বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কফিনমিছিল কর্মসূচি
Published: 12th, February 2025 GMT
গাজীপুরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ভাঙচুরের সময় হামলায় আহত আবুল কাশেমের (২০) মৃত্যুর ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কফিনমিছিল কর্মসূচি দিয়েছেন। আজ বুধবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ওই ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর আগে আজ বেলা তিনটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল কাশেমের মৃত্যু হয়। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.
নিহত শিক্ষার্থী আবুল কাশেম গাজীপুর মহানগরের দক্ষিণ কলমেশ্বর এলাকার হাজি জামালের ছেলে।
আরও পড়ুনগাজীপুরে সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেলের বাড়িতে হামলায় আহত একজনের মৃত্যু১ ঘণ্টা আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওই ঘোষণায় জানানো হয়, ‘গাজীপুরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে শহীদ বীর কাশেমের জানাজা আজ রাত ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজার পর আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে কফিনমিছিল হবে শহীদ মিনার থেকেই। একই সঙ্গে সারা দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে, গ্রামে শহীদ বীর কাশেমের গায়েবানা জানাজা এবং আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে কফিনমিছিল হবে।’
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর মহানগরের ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হকের বাড়িতে গত শুক্রবার রাতে দুষ্কৃতকারীরা হামলা ও ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে গাজীপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা হামলাকারীদের প্রতিহত করতে যান। এ সময় তাঁদের ওপর হামলা হয়। এতে ১৭ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে আহত আবুল কাশেমকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেখানে আজ বেলা তিনটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
হামলার ঘটনায় গত রোববার দুপুরে একটি মামলা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক মো. আবদুল্লাহ মোহিত। মামলায় ২৩৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। প্রধান আসামি করা হয় আমজাদ মোল্লা নামের একজনকে। এলাকায় তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত। এ মামলায় সর্বশেষ ১৩২ জনকে গ্রেপ্তার করার তথ্য পাওয়া গেছে।
গাজীপুর মহানগরের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থী আবুল কাশেমের মৃত্যুর ঘটনায় আগের মামলার সঙ্গে নতুন করে এটি হত্যা মামলা সংযুক্ত করা হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।