দক্ষিণ আমেরিকা অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপার স্বপ্ন নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। জিতলেই শিরোপা, এমন সমীকরণে ফেভারিট ছিল আর্জেন্টিনাই। কারণ গ্রুপপর্বে ব্রাজিলকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করে লিওনেল মেসির উত্তরসূরিরা। অন্যদিকে, শিরোপার দৌড়ে টিকে থাকতে মরিয়া ছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো দলই জয় ছিনিয়ে নিতে পারেনি। রোমাঞ্চকর লড়াই শেষে ম্যাচটি ১-১ গোলের ড্রয়ে শেষ হয়েছে। ফলে শিরোপার ভাগ্য নির্ধারণ হবে শেষ ম্যাচে।

বিরতির আগে ৪০ মিনিটে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি থেকে গোলটি করেন ক্লাদিও এচেভেরি। গ্রুপে ৬-০ ব্যবধানে জেতা ম্যাচটিতেও জোড়া গোল করেছিলেন এচেভেরি। টুর্নামেন্টে তার গোল এখন ৫টি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ায় ব্রাজিল। ৭৮ মিনিটে রায়ানের গোলে সমতায় ফেরে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এই গোলের পর আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠে ব্রাজিল। এ সময় আর্জেন্টিনার ওপর আধিপত্য বিস্তার করেও খেলেছে তারা। তবে একাধিকবার কাছাকাছি গিয়েও শেষ পর্যন্ত পাওয়া হয়নি কাঙ্ক্ষিত গোলটি। পয়েন্ট ভাগাভাগি করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।

এই ড্রয়ের ফলে চার ম্যাচে ১০ পয়েন্ট করে নিয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে ব্রাজিল, আর সমান পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে আর্জেন্টিনা। শিরোপার নিষ্পত্তি হবে আগামী রোববার। সেদিন ব্রাজিল মুখোমুখি হবে চিলির, আর আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ প্যারাগুয়ে।  

১২ বারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ও ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা—দুই দলই শিরোপার জন্য শেষ ম্যাচ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন আর জ ন ট ন

এছাড়াও পড়ুন:

ঠাকুরগাঁওয়ে ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব অনুষ্ঠিত

সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হলো ওরাঁও সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘কারাম পূজা’। নাচ-গান, ঢাক-ঢোরের বাদ্য আর বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উৎসব ঘিরে মুখরিত হয়ে ওঠে সদর উপজেলার সালন্দর পাঁচপীরডাঙ্গা গ্রাম।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে দেখা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের জেলা শাখার আয়োজনে পালিত হয় এই উৎসব। প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে আদিকাল থেকেই ওরাঁওরা উপবাস থেকে শুরু করে কারাম বৃক্ষের ডাল পুঁতে পূজা-অর্চনা করে আসছেন। পূজা শেষে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোররা ঢাক-ঢোলের তালে নেচে-গেয়ে মেতে ওঠেন উৎসবের আনন্দে।

আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, ভাদ্র মাসের শেষ দিন ও আশ্বিনের প্রথম দিনে পালিত কারাম পূজা বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি, ভালো ফসল উৎপাদন ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে।

ভাদ্র মাসের শেষ রাত ও আশ্বিনের শুরুতে কারাম উৎসব উদযাপনের জন্য ওরাঁও নর-নারী সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রথম দিন উপোস থাকেন। উপোসের মধ্য দিয়েই পূজা শুরু করেন ওরাঁও নারীরা।

পরদিন সন্ধ্যায় মাদল, ঢোল, করতাল ও ঝুমকির বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে এলাকা থেকে কারামগাছের (খিল কদম) ডাল সংগ্রহ করেন তারা। পরে একটি পূজার বেদি নির্মাণ করে সূর্য পশ্চিমে হেলে গেলে সেই কারামগাছের ডালটি বেদিতে রোপণ করা হয়। এরপর ঢাক-ঢোলের তালে হাত-পা দুলিয়ে নেচে-গেয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন আদিবাসীরা। নাচ, গান আর গল্প বলার মধ্য দিয়ে জমে ওঠে উৎসবের আসর।

রঙিন পোশাকে সারিবদ্ধ হয়ে নৃত্য পরিবেশন করেন নারী-পুরুষ। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের পদচারণায় কারাম উৎসব রূপ নেয় মিলনমেলায়। শুধু ওরাঁওরা নন, হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষও যোগ দেন এই উৎসবে।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কষাধ্যক্ষ বনি কেরকেটা বলেন, “বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি, ভালো ফসল আর সুখ-সমৃদ্ধির আশায় আমরা প্রতিবছর এই পূজা পালন করি।”

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন চৌধুরী বলেন, “কারাম উৎসব ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের অন্যতম উদাহরণ। সরকারি সহযোগিতা পেলে এটি আরো বড় আয়োজনে পালিত হতে পারে।”

উৎসব উপভোগ করতে স্থানীয়দের পাশাপাশি অন্য জেলা থেকেও ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। ঢাক-ঢোলের শব্দ আর নাচ-গানে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা জানান, প্রতিবছরই এই আয়োজনে আসতে তাদের ভালো লাগে।

তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের শুরু হয় ১৬ সেপ্টেম্বর। পূজা-অর্চনা শেষে ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে কারাম বৃক্ষের ডাল নদীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়েই সমাপ্ত হবে এবারের কারাম পূজা।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, “ওরাঁও সম্প্রদায়ের এই সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে টিকে থাকুক, এজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।”

শুধু ধর্মীয় আচার নয়, কারাম উৎসব হয়ে উঠেছে সুখ-শান্তি কামনার পাশাপাশি সম্প্রীতি আর সহাবস্থানের প্রতীক। এই ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মকে যেমন তাদের শিকড়ের সঙ্গে পরিচয় করায়, তেমনি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মেলবন্ধন ঘটায়।

এসময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মো. খাইরুল ইসলাম। এছাড়াও সালন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলে ইলাহি মুকুট চৌধুরী, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন চৌধুরী, ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি গোলাম মাওলা চৌধুরীসহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/হিমেল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ