোটর সাইকেল ছাড়া তেমন কোন বাহনই ছিলো না এবং ইত্যাদির আগে কোন টেলিভিশন ক্যামেরাও সেখানে যায়নি। ইত্যাদি ধারণের পর টেকেরঘাটের বর্তমান অবস্থা নিয়ে এবারের পর্বে ছিল একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। সাগরের বুকে ভাসমান দোকানের উপর রয়েছে একটি তথ্যভিত্তিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। রয়েছে কক্সবাজার জেলার টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের পল্লী চিকিৎসক ঝন্টু বড়ুয়ার উপর একটি মানবিক প্রতিবেদন। বিদেশি প্রতিবেদন পর্বে রয়েছে গণচীনের রাজধানী বেইজিং এ অব¯ি’ত বিশ্বের বৃহত্তম পাবলিক স্পট ঐতিহাসিক তিয়েনআনমেন স্কয়ারের উপর একটি তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন।
এছাড়াও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় ও প্রসঙ্গ নিয়ে সামাজিক অসঙ্গতি ও সমাজ সংস্কারের উপর রয়েছে বেশ কিছু তীক্ষè ও তীর্যক নাট্যাংশ। নিয়মিত পর্ব হিসেবে এবারও যথারীতি ছিল দর্শক পর্ব, চিঠিপত্র বিভাগ, তবে এবারের পর্বে ইত্যাদির নিয়মিত চরিত্র নাতি থাকলেও ছিল না তার সাথি নানি, ছিল কাশেম টিভির রিপোর্টার।
ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। পুনঃপ্রচার হবে কেয়া কসমেটিকস এর সৌজন্যে।পর্বটিপুনঃপ্রচার হবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ন হয় ছ ল র একট

এছাড়াও পড়ুন:

বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা

কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।

আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।

তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।

বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।

গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।

ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’

বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’

সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’

জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’

আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’

ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা