ভারতে রেলস্টেশনে হুড়োহুড়িতে কুম্ভমেলার যাত্রীসহ ১৮ জনের মৃত্যু
Published: 16th, February 2025 GMT
ভারতের রাজধানী দিল্লির প্রধান রেলস্টেশনে শনিবার রাতে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে ট্রেনে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে অন্তত ১৮ জন মারা গেছেন।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আজ রোববার ভোরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং এএফপি একে পদপিষ্টের ঘটনা বলে বর্ণনা করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় শনিবার রাত আটটার দিকে দিল্লি রেলস্টেশনের দুটি প্ল্যাটফর্মে ওই ঘটনা ঘটে।
ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে (সাবেক এলাহাবাদ) কুম্ভমেলা চলছে। ওই মেলায় যোগ দিতে যাওয়ার জন্য শনিবার বহু মানুষ দিল্লির রেলস্টেশনটিতে জড়ো হয়েছিলেন। ট্রেন আসার পর লোকজন হুড়োহুড়ি করে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করলে হতাহতের ওই ঘটনা ঘটে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, হতাহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই হিন্দু পুণ্যার্থী। তাঁরা মহাকুম্ভে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন।
১২ বছর পরপর ভারতের প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়। কোটি কোটি মানুষ ওই মেলায় যোগ দিতে আসেন।
ভিড়ের চাপে সেখানে মাঝেমধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটে। যেমন গত মাসে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর সংগমস্থলে পদপিষ্ট হয়ে অন্তত ৩০ জন মারা যান।
শনিবার রাতে হুড়োহুড়ির ঘটনার পর হতাহত ব্যক্তিদের বেশ কয়েকজনকে দিল্লির লোক নায়ক হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালটির উপাধ্যক্ষ ডা.
হাসপাতালটিতে আহত আরও ১১ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন এই চিকিৎসা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আহতদের বেশির ভাগের অবস্থাই স্থিতিশীল, তাঁরা হাড়ে আঘাত পেয়েছেন।’
স্থানীয় অন্য একটি হাসপাতালে আরও তিনজন মারা গেছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে এনডিটিভি। এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি এ খবর দিয়েছে বলে এএফপি জানিয়েছে।
এ ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক্সে এক পোস্টে মোদি লেখেন, ‘যাঁরা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাঁদের সবার প্রতি আমার সমবেদনা রইল। আমি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’
রেলওয়েমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন, কুম্ভমেলার পুণ্যার্থীদের ভিড় কমিয়ে আনতে দিল্লি থেকে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের এই মেলায় খরচ ৭ হাজার কোটি রুপি, ৪০ কোটি মানুষ অংশ নিতে পারেন১২ জানুয়ারি ২০২৫গত মাস থেকে কুম্ভমেলা শুরু হয়েছে। ছয় সপ্তাহ ধরে এই মেলা চলে। কুম্ভমেলা শেষ হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি। এরই মধ্যে ৫০ কোটি মানুষ এই মেলায় অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা।
১৯৫৪ সালে কুম্ভমেলায় এক দিনে চার শতাধিক মানুষ পদপিষ্ট হয়ে অথবা ডুবে মারা গিয়েছিল।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২০, আহত তিন শতাধিক
উত্তর আফগানিস্তানে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ২০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রায় ৩২০ জন আহত হয়েছেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফাত জামান আজ সোমবার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, বালখ এবং সামাঙ্গান প্রদেশে প্রাথমিকভাবে নিহত ও আহতের সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ভূমি অফিসকে আস্থার প্রতিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে: সিনিয়র সচিব
ফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ৬৯
ক্ষতি প্রত্যক্ষকারী এএফপির সাংবাদিকের মতে, ভূমিকম্পে ১৫ শতকের স্মৃতিস্তম্ভ মাজার-ই-শরিফের নীল মসজিদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল আফগানিস্তানের খুলম থেকে ২২ কিলোমিটার (১৪ মাইল) পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং ২৮ কিলোমিটার গভীরে। স্থানীয় সময় রাত ১২ টা ৫৯ মিনিটে এটি আঘাত হানে বলে জানিয়েছে ইউএসজিএস।
আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক ঘোষণায় বলেছে, উদ্ধার ও জরুরি সহায়তা দলগুলো বালখ এবং সামাঙ্গান প্রদেশের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছেছে। আহতদের স্থানান্তর ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তাসহ উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ভূমিকম্পে মাজার-ই-শরিফের নীল মসজিদ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এএফপি জানিয়েছে, অলঙ্কৃত কাঠামোর টুকরো, বিশেষ করে এর একটি মিনার ভেঙে মাটিতে পড়ে গেছে।
শতাব্দী প্রাচীন এই স্থানটি আফগানিস্তানের সবচেয়ে সম্মানিত ধর্মীয় নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি এবং ইসলামিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবের সময় একটি প্রধান সমাবেশস্থল। এটি দেশটির কয়েকটি পর্যটন স্থানের মধ্যে একটি।
রাজধানী কাবুল এবং আফগানিস্তানের আরো কয়েকটি প্রদেশেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পাহাড় থেকে পাথর পড়ার কারণে কাবুলের সঙ্গে মাজার-ই-শরিফের সংযোগকারী একটি প্রধান মহাসড়ক কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, তবে পরে রাস্তাটি পুনরায় খুলে দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফগানিস্তান ধারাবাহিকভাবে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে। অর্থনৈতিক সংকটে থাকা দেশটি প্রায়শই এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় অসুবিধার সম্মুখীন হয়, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
গত ৩১ আগস্ট পাকিস্তান সীমান্তের কাছে পূর্ব আফগানিস্তানে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। তালেবান সরকারের মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প এবং তার পরে শক্তিশালী আফটারশকে কমপক্ষে চার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ঢাকা/ফিরোজ