শ্রম আইনে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সম ও মর্যাদাপূর্ণ মজুরি, নারী শ্রমিকের স্বীকৃতি, ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি, যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতি-অভিযোগ সেল গঠন এবং ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার আইন প্রণয়নসহ ১১ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শ্রমজীবী নারী ও অধিকারকর্মীরা।

সোমবার বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘ক্ষুব্ধ নারী সমাজের’ উদ্যোগে এ মানববন্ধন হয়। এরপর তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মিছিল নিয়ে এসে কর্মসূচি শেষ করেন।

তাদের দাবির মধ্যে আরো রয়েছে, নারী-পুরুষের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা; অপ্রাতিষ্ঠানিক-প্রাতিষ্ঠানিক সব নারী-পুরুষ শ্রমিককে আইনে স্বীকৃতি নিশ্চিত করা; শ্রমজীবী-পেশাজীবী সব নারীর জন্য ৬ মাস সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং প্রসূতি সুবিধায় গণনায় প্রতিমাসে সর্বমোট প্রাপ্তিকে হিসাবে নিতে হবে।

কারখানা-কর্মস্থলে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা ও অভিযোগ সেলের যথাযথ বাস্তবায়ন; ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের শর্ত শিথিল করে মতপ্রকাশের অধিকার বাস্তবায়ন; কারখানায় এবং কর্মস্থলে কার্যকর ডে-কেয়ার সুবিধা ও কমিউনিটিতে স্বল্পমূল্য ও ভর্তুকিতে খাবারের ক্যান্টিন, লন্ড্রি ও কাপড় ধৌতাগার স্থাপন; কৃষি ও মৎস্যজীবী শ্রমিক হিসেবে নারীকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

গৃহ-শ্রমিকের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন; যৌনজীবীদের ওপর হয়রানি বন্ধ ও তাদের নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন নিশ্চিত করা; প্রবাসী নারী শ্রমিকের নিরাপত্তার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং শ্রম বাজারে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

মানববন্ধনে নারী মুক্তিকেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাতের পর গণঅভ্যুত্থানের সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তাদের কাজে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় বেশি প্রাধান্য পাওয়া উচিত। তবে আমরা সেটি দেখতে পাচ্ছি না। নারীর প্রতি বৈষম্য দেখতে পাচ্ছি। বিভিন্ন পর্যায়ে যোগ্য নারীরা থাকলেও আমরা তাদের নেতৃত্বে দেখছি না।

সাংস্কৃতিক কর্মী ও শিক্ষক লাইকা বশীর বলেন, এখনও নারী অধিকারের কথা বলতে হচ্ছে; এখনও বৈষম্যের জায়গা দেখিয়ে দিতে হচ্ছে—এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দায় শুধু নারীর নয়। যদি নারীদের মানুষ মনে করি, তাহলে এ দাবি মানা কঠিন কিছু নয়। আমাদের দাবিগুলো পূরণ করা হোক। 

ন্যাশনাল ওয়ার্কাস ইউনিটি সেন্টারের সুলতানা বেগম বলেন, অনেক বছর পরে নারী ও শ্রম কমিশন গঠিত হয়েছে। শ্রম আইন সংস্কারের কাজ চলছে। এটিকে কেন্দ্র করে আমরা দাঁড়িয়েছি যেন নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়।

তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে প্রাইভেট সেক্টরে এটি ১৬ সপ্তাহ। আমরা চাই সব ক্ষেত্রে ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হুমায়রা নূর বলেন, বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমানভাবে অবদান রাখছেন। আমরা দাবি জানাই, নারী পুরুষদের সমান সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। আইন থাকলেও সেখানে নানা ফাঁকফোকর রেখে নারীরা তাদের অধিকার পান না। ছয় মাসের ছুটি পান না। এরকম ফাঁকফোকর বন্ধ করতে হবে। তারা যেন মাতৃত্বকালীন ছুটি পায় এবং সসম্মানে কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারে।

নারী সংহতির শ্যামলী শীল বলেন, নারীদের গৃহিণী হিসেবে সম্বোধনের সুযোগ নেই। দেশের গার্মেন্টসের ৬০ শতাংশ নারী; তাদের কাঁধের ওপর ভর করে অর্থনীতি চলছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে তাদের পরিবেশ নেই, এটি ভীষণ অনিরাপদ। তাদেরকে প্রায়ই যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়। যৌনতাপূর্ণ গালাগালি করা হয়। এ জন্য কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন লাগবে। শ্রমিকদের জন্য মানসম্মত মজুরি নিশ্চিত করতে হবে।

নারীপক্ষের রওশন আরা বলেন, শুধু সরকারি বেসরকারি নয়; অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যারা কাজ করছে তাদেরকেও পর্যাপ্ত সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সবার ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা জরুরি।

শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য শ্রমিক নেতা তাসলিমা আক্তার বলেন, কমিশন হয়েছে। আমরা নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনের দাবি জানিয়েছি। আমরা আশাবাদী নতুন বাংলাদেশের যে স্বপ্ন, সেখানে প্রত্যেক নারী শ্রমিকের অধিকার, কথা বলার, সংগঠন করার, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার বাস্তবায়িত হবে। শ্রম আইনে সবার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত করত ছয় ম স র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির ২৮তম বার্ষিকী পালিত

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির ২৮তম বার্ষিকী মানববন্ধন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে। 
গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্রের সামনে পাহাড় রক্ষা পরিবেশ, উন্নয়ন সোসাইটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। 
মৌলভীবাজার জেলা পাহাড় রক্ষা পরিবেশ ও উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি ময়নুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রভাষক সেলিম আহমেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য দেন কমলগঞ্জ সরকারি গণমহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক হামিদা খাতুন, সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাক রাজা, নিছসা সভাপতি আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক রাসেল হাসান বক্ত, পরিবেশকর্মী সাজু আহমেদ, শাহারা ইসলাম রুহিন, শ্রমিক নেতা দুলাল মিয়া, ছাত্রনেতা লিটন গাজী, মিনহাজুল ইসলাম মুন্না, আব্দুল মতিন, মিসবাউর রহমান, আদিবাসী নেতা সুচিনগুল প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এখনও বাংলাদেশ সেই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারেনি। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয় হলেও দেশের স্বার্থরক্ষায় আন্দোলনকারীরা সরব রয়েছেন। ২৮ বছর পার হয়ে গেলেও দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের ক্ষতিপূরণ আদায়ে সচেতন হয়নি সরকার। বিষয়টি আমলে নেয়নি কোম্পানি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গৃহশ্রমিকদের সাপ্তাহিক ও মাতৃত্বকালীন ছুটি শ্রম আইনে রাখতে হবে
  • মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির ২৮তম বার্ষিকী পালিত
  • রূপগঞ্জে মামুন হত্যা : মাহবুবের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে মানববন্ধন
  • সাইক্লিস্ট হত্যার বিচার দাবিতে রাজধানীতে মানববন্ধন
  • ‘চট্টগ্রামে সাইক্লিস্ট ওসমানের মৃত্যু দুর্ঘটনা নয়, হত্যা’
  •  সোনারগাঁয়ে প্রাচীন স্থাপত্যকীর্তি কোম্পানিকা সেতু রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন
  • রাজশাহীতে বিএনপি নেতাকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল
  • সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি দুদিন পর দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে
  • কাছারিবাড়িতে হামলা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে, রবীন্দ্রস্মৃতিবিজড়িত  নিদর্শন নষ্ট হয়নি: সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়