বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলনে প্রাধান্য পাচ্ছে যে বিষয়গুলো
Published: 15th, February 2025 GMT
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। এরইমধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলন। সেখানে সীমান্ত হত্যা, বেড়া নির্মাণের বিষয়গুলোতে গুরত্ব দেওয়া হবে।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের এ বৈঠক শুরু হবে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার, যা শেষ হবে ২০ ফেব্রুয়ারি।
শুক্রবার ভারত সরকার এক বিবৃতিতের এ তথ্য জানিয়েছে।
গত আগস্টের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলন শুরু হচ্ছে।
বিজিবি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এবং বিএসএফ এর পক্ষে নেতৃত্বে দেবেন মহাপরিচালক (ডিজি) দলজিৎ সিং চৌধুরী।
বিএসএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা জন্য এবং উভয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে আরো ভালো সমন্বয়ের জন্য এই সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে।
সম্মেলনে সীমান্তে বেড়া নির্মাণ, ‘বেসামরিক লোকদের ওপর হামলা,’ সীমান্ত অপরাধ রোধে করণীয়, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা কার্যকর বাস্তবায়নসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
গত বছরের মার্চে ঢাকায় সর্বশেষ এই দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের স্থল সীমান্তরেখার দৈর্ঘ্য ৪,২৪৬ কিলোমিটার যার ৯৪ শতাংশই ভারতের সঙ্গে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিএসএফকে বেড়া নির্মাণে বাধা দেয় বিজিবি। এরপর বিজিবির সাথে স্থানীয় বাসিন্দারাও উপস্থিত হয়ে বেড়ার প্রতিবাদ করে। অপরপাশে ভারতীয় নাগরিকরাও বিএসএফের পক্ষ নিয়ে সীমান্তে উপস্থিত হয়। এ নিয়ে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়।
এছাড়া, ভারতের মালদার শুকদেবপুর সীমান্তে (চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত) বিএসএফ দেড় কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে। এ ঘটনাতেও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণসহ সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে ডেকে বাংলাদেশ উদ্বেগ জানায়। এরপরই ভারতও নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার নুরাল ইসলামকে তলব করা হয়।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের যে সীমান্ত সম্মেলন হতে যাচ্ছে, সেখানে সীমান্ত হত্যা ও মাদকের কারবারসহ যাবতীয় সমস্যা নিয়ে অতীতের তুলনায় ‘ভিন্ন সুরে’ কথা হবে।”
তিনি বলেন, “সীমান্ত হত্যা বন্ধ, ১৫০ গজের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণ, নদী সমস্যাসহ বৈঠকে যেসব বেশি আলোচনা হয়েছে, সেসব বিষয় আমরা কোনো ছাড় দেব না। এবার কথা বলার টোন আলাদা হবে। ভারতীয় গণমাধ্যমে যে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হয়, সেই অপপ্রচার বন্ধ করা যায় কীভাবে সেটা নিয়েও আলোচনা হবে।”
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসএফ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে আটক ১৯ জেলে ৯৭ দিন পর বাড়ি ফিরলেন
ভোলার সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ১৯ জেলে ৯৭ দিন ভারতে আটক থাকার পর দেশে ফিরেছেন। গত বুধবার রাতে তাঁরা নিজ নিজ বাড়ি ফিরেছেন।
দেশে ফেরত জেলেরা বলছেন, সাগরে মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে ঝড়ে দিগ্ভ্রান্ত হয়ে তাঁদের বহনকারী ট্রলার ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে যায়। পরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাঁদের আটক করে।
দেশে ফেরা জেলেরা হলেন সফিজল ব্যাপারী (মাঝি), শাহে আলম, ছিডু মুন্সি, রাজীব চন্দ্র দাস, আক্তার হোসেন, মিন্টু হাওলাদার, মো. ফরিদ, মো. আলমগীর, মোহাম্মদ ফরিদ, মো. ইউনুছ, মো. বাবুল সরদার, মো. নিরব হোসেন, মো. ইসমাইল, মো. শাহ আলম হাওলাদার, গৌতম চন্দ্র দাস, জাকির হোসেন, সগির সিকদার, মো. টুটুল ও শহীদুল ইসলাম। তাঁরা সবাই ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
জেলে ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, ৫ সেপ্টেম্বর শান্তির হাট ঘাট এলাকা থেকে একটি মাছ ধরার নৌকা নিয়ে বঙ্গোপসাগরে যান ওই জেলেরা। মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে ঝড়ে দিক হারিয়ে তাঁরা ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করেন। বিএসএফ তাঁদের আটক করে সুন্দরবনের কোস্টাল থানায় হস্তান্তর করে। সেখান থেকে তাঁদের আলীপুর সদর ও পরে বারাইপুর জেলে পাঠানো হয়। দুই দেশের সরকারের সিদ্ধান্তে বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বাউন্ডারিতে হস্তান্তরের পর পশ্চিমাঞ্চলীয় কোস্টগার্ডের সহায়তায় বুধবার সন্ধ্যায় মোংলা বন্দরে পৌঁছান তাঁরা। পরে দিবাগত রাত দুইটার দিকে নিজ নিজ বাড়িতে ফেরেন।
জেলেরা ফিরলেও মাছ ধরার নৌকাটি ফেরত দেওয়া হয়নি দাবি করেন সফিজল মাঝির ছেলে হোসাইন স্বাধীন। তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ টাকা মূল্যের ফিশিং বোটটি ফেরত পাইনি। নৌকাটি না পেলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।’
আরও পড়ুনবঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার বিকল, ভোলার ১৯ জেলে ভারতের কারাগারে২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫জেলে মো. শাহে আলম বলেন, সাগর থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ পাওয়া গিয়েছিল। ভারতীয় প্রশাসন মাছসহ ফিশিং বোট নিয়ে গেছে।
ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওই জেলেদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছেন বলে দাবি করেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী ও জেলে সমিতির ভোলা সদর উপজেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মামুন শেখ। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেন আর কোনো জেলেকে এভাবে নির্যাতন না করা হয়, সেই অনুরোধ জানাই।’
আরও পড়ুনসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ১২ দিন ধরে ১৫ জেলে নিখোঁজ২২ নভেম্বর ২০২৫আল মামুন শেখ বলেন, জেলেরা আটক হওয়ার খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবারের কাছ থেকে সব কাগজপত্র সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ফলে দীর্ঘ ৯৭ দিন পর কোস্টগার্ডের সহায়তায় ওই জেলেরা দেশে ফিরেছেন।
কোস্টগার্ড সূত্রে জানা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে বন্দিবিনিময়ের সিদ্ধান্ত হলে বাংলাদেশ ৪৭ ভারতীয় জেলেকে ও ভারত ৩২ বাংলাদেশি জেলেকে ফেরত দেয়।
ভোলা সদর ইউএনও মো. আরিফুজ্জামান বলেন, সাধারণত এ ধরনের ঘটনায় জেলেদের ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে ৯৭ দিনের মাথায় তাঁরা ফিরেছেন। আটক থাকা অবস্থায় তাঁদের পরিবারগুলোকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুনভোলায় সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ১৩ জেলে ভারতের কারাগারে বন্দী০১ ডিসেম্বর ২০২৫