শ্রম আইনে নারী পুরুষের সম-মজুরি নিশ্চিতের দাবি
Published: 10th, February 2025 GMT
শ্রম আইনে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সম ও মর্যাদাপূর্ণ মজুরি, নারী শ্রমিকের স্বীকৃতি, ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি, যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতি-অভিযোগ সেল গঠন এবং ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার আইন প্রণয়নসহ ১১ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শ্রমজীবী নারী ও অধিকারকর্মীরা।
সোমবার বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘ক্ষুব্ধ নারী সমাজের’ উদ্যোগে এ মানববন্ধন হয়। এরপর তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মিছিল নিয়ে এসে কর্মসূচি শেষ করেন।
তাদের দাবির মধ্যে আরো রয়েছে, নারী-পুরুষের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা; অপ্রাতিষ্ঠানিক-প্রাতিষ্ঠানিক সব নারী-পুরুষ শ্রমিককে আইনে স্বীকৃতি নিশ্চিত করা; শ্রমজীবী-পেশাজীবী সব নারীর জন্য ৬ মাস সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং প্রসূতি সুবিধায় গণনায় প্রতিমাসে সর্বমোট প্রাপ্তিকে হিসাবে নিতে হবে।
কারখানা-কর্মস্থলে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা ও অভিযোগ সেলের যথাযথ বাস্তবায়ন; ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের শর্ত শিথিল করে মতপ্রকাশের অধিকার বাস্তবায়ন; কারখানায় এবং কর্মস্থলে কার্যকর ডে-কেয়ার সুবিধা ও কমিউনিটিতে স্বল্পমূল্য ও ভর্তুকিতে খাবারের ক্যান্টিন, লন্ড্রি ও কাপড় ধৌতাগার স্থাপন; কৃষি ও মৎস্যজীবী শ্রমিক হিসেবে নারীকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
গৃহ-শ্রমিকের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন; যৌনজীবীদের ওপর হয়রানি বন্ধ ও তাদের নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন নিশ্চিত করা; প্রবাসী নারী শ্রমিকের নিরাপত্তার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং শ্রম বাজারে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধনে নারী মুক্তিকেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাতের পর গণঅভ্যুত্থানের সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তাদের কাজে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় বেশি প্রাধান্য পাওয়া উচিত। তবে আমরা সেটি দেখতে পাচ্ছি না। নারীর প্রতি বৈষম্য দেখতে পাচ্ছি। বিভিন্ন পর্যায়ে যোগ্য নারীরা থাকলেও আমরা তাদের নেতৃত্বে দেখছি না।
সাংস্কৃতিক কর্মী ও শিক্ষক লাইকা বশীর বলেন, এখনও নারী অধিকারের কথা বলতে হচ্ছে; এখনও বৈষম্যের জায়গা দেখিয়ে দিতে হচ্ছে—এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দায় শুধু নারীর নয়। যদি নারীদের মানুষ মনে করি, তাহলে এ দাবি মানা কঠিন কিছু নয়। আমাদের দাবিগুলো পূরণ করা হোক।
ন্যাশনাল ওয়ার্কাস ইউনিটি সেন্টারের সুলতানা বেগম বলেন, অনেক বছর পরে নারী ও শ্রম কমিশন গঠিত হয়েছে। শ্রম আইন সংস্কারের কাজ চলছে। এটিকে কেন্দ্র করে আমরা দাঁড়িয়েছি যেন নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়।
তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে প্রাইভেট সেক্টরে এটি ১৬ সপ্তাহ। আমরা চাই সব ক্ষেত্রে ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হুমায়রা নূর বলেন, বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমানভাবে অবদান রাখছেন। আমরা দাবি জানাই, নারী পুরুষদের সমান সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। আইন থাকলেও সেখানে নানা ফাঁকফোকর রেখে নারীরা তাদের অধিকার পান না। ছয় মাসের ছুটি পান না। এরকম ফাঁকফোকর বন্ধ করতে হবে। তারা যেন মাতৃত্বকালীন ছুটি পায় এবং সসম্মানে কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারে।
নারী সংহতির শ্যামলী শীল বলেন, নারীদের গৃহিণী হিসেবে সম্বোধনের সুযোগ নেই। দেশের গার্মেন্টসের ৬০ শতাংশ নারী; তাদের কাঁধের ওপর ভর করে অর্থনীতি চলছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে তাদের পরিবেশ নেই, এটি ভীষণ অনিরাপদ। তাদেরকে প্রায়ই যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়। যৌনতাপূর্ণ গালাগালি করা হয়। এ জন্য কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন লাগবে। শ্রমিকদের জন্য মানসম্মত মজুরি নিশ্চিত করতে হবে।
নারীপক্ষের রওশন আরা বলেন, শুধু সরকারি বেসরকারি নয়; অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যারা কাজ করছে তাদেরকেও পর্যাপ্ত সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সবার ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা জরুরি।
শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য শ্রমিক নেতা তাসলিমা আক্তার বলেন, কমিশন হয়েছে। আমরা নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনের দাবি জানিয়েছি। আমরা আশাবাদী নতুন বাংলাদেশের যে স্বপ্ন, সেখানে প্রত্যেক নারী শ্রমিকের অধিকার, কথা বলার, সংগঠন করার, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার বাস্তবায়িত হবে। শ্রম আইনে সবার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত করত ছয় ম স র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
১ কোটি শিশু শিক্ষার্থীর অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন, স্মারকলিপি
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিন্ডারগার্টেনর এক কোটি শিশু শিক্ষার্থীর অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে বন্দরে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের শিক্ষক-শিক্ষকারা।
সোমবার (২৮ জুলাই) সকাল ১১টায় বন্দর উপজেলা কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে বন্দর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবারে স্মারকলিপি দাখিল করা হয়।
মানববন্ধরে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের প্রধান এ এইচ এম শামীম আহমেদ, মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান, সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম রুবেল, শিক্ষক হাসান কবির, আনোয়ার হোসেন, আরিফ হোসেন, মাহবুব আলম, শামীমা আক্তার বর্ণা, রোকসানা আক্তার প্রমুখ।
বক্তরা বলেন, বাংলাদেশে ৬৫ হাজার ৭শ’ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। যা দেশেরন ৫০ শতাংশ শিক্ষার চাহিদা পূরণ করে থাকে। আর এ সকল স্কুলে প্রায় ১ কোটির অধিক শিশু শিক্ষার্থী লেখা পড়া করে। আর ৫ম শ্রেণীতে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। যারা ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সরকারি বৃত্তিতে অংশ নিয়েছে।
কিন্তু গত ১৭ জুলাই বর্তমান সরকার একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের বৃত্তিতে অংশ গ্রহণ বাতিল করে। যার কারণে ১ কোটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মুখে পতিত হয়েছে।
বক্তরা আরো বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে ১৭ অনুচ্ছেদে দেশের সকল শিশুদের সমান অধিকার দেয়া হয়েছে। বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিশুদের বুত্তিতে অংশগ্রহণ করতে না দেয় মানে সংবিধানের ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমরা এ প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। যাতে শিশুরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।