বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আজ। যদিও অনেকেই বলেন ভালোবাসার জন্য বিশেষ কোনো দিন লাগে না। প্রতিদিনই হোক ভালোবাসার দিন। তবুও ভালোবাসার জন্য একটি দিনকে একটু বিশেষভাবে উদযাপন করা মন্দ তো নয়! ভালোবাসার এমন দিনে প্রিয়জনের হাত ধরে কিংবা একা এক কাপ কফি হাতে নিজেই বসে যেতে পারেন ভালোবাসার সিনেমাগুলো দেখতে। ভালোবাসা ও সম্পর্কের নানা নাটকীয়তা নিয়ে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঢালিউডেও নির্মিত হয়েছে অসংখ্য ভালোবাসার সিনেমা। ভালোবাসার তেমন ১০টি ব্যবসা সফল সিনেমা আজকের এই আয়োজন।

সুজন সখি : গ্রামের যুবক-যুবতীর সাদামাটা এক প্রেমের কাহিনী নিয়ে নির্মিত ছবি ‘সুজন সখী’। কিন্তু মিষ্টি প্রেমের কিছু রোমান্টিক সংলাপ ও গান দিয়ে এটি হয়ে উঠেছিলো দর্শকের কাছে ভালোবাসার প্রিয় ছবি। সফল জুটি ফারুক-কবরীর এই ছবিটি সেরা রোমান্টিক সিনেমার তালিকাতে ঠাঁই করে নেয়। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবির কাহিনী, সংগীত, প্রযোজনা করেছেন খান আতাউর রহমান। পরবর্তীতে এই ছবিটি রিমেক করা হয়। সেখানে ফারুকের সুজন চরিত্রে অভিনয় করেন সালমান শাহ ও কবরীর সখী চরিত্রে দেখা যায় শাবনূরকে। এই ছবিটিও তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।

অবুঝ মন : ‘শুধু গান গেয়েই পরিচয়’ জনপ্রিয় এই গানটি কাজী জহিরের ‘অবুঝ মন’ সিনেমার। ১৯৭২ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটির এই গান তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধের পর ‘অবুঝ মন’ ছবিটিকেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র হিসেবে ধরা হয়।

ঘুড্ডি : ‘চলো না ঘুরে আসি অজানাতে/ যেখানে নদী এসে মিশে গেছে’- এই গান কার না মন ছুঁয়ে গেছে! প্রেমে-তারুণ্যের উচ্ছ্বাস মাখা দুর্দান্ত এই গানটি ১৯৮০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ঘুড্ডি’ সিনেমার। ছবিটি বাংলা সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম এক প্রেমের ছবি হিসেবে সমাদৃত। প্রথা ভাঙা প্রেমের গল্পে ভিন্ন চোখের এক নির্মাণ এই ‘ঘুড্ডি’। সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী নির্মিত এই চলচ্চিত্রে জুটি হয়ে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ ও সুবর্ণা মুস্তাফা। দর্শকপ্রিয়তার পাশাপাশি ছবিটি একাধিক শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেছিল।

দেবদাস : অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর প্রেমের উপন্যাস ‘দেবদাস’। বাংলা, উর্দু, হিন্দিসহ নানা ভাষায় বাঙালি প্রেমের অমর আখ্যান ‘দেবদাস’ নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। তবে বাংলাদেশে ১৯৮২ সালে মুক্তি পায় চাষী নজরুল ইসলাম নির্মিত ‘দেবদাস’। প্রেম আর রোমান্টিকতায় ভরপুর এই উপন্যাসে পার্বতী নামের এক তরুণীর সাথে দেবদাস নামের এক যুবকের প্রেম ও বিচ্ছেদের করুণ গল্প ফুটে উঠেছে। ‘দেবদাস’ ছবিতে নাম ভূমিকায় হাজির হয়েছেন মহানায়ক বুলবুল আহমেদ। তার সাথে পার্বতী চরিত্রে আছেন মিষ্টি মেয়ে কবরী, আর চন্দ্রমুখী হয়েছিলেন আনোয়ারা।

ভেজা চোখ : ইলিয়াস কাঞ্চন ও চম্পা অভিনীত রোমান্টিক সিনেমা হিসেবে উল্লেখযোগ্য ‘ভেজা চোখ’। অসুস্থ প্রেমিকের প্রতি প্রেমিকার ভালোবাসা, কাছে আসার তীব্র আকাঙ্ক্ষার গল্প এই ছবি। ছবিটি নির্মাণ করেছিলেন শিবলী সাদিক। ১৯৮৮ সালে মুক্তি পায় সিনেমাটি।

কেয়ামত থেকে কেয়ামত : ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। বলিউডের ছবির কপিসত্ত্ব এনে ছবিটি নির্মান করেছিলেন সোহানুর রহমান সোহান। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবি দিয়ে তিনি উপহার দিয়েছেন সালমান শাহ ও মৌসুমীকে। সেই সঙ্গে এই ছবিতে গান গেয়েই জনপ্রিয়তা পান কণ্ঠশিল্পী আগুন। তবে ছবিটি আজও দর্শকের মনে দোলা দিয়ে যায় এর রোমান্টিক গল্পের কারণেই।

তোমাকে চাই : ১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় ‘তোমাকে চাই’ ছবিটি। মতিন রহমান পরিচালিত এই ছবিতে সালমান-শাবনূরের অভিনয় মুগ্ধ করেছিলো চলচ্চিত্রপ্রেমীদের। তবে ছবিতে প্রয়াত কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর কথা ও সুরে ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ শিরোনামের বিখ্যাত গানটি। এন্ড্রু কিশোর ও কনক চাপার কণ্ঠে গানটির নতুন সংগীতায়োজন করেছিলেন কিংবদন্তি গীতিকবি ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।

প্রাণের চেয়ে প্রিয় : ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ ছবির ‘পড়ে না চোখের পলক’ গানটি দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই ছবি দিয়েই রোমান্টিক নায়ক হিসেবে আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা নিয়ে পথচলা শুরু করেন চিত্রনায়ক রিয়াজ। মোহাম্মদ হান্নান পরিচালিত ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ ছবিতে রিয়াজের নায়িকা ছিলেন মুম্বাইয়ের অভিনেত্রী রাভিনা।

হঠাৎ বৃষ্টি : অচেনা দুই যুবক যুবতীর প্রেমের ছবি ‘হঠাৎ বৃষ্টি’। প্রথমে টিভিতেই মুক্তি দেয়া হয়েছিলো। ছবিটি এতোটাই আবেদন তৈরি করেছিলো যে দেখা ছবি আবার দেখার জন্য সিনেমা হলে লাইন পড়ে যায়। এই ছবি দিয়ে রাজকীয় অভিষেক ঘটে চিত্রনায়ক ফেরদৌসের। তার সঙ্গে ছিলেন ভারতের অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা ত্রিবেদী। তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া এই ছবিটি একাধিক শাখায় জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিল। বাসু চ্যাটার্জি  পরিচালিত ছবিটি ১৯৯৮ সালে মুক্তি পায়।

মনপুরা : বিংশ শতাব্দীতে সেরা রোমান্টিক চলচ্চিত্র হিসেবে এগিয়ে থাকবে ‘মনপুরা’ চলচ্চিত্রটি। সোনাই ও পরী নামে হতভাগ্য এক প্রেম যুগলের গল্প এই ছবি। দুজনের প্রেমমাখা সংলাপ, মিষ্টি গান, প্রেমের করুণ পরিণতি ছুঁয়ে গেছে দর্শকের মন। ‘মনপুরা’ নির্মাণ করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম। ব্যবসা সফল এই ছবির নায়ক চঞ্চল চৌধুরী, তার সঙ্গে ছিলেন ফারহানা মিলি। ২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া রোমান্টিক এই ছবিটি জাতীয় পুরস্কারে সেরা চলচ্চিত্রসহ একাধিক শাখায় পুরস্কার জিতে নেয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র জনপ র য় এই গ ন কর ছ ল পর চ ল ক য় মত

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ