Prothomalo:
2025-06-16@11:10:49 GMT

প্রকৃত অপরাধীরা যেন ছাড় না পায়

Published: 11th, February 2025 GMT

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকারকে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছিল। বেশ কিছু স্থানে মব জাস্টিসে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছিল। পুলিশের অনুপস্থিতি ও নিষ্ক্রিয়তা ছিল এর বড় কারণ।

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাস পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ার কোনো অজুহাত থাকতে পারে না। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণের মতো অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় নাগরিকদের মধ্যে একটা নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। সবার প্রত্যাশা ছিল, সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা তথা নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তা যথেষ্ট নয় বলেই প্রতীয়মান হয়েছে।

সম্প্রতি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে যাঁরা অপরাধ, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং ছাত্র–জনতা হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তঁাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা সরকারের দায়িত্ব। আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা–কর্মীরা বর্তমানে নানা ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ন্যায্য কিন্তু ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ কোনো অবস্থাতেই ক্ষোভের জবাব নয়।

সার্বিক প্রেক্ষাপটে সরকার বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্ট’ শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, অভিযানটি যথাযথভাবে পরিচালিত হবে কি না। কেননা, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে গত ছয় মাসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।

অতীতে বিভিন্ন আমলে এ ধরনের অভিযান চালানো হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। অপরাধ দমনের নামে পরিচালিত এসব বিশেষ অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হেফাজতে নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের যথেচ্ছ ঘটনা আমরা দেখেছি। এবার যাতে তার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

আমরা আশা করি, যারাই সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে এবং হত্যা, ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজির মতো দুষ্কর্মে লিপ্ত হবে, রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিচয় যা–ই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। কোনো দলের নেতা-কর্মী অপরাধ করে যেন পার না পান। আবার কোনো দলের নেতা-কর্মী অপরাধ না করেও যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হন।

এ প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এককভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির কাজটি করতে পারে না। এতে সমাজের বিভিন্ন অংশীজনেরও সমর্থন থাকা প্রয়োজন। সেই সমর্থন তাঁরা তখনই দেবেন, যখন দেখবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পক্ষপাতহীনভাবে অভিযান পরিচালনা করছে এবং তাদের দ্বারা নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন না।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, আপনারা অপরাধীদের ধরুন, প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনুন। কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘন করবেন না। ‘ডেভিল’ ধরার নামে যদি নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষ হয়রানি-নির্যাতনের শিকার হন, তাহলে সরকারের এই অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত সরক র র পর চ ল অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
  • চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেল কক্ষে তল্লাশি, সমালোচনা 
  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচনের জন‌্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • গাজীপুরে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কারখানার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর, আটক ৪৩
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা