বান্দরবানের লামায় পাঁচ রাবার বাগানের ২৬ জন শ্রমিককে অপহরণ করেছে পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। রোববার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার ফাঁসিয়াখালীর দুর্গম মুরুংঝিরি এলাকা থেকে তাদের অপহরণ করা হয়। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাৎ হোসেন।
অপহৃত ২০ জন শ্রমিকের নাম জানা গেছে। তারা হলে- মো.
স্থানীয় সূত্র জানায়, পাহাড়ি একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ গত দুই-আড়াই মাস ধরে উপজেলার সরই, গজালিয়া, লামা সদর ইউনিয়ন ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি ও অপহরণসহ নানা অপকর্ম করে আসছে। এ ধারাবাহিকতায় রোববার রাতে পাঁচ রাবার বাগান থেকে ২৬ টেপার শ্রমিককে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বাগানের একজন মালিক মো. শাহজাহান বলেন, সন্ত্রাসীরা আমার বাগান থেকে ১২ শ্রমিককে নিয়ে গেছে। কিছুদিন আগে সন্ত্রাসীরা তাদের কাছে ৬ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। চাঁদা না পেয়ে শ্রমিকদের অপহরণ করেছে। অপহরণের পর আমার কাছে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। বাকি শ্রমিকদের কাছে থেকেও মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে বলে শুনেছি।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মংমেগ্য মার্মা বলেন, ২৬ শ্রমিককে অপহরণের ঘটনায় অন্য শ্রমিক ও স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ওসি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, শ্রমিক অপহরণের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ অভিযানে নেমেছে। ঘটনাস্থল দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় অপহরণের সুযোগ পাচ্ছে সন্ত্রাসীরা।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
লিবিয়ায় তিন বাংলাদেশিকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবি
লিবিয়ায় মুক্তিপণের দাবিতে তিন বাংলাদেশি নাগরিককে অপহরণের পর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। তাদের দাবি, অপহরণকারীরা নির্যাতনের ভিডিও ও অডিও পাঠিয়ে একটি ব্যাংক নম্বরের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছে। এতে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে স্বজনদের। ইতিমধ্যে মুক্তিপণের কিছু অর্থ পাঠিয়েছে দুটি পরিবার।
ওই তিন প্রবাসী হলেন আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের গুডুম্বা গ্রামের গোলাম রব্বানী, একই ইউনিয়নের পুন্ডুরিয়া দক্ষিণ মণ্ডলপাড়া গ্রামের আবদুল করিম ও সোনামুখী ইউনিয়নের রামশালা গ্রামের রুহুল আমিন। প্রায় ১৫ দিন আগে গোলাম রব্বানীকে এবং ৬-৭ দিন আগে অন্য দুজনকে অপহরণ করা হয়। রুহুল আমিন ও আবদুল করিম সম্পর্কে শ্যালক-ভগ্নিপতি।
গোলাম রব্বানীর স্ত্রী মোছা. জুথি আক্তার জানান, তাঁর স্বামী ২০১৫ সালে লিবিয়ায় যান এবং ২০২৩ সালে ছুটি কাটিয়ে আবার সেখানে ঠাঁই নেন। জিলথান শহরে রঙের কাজের কথা বলে স্থানীয় একটি বাঙালি মাফিয়া চক্র তাঁকে অপহরণ করে। গত ৩০ নভেম্বর রব্বানীর ফোন থেকেই তাঁকে কল দিয়ে অপহরণের কথা জানানো হয় এবং ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের মতিঝিল করপোরেট শাখার একটি হিসাব নম্বরে এই টাকা জমা দিতে বলা হয়। এর পরপরই নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয়। এখন অপহরণকারীরা ১৫ লাখ টাকা চাইছে বলে জানান তিনি।
জুথি আক্তারের ভাষ্য, ‘ওই টাকা না দিলে তারা (অপহরণকারীরা) আমার স্বামীকে হত্যা করবে, বলে হুমকি দিচ্ছে। স্বামীকে উদ্ধারে প্রবাসী কল্যাণের ওয়েজ অর্নার বোর্ডের সহযোগিতা চেয়ে মহাপরিচালকের কাছে আমি ৮ ডিসেম্বর একটি আবেদন করেছি।’
অপহৃত আবদুল করিমের স্ত্রী তাসলিমা বিবি বলেন, দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে লিবিয়ায় থাকা তাঁর স্বামী গত বছর প্রায় আট মাস দেশে ছিলেন। প্রায় সাত মাস আগে তিনি আবার লিবিয়ায় ফিরে যান। ৬ ডিসেম্বর রঙের কাজ দেখানোর কথা বলে তাঁকে ডেকে নেওয়া হয়। পরে আটকে রেখে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরিবারের সদস্যরা এরই মধ্যে কিছু টাকা ওই ব্যাংক নম্বরে পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন।
অপহৃত রুহুল আমিনের স্ত্রী আছিয়া বেগম বলেন, ঘটনার দিনে স্বামী ফোন করে জানিয়েছিলেন, তিনি কাজ দেখতে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর একটি গাড়ির ছবি পাঠান। পরদিন তাঁর ফোন থেকেই নির্যাতনের অডিও পাঠিয়ে ৩০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। কষ্ট করে এক লাখ টাকা পাঠিয়েছেন তাঁরা।
আক্কেলপুর থানার এসআই গণেশ চন্দ্র বলেন, গোলাম রব্বানীর স্ত্রী নির্যাতনের ভিডিও ও মুক্তিপণের বিষয়টি নিয়ে থানায় এসেছিলেন। তাঁকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনলিবিয়া থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হলো ১৭০ জনকে১৮ নভেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনলিবিয়া টু ইতালি: ‘মৃত্যুর পথে’ কেন মরিয়া যাত্রা১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫