দেশের মধ্যে মূল্যস্ফীতি অনেকটা সময় ধরেই চলমান। এটা কমানো সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু আগের মতো এখনো যাত্রাবাড়ী-কারওয়ান বাজারসহ অন্য বাজারে চাঁদাবাজি হচ্ছে, কে তুলছে এসব চাঁদা? পরিবহনের চাঁদা বন্ধ হয়নি। পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) কনফারেন্স হলে জাগোনিউজ আয়োজিত ‘ভোক্তার কাঁধে বাড়তি করের বোঝা: উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন বিকেএমই সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘‘গণমাধ্যম থেকে শুনেছিলাম প্রতি রাতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেড় কোটি টাকা চাঁদা পেতেন। এখন তো পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু চাঁদাবাজির কি পরিবর্তন হয়েছে? এখনো যাত্রাবাড়ীসহ অন্য বাজারে চাঁদাবাজি হচ্ছে, কারা করছে, এটা বন্ধ করতে হবে। এটা বন্ধ না হলে মূল্যস্ফীতি কমবে না, কারণ পণ্যের দাম বাড়তি থাকবে।’’

পরিবহনের চাঁদাবাজিও বন্ধ হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রপ্তানিমুখী শিল্পের পণ্যের গাড়ি শরীফ মেলামাইন কাঁচপুর ব্রিজ নারায়ণগঞ্জের কয়েকটির পয়েন্টে আটকানো হয়। সেখানে হয়রানি করা হচ্ছে রপ্তানিকারকদের। এ পয়েন্টগুলোয় গাড়ি আটকে এলসির কপি, ইউডির কপি চাওয়া হচ্ছে অথচ সেগুলো সব সময় নিয়ে যাওয়া কি সম্ভব। এরপরই জরিমানা করা হচ্ছে, যার কোনো কারণ নেই। এভাবে অন্যায়ভাবে হয়রানি বন্ধ করা হোক। এ কারণে শিপমেন্ট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অনেক ব্যবসায়ী সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানালেন আমি কথা বলি, সমাধানও হয়। সেটা কয়জনের সমাধান হবে, গতকালও ৩৯টি কোম্পানির গাড়ি আটকানো হয়েছিল হয়তো পাঁচ-ছয়জনেরটা ছাড়ানো সম্ভব হয়েছে। এই হয়রানি বন্ধ করা হোক।’’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য জিরো ভ্যাট বলা হলেও নানান অজুহাতে ভ্যাট বসানো হয়। হঠাৎ এক ব্যবসায়ীর ১১ কোটি টাকার ভ্যাট রেডি করছে কোনো সই ছাড়াই। পরে সেটার নেগুসিয়েশনের জন্য বলা হয়, পরে হয়তো সেটা দু-তিন কোটিতে দাঁড়ায়। রপ্তানির স্বার্থে, দেশের ভ্যাটের নামে হয়রানি চান না ব্যবসায়ীরা।’’

জাগোনিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম জিয়াউল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ এবং সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড.

এম মাসরুর রিয়াজ, অর্থনীতিবিদ ড. এম এম আকাশ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী, রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য রেজাউল হাসান, বিকেএমই সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ, ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, এসিআই ফুডসের চিফ বিজনেস অফিসার ফারিয়া ইয়াসমিন, এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন নাসির, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ও রাজীব চৌধুরী, বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া, বাপা সভাপতি এমএ হাশেম, ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা, সাবেক ব্যাংকার সাইফুল হোসেন ও সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন।

ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হয়র ন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

নভেম্বরে বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির

বাড়ির সামনে ১৫ শতক জমিতে সবজি আবাদ করেছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বয়রা গ্রামের কৃষক শাম্মত আলী (৬০)। পালংশাক, মুলা, ডাঁটা ও মরিচের বীজ বুনেছেন তিনি। মরিচের বীজ বোনার দুই দিন পর বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে বীজ পচে গেছে। নভেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে তিনি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

ইতিমধ্যে ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান কাটতে শুরু করেন কৃষকেরা। এ ছাড়া শীত মৌসুমকে সামনে রেখে কৃষকেরা সবজি চাষ শুরু করেছেন। ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলগুলোতে বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হয়। তবে নভেম্বরের শুরুতে টানা বৃষ্টি এসব ফসলের ওপর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর প্রভাব বাজারেও পড়তে পারে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার ১৩টি ‍উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবার শর্ষে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে শর্ষে আবাদ করা যাচ্ছে না। ২১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে বাঁধাকপি, ফুলকপি, করলা, চিচিঙ্গা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়ার কিছুটা সমস্যা হতে পারে। বৃষ্টি দীর্ঘায়িত হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।

নভেম্বরের বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. পারভেজ আনোয়ার বলেন, নিম্নচাপের কারণে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। নভেম্বরে এমন বৃষ্টি অপ্রত্যাশিত। ইতিমধ্যে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকেরা ধান শুকাতে সমস্যায় পড়বেন। যাঁরা কাটতে পারেননি, তাঁদের জমিতে পানি ওঠায় ধানের অপচয় বেশি হবে। রবি ফসলের ক্ষেত্রে ভুট্টা, ডাল-জাতীয় শস্য ও শর্ষে লাগানো দেরি হয়ে যাবে। ফসল লাগাতে দেরি হলে পরে বোরো ফসল লাগাতেও দেরি হয়ে যাবে।

অধ্যাপক পারভেজ আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, শীতকালীন সবজি যাঁরা দেরিতে লাগাচ্ছেন, তাঁদের চারা নষ্ট হয়ে যাবে। আগাম যাঁরা আবাদ করেছেন, অতিবৃষ্টির কারণে পচে যাবে এবং রোগবালাই ও পোকার আক্রমণও বাড়বে। সব মিলিয়ে ধান, রবি শস্য ও শীতকালীন সবজি—সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে অসময়ের বৃষ্টির কারণে।

কৃষক শাম্মত আলী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মরিচ বুনছিলাম। বৃষ্টিতে সব পইচ্চা গেছে। আমার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সব গাইব হয়ে গেছে। আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না, যে বৃষ্টি হইছে। এমন বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছিন না। এমন সময়ে ছিডাছাডা বৃষ্টি হইলেও এমন বৃষ্টি আর কখনো হয় নাই।’

গতকাল শনিবার রাত আড়াইটা থেকে রোববার সকাল ৬টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলায় ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ময়মনসিংহ আবহাওয়া কার্যালয়ের উচ্চ পর্যবেক্ষক মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৪টা ২৫ মিনিট থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

ময়মনসিংহ শহরের দীঘারকান্দা এলাকার লাল মিয়া বলেন, ‘২ কাডা জমিতে শাকসবজি করছিলাম। বৃষ্টিতে সব ক্ষতি হইয়া গেছে। এমন টাইমে তো বৃষ্টি হয় না।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বর মাসের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় সবজি লাগানো কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। শর্ষে আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, বৃষ্টির কারণে লাগাতে দেরি হলে অর্জন কিছুটা কম হবে। এখন শর্ষে আবাদের ভালো সময়। এ সময় শর্ষের বীজ বুনতে না পারলে আবাদ কমে যাবে। বৃষ্টি কয়েক দিনের মধ্যে থেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ