রংপুরের পীরগঞ্জে মদনখালী ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠনে কৃষক লীগের নেতা শাহজাহান আলীকে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মী। এ ছাড়া একই উপজেলার চৈত্রকোল ইউপিতেও তপশিল ঘোষণার পরও পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল বুধবার দুপুরে রংপুরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন চৈত্রকোল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি সদস্য মমিনুর রহমান এবং মদনখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি মদনখালী ইউপিতে নির্বাচনের জন্য তপশিল ঘোষণা করে উপজেলা কমিটি। ৯ ফেব্রুয়ারি কাদিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এর আগেই পকেট কমিটি করে ওয়ার্ডের সভাপতি-সম্পাদকসহ স্থানীয় সবার রেজুলেশনে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পরে নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় কৃষক লীগ নেতা শাহজাহান আলীকে সাধারণ সম্পাদক ও রফিকুল ইসলাম সাজুকে সভাপতি করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। 

মমিনুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে রাজনীতি করার সময়ে হামলা-মামলাসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন তিনি। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপির রাজনীতি করার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কিছুই করতে পারেননি। কিন্তু ইউনিয়ন বিএনপির নির্বাচনে প্রার্থী হতে তপশিল অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও নির্বাচনের দিন তারা নিজ স্বার্থে পকেট কমিটি গঠন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে পদবঞ্চিত দু’জন নেতা অনিয়মতান্ত্রিক এবং ভোটাধিকার হরণ করে চৈত্রকোল ও মদনখালী ইউনিয়নে কমিটি গঠনের তীব্র নিন্দা জানান। পাশাপাশি বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অনৈতিকভাবে গঠিত কমিটি বাতিলসহ গণতান্ত্রিকভাবে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবি করেন তারা। 

এ বিষয়ে পীরগঞ্জ বিএনপির সদস্য সচিব জাকির হোসেন বলেন, শাহজাহান আলী দীর্ঘদিন আগে কৃষক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তা ঠিক। সঠিক কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সভাপতি-সম্পাদকসহ অন্য পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। পদ না পেলে এমন অভিযোগ আসাটাই স্বাভাবিক।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামের  মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন ব এনপ র ল ইসল ম গঠন র

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ