কেশবপুরে বিএনপির কর্মীদের বিরুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের অভিযোগ
Published: 10th, February 2025 GMT
যশোরের কেশবপুরে ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচিত এক চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার রাতে মঙ্গলকোট ইউনিয়নের বুড়ুলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ওই ইউপি চেয়ারম্যানের নাম আবদুল কাদের। তিনি সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে মঙ্গলকোট ইউনিয়ন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সদস্য তিনি।
আবদুল কাদের অভিযোগ করে জানান, গতকাল রোববার রাত ১০টার পর হঠাৎ তাঁর বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তাঁকে বাইরে বেরিয়ে আসতে বলে একদল লোক। তিনি তখন বাড়ির দোতলায় অবস্থান করছিলেন। এরপর তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়ে জানালার কাচসহ বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করা হয়। পরে বাড়ির উঠানে থাকা দুটি ধানের গোলা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাড়িতে রাখা একটি নছিমন, শ্যালো মেশিন, সেচপাইপ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় বাড়িটির দোতলা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। পরে দুই ঘণ্টা ধরে ওই বাড়িতে তাণ্ডব চালানো হয়। ভয়ে এলাকার মানুষ বাড়িতে আসতে পারেননি। এ সময় আগুন নেভাতে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি এলে সেটিকে রাস্তা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনা কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে জানিয়ে ওই ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এ ঘটনায় তিনি ও তাঁর পরিবার আতঙ্কিত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি আপাতত বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আছেন। আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পারছেন না। তাঁর দাবি, স্থানীয় বিএনপির লোকজনই তাঁর বাড়িতে আগুন দিয়েছেন।
তবে অভিযোগটি অস্বীকার করে মঙ্গলকোট ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোস্তাক হোসেন বলেন, এ ঘটনায় কোনোভাবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। কেউ কেউ আবদুল কাদেরের বাড়িতে ইটপাটকেল মেরেছে, তবে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাটি সত্য নয়। ওই ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের সদস্যেরা মিলে নিজেরাই আগুন ধরিয়ে দিয়ে অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।
কেশবপুর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।