শেষ ধাপে প্রবেশ করেছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের শীর্ষ লিগের লড়াই। এখন প্রতিটি ম্যাচ শিরোপা নির্ধারণের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ। সামান্য একটি ভুলে এলোমেলো হয়ে যেতে পারে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন। সব লিগে অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাত্রা একই রকম নয়। তবে এবার শীর্ষ চার লিগের তিনটিতেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও লড়াইটা দুই দলের মধ্যে সীমিত থাকলেও, কোথাও আবার সেটা ত্রিমুখী।

প্রিমিয়ার লিগে যেমন লড়াইটা এখন লিভারপুল ও আর্সেনালের মধ্যে। কিন্তু সিরি ‘আ’ এবং লা লিগায় লড়াইয়ে আছে তিনটি করে দল। ইতালিয়ান শীর্ষ লিগে নাপোলি ও ইন্টার মিলানের সঙ্গে আছে আতালান্তা। আর লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা এবং আতলেতিকো মাদ্রিদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে রোমাঞ্চকর লড়াই। বুন্দেসলিগায় কেবল কিছুটা নির্ভার আছে বায়ার্ন মিউনিখ।

ইংল্যান্ডে শেষের লড়াইটা লিভারপুল-আর্সেনালেরই

ইংল্যান্ডে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা লড়াইটা যে লিভারপুল ও আর্সেনালের মধ্যে সীমিত থাকছে সেটা একপ্রকার নিশ্চিতই। ২৫ ম্যাচ শেষে লিভারপুলের পয়েন্ট ৬০। সমান ম্যাচে আর্সেনালের পয়েন্ট ৫৩। এই সপ্তাহে দুটি ম্যাচ খেলেছে লিভারপুল। মার্সিসাইড ডার্বিতে এভারটনের বিপক্ষে লিভারপুল শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ম্যাচ ড্র না করলে আর্সেনালের সঙ্গে ব্যবধানটা এখন ৯ এ রাখতে পারত। সেটি না পারলেও এই পর্যায়ে ৭ পয়েন্টের ব্যবধান কম নয়। তবে একটি ভুলে এলোমেলো হয়ে যেতে পারে লিভারপুলের।

আরও পড়ুনকষ্টের জয়ে ৭ পয়েন্টে এগিয়ে গেল লিভারপুল১৬ ঘণ্টা আগে

সর্বশেষ গতকাল রাতে উলভসের বিপক্ষে বেশ কষ্ট করেই ২-১ গোলে জিতেছে তারা। এই অবস্থায় বাকি ম্যাচগুলোয় বেশ সতর্কতার সঙ্গেই মাঠে নামতে হবে তাদের। অন্য দিকে লেস্টার সিটির বিপক্ষে পয়েন্ট হারানোর পথে থাকলেও শেষ দিকে জোড়া গোল করে ম্যাচ বের করেছে আর্সেনাল। ফলে লিভারপুলের সঙ্গে সমীকরণের হিসাবটা হাতের নাগালেই রেখেছে তারা। এই লিগে তিন, চার এবং পাঁচে থাকা নটিংহাম ফরেস্ট (৪৭), ম্যানচেস্টার সিটি (৪৭) এবং বোর্নমাউথের (৪৩) লড়াইটা এখন সেরা চারে থাকার।

শীর্ষে ওঠার সুযোগ বার্সার

লা লিগার পয়েন্ট তালিকায় এখন পর্যন্ত বার্সেলোনার অবস্থান ৩ নম্বরে। কিন্তু আজ রাতেই শীর্ষে উঠে আসার সুযোগ আছে। সে জন্য রায়ো ভায়েকানোর বিপক্ষে কোনোভাবে জিতলেই চলবে। আজ নিজেদের মাঠে জিতলে বার্সার পয়েন্ট হবে রিয়ালের সমান ২৪ ম্যাচে ৫১। কিন্তু গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় শীর্ষে থাকবে তারাই। বার্সেলোনার সামনে সুযোগ আসার কারণ রিয়াল ও আতলেতিকোর পয়েন্ট হারানো।

আরও পড়ুনবেলিংহামের লাল কার্ডের পর পয়েন্ট হারিয়ে বিপদে রিয়াল১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এ সপ্তাহে নিজেদের ম্যাচে ওসাসুনার সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে রিয়াল। এরপর আতলেতিকোর সামনে সুযোগ ছিল নিজেদের ম্যাচ জিতে শীর্ষে ওঠার। কিন্তু আতলেতিকোও ১-১ গোলে ড্র করে সেল্তা ভিগোর সঙ্গে। ফলে রিয়াল ও আতলেতিকোর পয়েন্টের পার্থক্য আগের মতোই থেকে যায়। আতলেতিকোর পয়েন্ট ২৪ ম্যাচে ৫০। এখন বার্সেলোনা যদি আজ জিততে পারে তবে রিয়াল-আতলেতিকোর পয়েন্ট হারানোর সুযোগটা নিতে পারবে তারা।

ইতালিতে ত্রিমুখী লড়াইয়ের উত্তাপ

সিরি ‘আ’র লড়াইয়ে প্রতি সপ্তাহে নানারকম উত্থান-পতনের দেখা মিলছে। তবে শেষ পর্যন্ত লড়াইটা এখনো তিনটি দলের মধ্যেই। নাপোলি ও ইন্টার মিলানের সঙ্গে যে লড়াইয়ে আছে আতালান্তা। সপ্তাহের শুরুতে শীর্ষে থাকা নাপোলির সুযোগ ছিল ইন্টার থেকে ৪ পয়েন্টে এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু লাৎসিওর সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে সে সুযোগ হাতছাড়া করেছে তারা।

আরও পড়ুনম্যারাডোনা, নাপোলি এবং এক অমর ভালোবাসার গল্প ৩০ অক্টোবর ২০২৪

অন্য দিকে ইন্টার মিলানের সামনেও সুযোগ ছিল নাপোলিকে টপকে যাওয়ার। কিন্তু শেষ তিন ম্যাচের দুটিতে হেরে সে সুযোগ নষ্ট করেছে তারাও। সর্বশেষ গতকাল রাতে জুভেন্টাসের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে তারা। শীর্ষ দুইয়ের মতো হোঁচট খেয়েছে তৃতীয় দলটিও। কালিয়ারির সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে আতালান্তা। এখন ২৫ ম্যাচ শেষে নাপোলির পয়েন্ট ৫৬। সমান ম্যাচে ইন্টারের পয়েন্ট ৫৪ এবং তিনে থাকা আতালান্তার পয়েন্ট ২৫ ম্যাচে ৫১।

বায়ার্নকে রুখে দিয়েও ৮ পয়েন্ট পেছনে লেভারকুসেন

এ সপ্তাহে বুন্দেসলিগায় সবার চোখ ছিল বায়ার্ন এবং লেভারকুসেন ম্যাচের দিকে। যদিও শেষ পর্যন্ত ম্যাচটিতে জিততে পারেনি কোনো দলই। তবে বরাবরের মতো এবারও জাবি আলোনসোর দলের সামনে খাবি খেয়েছে বায়ার্ন। ম্যাচে একটি শটও লক্ষ্যে নিতে পারেনি তারা।

তবে লেভারকুসেনের সামনে বায়ার্নের এমন হতশ্রী দশা কিন্তু পয়েন্ট তালিকার চিত্রকে বোঝাতে পারছে না। পয়েন্ট তালিকায় বর্তমানে ৮ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে শীর্ষে আছে বায়ার্ন। ২২ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৫৫ আর লেভারকুসেনের পয়েন্ট সমান ম্যাচে ৪৭। সামনের ম্যাচগুলোয় এই ব্যবধান ঘুচিয়ে আনাটা লেভারকুসেনের জন্য অনেক কঠিনই হওয়ার কথা।  

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর স ন ল র ব যবধ ন ড র কর ইন ট র র স মন

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ