প্রকৃত অপরাধীরা যেন ছাড় না পায়
Published: 11th, February 2025 GMT
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকারকে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছিল। বেশ কিছু স্থানে মব জাস্টিসে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছিল। পুলিশের অনুপস্থিতি ও নিষ্ক্রিয়তা ছিল এর বড় কারণ।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাস পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ার কোনো অজুহাত থাকতে পারে না। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণের মতো অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় নাগরিকদের মধ্যে একটা নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। সবার প্রত্যাশা ছিল, সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা তথা নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তা যথেষ্ট নয় বলেই প্রতীয়মান হয়েছে।
সম্প্রতি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে যাঁরা অপরাধ, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং ছাত্র–জনতা হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তঁাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা সরকারের দায়িত্ব। আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা–কর্মীরা বর্তমানে নানা ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ন্যায্য কিন্তু ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ কোনো অবস্থাতেই ক্ষোভের জবাব নয়।
সার্বিক প্রেক্ষাপটে সরকার বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্ট’ শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, অভিযানটি যথাযথভাবে পরিচালিত হবে কি না। কেননা, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে গত ছয় মাসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।
অতীতে বিভিন্ন আমলে এ ধরনের অভিযান চালানো হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। অপরাধ দমনের নামে পরিচালিত এসব বিশেষ অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হেফাজতে নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের যথেচ্ছ ঘটনা আমরা দেখেছি। এবার যাতে তার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আমরা আশা করি, যারাই সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে এবং হত্যা, ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজির মতো দুষ্কর্মে লিপ্ত হবে, রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিচয় যা–ই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। কোনো দলের নেতা-কর্মী অপরাধ করে যেন পার না পান। আবার কোনো দলের নেতা-কর্মী অপরাধ না করেও যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হন।
এ প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এককভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির কাজটি করতে পারে না। এতে সমাজের বিভিন্ন অংশীজনেরও সমর্থন থাকা প্রয়োজন। সেই সমর্থন তাঁরা তখনই দেবেন, যখন দেখবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পক্ষপাতহীনভাবে অভিযান পরিচালনা করছে এবং তাদের দ্বারা নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, আপনারা অপরাধীদের ধরুন, প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনুন। কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘন করবেন না। ‘ডেভিল’ ধরার নামে যদি নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষ হয়রানি-নির্যাতনের শিকার হন, তাহলে সরকারের এই অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত সরক র র পর চ ল অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।
সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য।
সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।
এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।
এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।