জন সচেতনতা ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, ‘‘সড়ক দূর্ঘটনা রোধে সমাজের সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। জন সচেতনতা ছাড়া সড়ক দূর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়।’’

‘ছাত্র-জনতার অঙ্গীকার, নিরাপদ সড়ক হোক সবার’— প্রতিপাদ্য সামনে রেখে নিসচার সাতক্ষীরা জেলা শাখার আয়োজনে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে শহরের কামালনগরস্থ তুফান কনভেনশন সেন্টারে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নিসচার সাতক্ষীরা জেলা উপদেষ্টা ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আবুল কালাম বাবলার সভাপতিত্বে সূধী সমাবেশে ইলিয়াস কাঞ্চন এ কথা বলেন।

সমাবেশে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘‘আপনার এলাকায় যে সড়ক দূর্ঘটনা হচ্ছে, সেগুলো দূর করার জন্য আপনাদের কাজ করতে হবে। আমার জীবনে একটি মর্মান্তিক দূর্ঘটনা ঘটে। সেখানে আমার প্রিয়তমা স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনকে হারাই। এমন ঘটনা আপনার জীবনেও ঘটতে পারে। নিরাপদ সড়ক আমার ব্যক্তিগত আন্দোলন হলেও পরবর্তীতে এটি রাষ্ট্রীয় আন্দোলনে রূপ নেয়। বর্তমানে সরকারিভাবে নিরাপদ সড়ক চাই দিবসটি পালিত হচ্ছে। আমাদের উদ্দেশ্য সড়কে প্রাণহানি কমানো।’’

আরো পড়ুন:

কিশোরগঞ্জে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় স্কুলশিক্ষক নিহত

ফেনীতে সড়কে ঝরল ৩ যুবকের প্রাণ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘তাড়াহুড়া করে সড়কে চলার চেষ্টা করবেন না। একটি দূর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না হতে পারে। দূর্ঘটনার পর ভেঙে পড়তে পারে আপনার পরিবার। এখন মোটর সাইকেলে দূর্ঘটনার হার বেশি। প্রপারলি ট্রেনিং না নিলে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে দূর্ঘটনা বেশি হয়। তাই ড্রাইভিং এর জন্য ট্রেনিং নিতে হয়।’’

স্বাগত বক্তব্য রাখেন নিসচা জেলা সভাপতি মুহাম্মদ দিদারুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন নিসচা মহাসচিব এস এম আজাদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান লিটন এরশাদ, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহমত উল্লাহ পলাশ, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আমিনুর রহমান, জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম ফারুক প্রমুখ। 

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন অধ্যাপক নূর মোহাম্মাদ পাড় ও সাতক্ষীরা সাংবাদিক ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান লিটু।

ঢাকা/শাহীন/বকুল 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন সড়ক দ র ঘটন ন র পদ

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ