ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে অন্যত্র বিয়ে করায় প্রতারণার অভিযোগে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের সংস্থাপন শাখার এক নোটিসে এ তথ্য জানা গেছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে একই বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী বিয়ের প্রলোভনে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে জোরপূর্বক যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ করেন। নোবিপ্রবির যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটি অভিযোগের তদন্ত শেষে প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটির সুপারিশ এবং ‘উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা, ২০০৮’ অনুযায়ী বিভিন্ন আইনি পর্যায় চলমান থাকায় অভিযুক্ত শিক্ষক মোস্তাফিজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্রে ওই ছাত্রী লিখেছিলেন, “২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৪ মার্চ ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩ মাস তিনি আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক জড়ানোর জন্য আমাকে মানসিক অত্যাচার করেন। আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না চাইলে এবং সব জায়গা থেকে ব্লক দিলে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে কল দিয়ে বলতেন আমাকে পেলে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। পরে তিনি আমার মায়ের নম্বর জোগাড় করে ফোন দিয়ে বলেন, ‘পৃথিবীর সব সুখ আমি আপনার মেয়েকে দেব, কোনো স্বামী এই পৃথিবীতে দিতে পারবে কিনা আমি জানি না।’ তাও আমার মা না করে দেন।”

অভিযোগপত্রে আরো লিখেছিলেন, “এভাবে আমাকে ফাঁদে ফেলায় মানসিকভাবে আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং একটা পর্যায়ে ভাবতে থাকি আমার কারণে একটা মানুষ এত কষ্ট পাচ্ছে। ২০২৩ সালের ১১ মার্চ তিনি তার পিএইচডি ছেড়ে আমার কারণে দেশে চলে আসেন এবং বলেন, ‘আমার আশেপাশে থাকলেই তিনি ভালো থাকবেন। আমার একাডেমিক লাইফে ক্ষতির সম্ভাবনা, মোস্তাফিজুর রহমানের প্রতিনিয়ত কান্নাকাটি ও জোরাজোরি এবং নানা বিষয়ে ডিপ্রেশনে থাকায় আমি তার সঙ্গে সম্পর্কে যেতে রাজি হই। আমার সঙ্গে তার সম্পর্ক চলতে থাকে স্বাভাবিক নিয়মে।”

তিনি বলেন, “এর মধ্যে কয়েক দফা তিনি আমাকে একা একা বিয়ে করে ফেলার কথা বলেন। কিন্তু আমি বলেছি ফ্যামিলিকে জানাও, তারপর বিয়ে করবো। ২০২৪ সালের কুরবানির ঈদের সময় থেকে তিনি পরিবারে জানান এবং তার ভাষ্যমতে তার পরিবার রাজি হয় না। এরই মধ্যে আমি আমার পরিবারকে জানাই এবং সবাই সম্মতি প্রকাশ করে আমাদের বিয়ের জন্য। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবত তিনি আমাকে বুঝাতে থাকেন, পরিবার থেকে অন্যত্র তার জন্য পাত্রী দেখছেন, কিন্তু তিনি আমাকেই চান।”

তিনি আরো বলেন, “গত ৮ ও ৯ অক্টোবর আমার খালামনিকে মোস্তাফিজ জানান, ‘তিনি তার ফ্যামিলি ছেড়ে আমাকে বিয়ে করবেন। আমাকে আগামী ২/৩ বছর স্ত্রী বলে পরিচয় দিবেন না কোথাও এবং ছাত্রীকে বিয়ে করার কারণে যদি তার চাকরি যায়, আমাকে আয় করে তাকে খাওয়াতে হবে, আমার পরিবারকে তার দায়িত্ব নিতে হবে এবং তিনি এখন একাই বিয়ে করবেন। আমাকে কাজী অফিসে যেতে হবে। আমার পরিবারের কেউ যেতে পারবে না।’ আমার পরিবার আমার দিকে তাকিয়ে তার সব শর্তে রাজি হয়।”

ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, “পরবর্তীতে ১১ অক্টোবর শুক্রবার তিনি আমাকে বিয়ে করবেন বলে ঢাকা যেতে বলেন। আমি তার কথা বিশ্বাস করে ঢাকা যাই। কিন্তু তিনি নানা তালবাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে তার বাবা অসুস্থ বলে তড়িঘড়ি বাড়ি যাওয়ার কথা বলে আমার থেকে বিদায় নেয়। পরবর্তীতে জানতে পারি তার বাবা অসুস্থ হয়নি। বরং ১৩ অক্টোবর রবিবার চট্টগ্রামে তিনি অন্য একজনকে বিয়ে করেন, যার সঙ্গে তার ৩ মাস আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল।”

ভুক্তোভুগী শিক্ষার্থী অভিযোগ পত্রে আরও লিখেন, “তার বিয়ের সংবাদ পেয়ে আমি মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়ি। পরে ১৪ অক্টোবর আমি চট্টগ্রাম চলে যাই এবং তার স্ত্রীর নম্বর সংগ্রহ করে দেখা করি। পরদিন সকাল থেকে আমি মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং তার স্ত্রীকে কল দিয়ে ডিভোর্স দিতে বলি। কিন্তু তারা জানান, তারা কেউ কাউকে ছাড়বে না। দুপুর দিকে আমার শারীরিক অবস্থার খুবই অবনতি ঘটে এবং আমাকে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতাল ভর্তি করা হয়।”

নারী শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বছর ৩০ অক্টোবর অভিযুক্ত শিক্ষক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমানকে সব ধরনের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম স ত ফ জ র রহম ন য ন হয়র ন স স থ হয়

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিপির মনোনয়ন পেলেন জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রংপুর–১ আসনে (গঙ্গাচড়া ও সিটি করপোরেশনের একাংশ) মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় পার্টির সহযোগী ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি আল মামুন।

আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের প্রথম ধাপে ১২৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। এতে রংপুর–১ আসনের জন্য আল মামুনের নাম উল্লেখ করা হয়। তাঁর বাড়ি রংপুর সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বুড়িরহাট এলাকায়।

২ ডিসেম্বর আল মামুন এনসিপির রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক হন। এর আগে ২০১৯ সালে তিনি জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন। ২০২৩ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হন তিনি এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে রংপুর–১ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেন।

আল মামুন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তিনি ১৩ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করেন। এ সময় জাতীয় পার্টিকে সংসদ থেকে পদত্যাগের দাবিও জানিয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় পার্টি সেটি না করলে সংবাদ সম্মেলন ডেকে পদত্যাগ করেন। আন্দোলনের পুরো সময় তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। এ প্ল্যাটফর্মের বড় অংশ থেকে যেহেতু এনসিপি গঠিত হয়েছে, ফলে তাঁকে নিয়ে সমালোচনার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুনজাতীয় পার্টি থেকে ‘দোসরদের’ বের করার দাবি, ছাত্রসমাজের সভাপতি–সম্পাদকের পদত্যাগ১৬ অক্টোবর ২০২৪

আল মামুনের এনসিপির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব আরিফ আলী। তবে তিনি বলেন, গণ–অভ্যুত্থানে যাঁরা কারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান তাঁদের মূল্যায়ন করতে চেয়েছিলেন। এ কারণে ২৪–এর অভ্যুত্থানের পর জাতীয় ছাত্র সমাজের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করা হয়।

গঙ্গাচড়া উপজেলা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর–১ আসনটি গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭০ হাজার ১৩৪ জন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোকাররম হোসেন। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হয়েছেন রংপুর মহানগর কমিটির সহকারী সেক্রেটারি রায়হান সিরাজী। তাঁরা দুজন গণসংযোগ ও সভা–সমাবেশ করছেন।

এ ছাড়া গণ অধিকার পরিষদের হানিফুর রহমান (সজীব), ইসলামী আন্দোলনের গোলাম মোস্তফা, খেলাফত মজলিসের মমিনুর রহমান ও গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ফরিদুল ইসলাম নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে লন্ডনপ্রবাসী মঞ্জুম আলীর প্রার্থী হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।

আরও পড়ুনছাত্র সমাজের নেতৃত্বে মামুন আশরাফুল১৬ মার্চ ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনসিপির মনোনয়ন পেলেন জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি