‘সরকাররে কন, মনারে যেন আঁর বুকে হিরাই আনি দেয়’
Published: 12th, February 2025 GMT
ঋণ করে তিন বছর আগে লিবিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা আবদুর রব (২৫)। এক বছরের মাথায় ছোট ভাইকেও তিনি নিয়ে যান সেই দেশে। মানুষের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ এখনো শেষ হয়নি। এরই মধ্যে লিবিয়ায় আবদুর রবকে অপহরণ করেছে মানব পাচার চক্র। তাঁকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে দাবি করা হচ্ছে মুক্তিপণ। শিগগিরই মুক্তিপণ আদায় না করলে হত্যার হুমকিও দিচ্ছেন অপহরণকারীরা।
গত ১৪ জানুয়ারি আবদুর রবকে অপহরণ করা হয়। এরপর ২৬ জানুয়ারি থেকে তাঁকে নির্যাতনের ভিডিও বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ ইমোতে পরিবারের সদস্যদের পাঠানো হচ্ছে। মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে ২৬ লাখ টাকা। লিবিয়ায় অপহরণ করলেও বাংলাদেশের পাঁচটি ব্যাংক হিসাবে মুক্তিপণ পরিশোধ করতে বলা হয়।
ছেলেকে নির্যাতনের ভিডিও দেখে কাঁদতে কাঁদতে শয্যাশায়ী আবদুর রবের মা তাজনেহার বেগম। সারাক্ষণই বিলাপ করছেন তিনি। বাবা ও দুই বোনের চোখেও কান্না। ছেলেকে উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর জেলা কার্যালয়ে আবেদন করেছেন বাবা আবদুর রহিম।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে কবিরহাট উপজেলার সুন্দলপুর ইউনিয়নের সুন্দলপুর গ্রামে আবদুর রবের বাড়িতে ঢুকতেই এক নারীর বিলাপ কানে আসে। সামনে এগিয়ে জানা গেল, বিলাপরত নারী আবদুর রবের মা তাজনেহার বেগম। ছেলেকে মনা নামে ডাকেন তিনি। বিলাপ করে তাজনেহার বলছিলেন, ‘ভাইরা গো, আন্নেরা সবাই আমার লাগি সাহায্য করেন গো। আমি নামাজ পড়ে দোয়া করুম। এই হাডারি টোলার মানুষ জানে, আমি আমার মনাকে কেমনে হাইলছি। আন্নেরা সরকাররে কন, মনারে যেন আঁর বুকে হিরাই আনি দেয়। আঁই আর মনারে ছাড়া বাঁইচতাম ন। আইজ এক মাস মনার কোনো খোঁজ নাই।’
মায়ের পাশে বসে কাঁদছিলেন আবদুর রবের বোন জান্নাতুল ফেরদাউস। ঘরের সামনে বসা আবদুর রহিমের চোখেও তখন পানি গড়িয়ে পড়ছিল। জানতে চাইলে আবদুর রবের বাবা আবদুর রহিম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ১০ লাখ টাকা খরচ করে বড় ছেলে আবদুর রবকে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখে লিবিয়া পাঠিয়েছেন। একইভাবে পরের বছর ছোট ছেলে আবদুর রহমানকে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। সেখানে একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে দুই ভাই চাকরি করতেন।
অপহৃত আবদুর রবের বাবা আবদুর রহিম.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শনি গ্রহের একাধিক চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইডের সন্ধান
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে শনি গ্রহের আটটি মাঝারি আকারের চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইড শনাক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা। বর্তমানে মিমাস, এনসেলাডাস, ডায়োন, টেথিস, রিয়া, হাইপেরিয়ন, লাপেটাস ও ফিবি নামের চাঁদগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পরিবর্তনের তথ্য টেলিস্কোপের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি চাঁদগুলোর ওপরে নিয়মিত নজরও রাখছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, ডায়োন ও রিয়া চাঁদে থাকা কার্বন ডাই–অক্সাইড শনির প্রধান বলয়ের বরফের অনুরূপ। ফিবি চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইড জৈব পদার্থের বিকিরণের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়ে থাকে। লাপেটাস ও হাইপেরিয়নের অন্ধকার অঞ্চলে কার্বন ডাই–অক্সাইড দেখা যায়। বরফযুক্ত এসব চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইডের অবস্থা সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা।
ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানী মাইকেল ব্রাউন ও তাঁর সহকর্মীরা এক গবেষণাপত্রে লিখেছেন, কঠিন কার্বন ডাই–অক্সাইড সৌরজগতের প্রান্তসীমার বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। যদিও সেই অবস্থানে কার্বন ডাই–অক্সাইড স্থিতিশীল নয়। আমরা শনির উপগ্রহে কার্বন ডাই–অক্সাইডের অবস্থান জানার মাধ্যমে ভিন্ন পরিবেশ বোঝার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন গ্রহে কার্বন ডাই–অক্সাইড কীভাবে আটকে আছে, তা জানার সুযোগ আছে এখানে।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, শনির চাঁদে আটকে থাকা কার্বন ডাই–অক্সাইড থেকে আদর্শ ল্যাবের মতো তথ্য পাওয়া যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, শনি গ্রহের বিভিন্ন চাঁদে কমপক্ষে দুটি পৃথক উৎস থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড তৈরি হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি