ভারত প্রশ্নে বিএনপি-জামায়াতের অবস্থান কী?
Published: 17th, February 2025 GMT
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বরাবরই আবেগের। তবে এই মাত্রা অতিদূর পর্যন্ত চলে গিয়েছিল, বিশেষত আওয়ামী লীগের আমলে। আওয়ামী লীগ সরকার গৃহীত নীতি সব দিক থেকে প্রতিবেশী দেশটির স্বার্থের অনুকূলে কাজ করেছে। এতে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ভারত বিরোধিতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে গেছে বটে, কিন্তু ভারতের ব্যাপারে মূলধারার অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অবস্থান কী– তা গভীর মনোযোগ দিয়ে বিচার করার দাবি রাখে।
খেয়াল করা দরকার, ভারতের ব্যাপারে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পরও একই সুর শোনা যাচ্ছে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ডাক উঠেছে। অভ্যুত্থানে শত শত শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছে, কিন্তু দেশটির সঙ্গে রাষ্ট্রনীতি এখনও জনগণবিরোধী পথে হাঁটার আশঙ্কা বেড়ে গেছে। সাম্প্রতিক বিতর্কে সে রকমই বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। আগামী দিনের শাসক মহলের কথাবার্তায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক শাসন ও শোষণের মধ্যেই আবদ্ধ থাকছে।
অভ্যুত্থানের পর ভারতের মিডিয়া ও সরকার যে পথে হেঁটেছিল, তা অনেকটা কমে এসেছে। বর্তমানে তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ফর্মুলা আনার চেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে বিএনপি কিংবা জামায়াত আওয়ামী লীগের ব্যাপারে নমনীয় হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রভাব প্রায় শূন্যে নেমে আসার পর ভারত সেই বাস্তবতা মেনে নিয়ে বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে ভিন্ন বন্দোবস্ত কায়েমে তৎপর। কিন্তু মূল উদ্দেশ্য দল দুটির মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের অবস্থান পাকাপোক্ত করা। অর্থাৎ বিএনপি বা জামায়াত যারাই আগামীতে ক্ষমতায় আসবে, তারা যেন আওয়ামী লীগকে ‘রাজনৈতিক ভ্রাতা’ হিসেবে গ্রহণ করে নেয়।
এই নতুন কৌশলে বিএনপি বা জামায়াতের মধ্যে যে দলটি আওয়ামী লীগকে যত বেশি ছাড় দেবে, দেশটি সে দলের পক্ষে কাজ করবে। এই প্রক্রিয়ায় এগোলে ভারতের ব্যাপারে আওয়ামী লীগেরই অবস্থান আবার ভিন্ন নামে ফিরে আসার আশঙ্কা রয়েছে। যদি বিএনপি বা জামায়াত আওয়ামী লীগকে ছাড় দেওয়ার নীতি গ্রহণ করে, তাহলে আগামী নির্বাচনে জয়যুক্ত দলটি একই পথে হাঁটতে বাধ্য। আওয়ামী লীগ যেভাবে ভারতনীতি গ্রহণ করেছিল, সেভাবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নির্ধারিত হবে। বিএনপি কিংবা জামায়াতের পক্ষে ভিন্ন পথে হাঁটার সুযোগই থাকবে না। প্রকৃতপক্ষে দল দুটি ভিন্ন নীতি গ্রহণের রাস্তা কী হতে পারে, তা নিয়ে ভাবছে বলে মনে হয় না। কারণ আওয়ামী লীগের মতো দল দুটিও ভারত ‘বিগ ব্রাদার’– এই নীতিতে বিশ্বাস করে এবং সেভাবেই হাঁটতে চায়।
এ ধরনের নীতি ও মানসিকতা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন করতে পারে। দেখা যায়, ভারতের জাতীয় স্বার্থ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা সুরক্ষায় বিজেপি, কংগ্রেস বা তৃণমূল কংগ্রেস জাতীয় ঐক্যে পৌঁছাতে পারে। বাংলাদেশকে কী দেবে কিংবা কতটুকু দেবে– এ ব্যাপারে তারা একজোট। গণঅভ্যুত্থানের পরও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সে রকম কোনো ঐক্য গড়ে ওঠেনি। ভারতকে আমরা কতুটুকু ছাড় দেব, কতটুকু দেব না কিংবা বিনিময়ে আমাদের প্রাপ্তি কী– এসব ব্যাপারে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে কোনো রকম জাতীয় ঐক্য দেখা যাচ্ছে না। এ সুযোগকে ভারত কাজে লাগাতে চায়।
প্রশ্ন হচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর কী করণীয়? নিশ্চয় ভারতের প্রাসঙ্গিকতা উড়িয়ে দেওয়া নয়; বরং বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের মধ্য দিয়ে ভারতের যে আধিপত্যবাদী নীতি পোক্ত হয়েছে, সেই ভিত্তি ভেঙে দিতে কর্মসূচি হাতে নেওয়া। দুর্ভাগ্যবশত, বিএনপি কিংবা জামায়াতের এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোনো তৎপরতা নেই।
আমরা জানি, ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া, বিভিন্ন শিল্পে ভারতীয় নাগরিকদের অবাধ কর্মসংস্থান, ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশে একতরফা ও অবাধে চলতে দেওয়া ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল ভারতের জন্য অন্যতম রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশ। এসব ব্যাপারে বিএনপি-জামায়াতের এখনও জোরালো কোনো অবস্থান আমাদের চোখে পড়েনি। যেমন– বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রিত হয় ভারতে; বাংলাদেশের কর্মকর্তারা ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন; দেশের দুর্বল চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নেন। এ পরিস্থিতি বাংলাদেশের ওপর ভারতের নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি গ্রহণে সহায়ক। এসব বিষয়ে আগামীতে বিএনপি বা জামায়াত কী অবস্থান নিতে চায়– কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
আক্ষরিক অর্থেই ভারত গত দুই দশক বা তার আগে থেকেই বাংলাদেশকে আঞ্চলিক শক্তি ও অর্থনৈতিক ‘উপনিবেশ’ হিসেবে ব্যবহার করেছে। এই ক্ষেত্র প্রস্তুতে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে বিএনপি বা জামায়াতের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা কী? সেই সুবিধা অব্যাহত রাখতে ভারত বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।
সন্দেহ নেই, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত। কিন্তু সেই সম্পর্কের ভিত্তি যতটা মানবিক ও যৌক্তিক; স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও এ দেশের মানুষকে সে জন্য যে প্রতিদান দিতে হচ্ছে, সেটা অযৌক্তিক ও অমানবিক। ফলে নিছক বিরোধিতা নয়, বরং ভারতের সঙ্গে এ দেশের সম্পর্ক আরও যৌক্তিক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করা জরুরি। স্বার্থ শতভাগ নিশ্চিত না হলেও অন্তত বাংলাদেশ যেন শতভাগ ঠকে না যায়। সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভারত প্রশ্নে অভিন্ন অবস্থান প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই ঐক্য গড়ে না উঠলে বাংলাদেশের স্বার্থ কখনও সুরক্ষিত হবে না।
নিয়ামত আলী: গ্র্যাজুয়েট টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট; ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল দ শ র র জন ত র র জন ত ক অবস থ ন ব এনপ গ রহণ আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
স্বপ্নে হলো দেখা
কারও স্বপ্নে আপনি প্রবেশ করেছেন বা অন্য কেউ আপনার স্বপ্নে এসেছেন, তাও তখন, যখন আপনি স্বপ্নে নিজের ইচ্ছায় পরিচালিত হচ্ছেন– এমনটা কি কখনও ভেবেছেন? বিজ্ঞানীদের দাবি– একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এমনটিই করেছেন তারা, যেখানে দু’জন মানুষের মধ্যে স্বপ্নের ভেতরে যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে। এমনটি সত্যি হয়ে থাকলে এটিই হবে প্রথমবারের মতো ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখার সময় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ– যা এখনও বিজ্ঞানের কাছে এক রহস্য।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক নিউরোটেক কোম্পানি রেমস্পেস, যারা মূলত লুসিড ড্রিমিং (স্বপ্নের মধ্যে সচেতন থাকা) ও ঘুমের বিকাশ নিয়ে কাজ করে। তারা জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দু’বার দু’জন ব্যক্তিকে লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করিয়ে একটি সাধারণ বার্তা আদান-প্রদান করাতে পেরেছে।
কল্পকাহিনির মতো এক স্বপ্নপরীক্ষা
রেমস্পেসের গবেষকরা দাবি করেন, তারা এমন এক প্রযুক্তি তৈরি করেছেন; যার মাধ্যমে দু’জন ব্যক্তি লুসিড ড্রিম অবস্থায় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। স্বপ্ন এখনও মানবতার জন্য এক বিশাল রহস্য। ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন উজ্জ্বল ভাবনা, দৃশ্য, অনুভূতি ও কল্পনা গঠিত হয়। আমরা প্রায় সবাই স্বপ্ন দেখি, যদিও ঘুম ভাঙার পর তা মনে থাকে না। বিজ্ঞানীরা বলেন, স্বপ্নের মাধ্যমে মস্তিষ্ক আমাদের অনুভূতি ও চিন্তা প্রক্রিয়া করে, স্মৃতি দর্শন করে এবং বাস্তব জীবনে এর প্রস্তুতি নেয়।
স্বপ্নের মাধ্যমে যোগাযোগ
রেমস্পেসের দাবি, গত ২৪ সেপ্টেম্বর, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন, তখন রেমস্পেসের তৈরি বিশেষ যন্ত্র ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে দূর থেকে তাদের মস্তিষ্কের তরঙ্গ, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস রেকর্ড করে। যখন তাদের সার্ভার শনাক্ত করে যে, একজন অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করেছে, তখন তারা একটি র্যানডম শব্দ তৈরি করে সেটি কানে দেওয়া ইয়ারবাডের মাধ্যমে তাকে শুনিয়ে দেয়। কোম্পানি শব্দটি প্রকাশ করেনি– এটি শুধু ওই ব্যক্তি জানতেন এবং স্বপ্নে পুনরায় উচ্চারণ করেন বলে দাবি করা হয়েছে। এরপর সেই প্রতিক্রিয়া সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়। আট মিনিট পরে, দ্বিতীয় অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করলে, সার্ভার থেকে তাঁকে সেই রেকর্ডকৃত বার্তা পাঠানো হয়, যা তিনি ঘুম থেকে উঠে বলেন এভাবেই স্বপ্নে প্রথমবারের মতো একটি ‘যোগাযোগ’ সম্পন্ন হয়। রেমস্পেস জানায়, ‘আমরা একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছি, এতে লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে মানবযোগাযোগ ও সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।’
লুসিড ড্রিম কী?
লুসিড ড্রিম তখন হয়, যখন কোনো ব্যক্তি স্বপ্ন দেখার সময় সচেতন থাকেন যে, তিনি স্বপ্ন দেখছেন। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানায়, এটি সাধারণত ঘুমের ‘র্যাপিড আই মুভমেন্ট’ ধাপে ঘটে, যেখানে সবচেয়ে প্রাণবন্ত স্বপ্ন দেখা যায়। এ অবস্থায় মানুষ নিজের ইচ্ছেমতো স্বপ্নে কাজ করতে পারেন, পরিকল্পিতভাবে কিছু করতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেন, ‘যে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো– যে তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তা কতটা নির্ভরযোগ্য। অর্থাৎ, এই গবেষণা অন্য কেউ অন্য কোনো জায়গায় করলে একই ফল দেবে কিনা। ঘুমের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টা নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, মোটা দাগে ঘুমের দুইটা ভাগ আছে– এক. ননরেম ঘুম, যখন আমাদের চোখের মণি নড়ে না; দুই. রেম ঘুম, এ পর্বে আমাদের চোখের মণি নড়াচড়া করে। এ সময়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্নও দুই রকমের। লুসিড ড্রিম; যে স্বপ্নগুলো একদম বাস্তবের মতো জলজ্যান্ত। এমন এক স্বপ্ন যা দেখার পর ঘুম থেকে উঠে মনে হবে আসলেই এমনটি ঘটেছে, এটি বাস্তব। আরেকটি স্বপ্ন হলো নন লুসিড ড্রিম। এ স্বপ্নগুলো অবাস্তব। ঘুম ভাঙার পর বেশির ভাগ সময়েই আমরা স্বপ্নের কথা মনে করতে পারি না। লুসিড ড্রিমের ক্ষেত্রে আমরা তা মনে রাখতে পারি।’
প্রথম পরীক্ষার সাফল্যের পর, রেমস্পেসের সিইও মাইকেল রাদুগা (৪০) দাবি করেন, গত ৮ অক্টোবর আরও দু’জনের সঙ্গে একই ধরনের যোগাযোগ সম্ভব হয়। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আগে স্বপ্নে যোগাযোগ ছিল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, আগামী দিনে এটা এতটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে যে, আমাদের জীবনে এটি ছাড়া কল্পনাই করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা আরইএম ঘুম এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়, লুসিড ড্রিম আগামী দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পর বড় শিল্প হতে যাচ্ছে।’
যদিও রেমস্পেস এখনও জানায়নি তাদের প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে, তবে তারা সম্প্রতি ফেসবুকে জানিয়েছে, ‘লুসিড ড্রিমে যোগাযোগ’ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রস্তুত হয়েছে এবং তা একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে পর্যালোচনার জন্য জমা দেওয়া হয়েছে– প্রকাশ হতে সময় লাগবে দুই থেকে ছয় মাস। তবে এখনও এই প্রযুক্তির কোনো বাহ্যিক বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা হয়নি এবং অন্য কেউ এ পরীক্ষা পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি।
রাদুগা যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম আমেরিকান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে বলেছেন, তাঁর প্রত্যাশা– এ ধরনের প্রযুক্তি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মোবাইল ফোনের মতো সাধারণ হয়ে যাবে। ‘মানুষ নিজেদের জীবন এসব ছাড়া কল্পনা করতে পারবে না, কারণ এটি তাদের জীবনকে আরও উজ্জ্বল, আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলবে। এটি মানুষের জীবনমান এমনভাবে বাড়িয়ে দেবে যে, তারা এটি ছাড়া নিজেদের কল্পনাই করতে পারবে না। আমাদের শুধু এগুলো উন্নত করতে হবে– এটি শুধু সময়ের ব্যাপার।’
২০০৭ সালে রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় রেমস্পেস এবং ছয় মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়, এখন লুসিড ড্রিমিংয়ে অভিজ্ঞ বা আগ্রহী নতুন অংশগ্রহণকারীদের খুঁজছে।
স্বপ্ন-যোগাযোগের ভবিষ্যৎ
ঘুমের মধ্যে মানুষের যোগাযোগ একসময়ে নিছক কল্পবিজ্ঞান মনে হতো। এখন বিজ্ঞান এটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কল্পনা করুন– হাতের ফোনে মেসেজ না পাঠিয়ে, সরাসরি কারও স্বপ্নে ঢুকে তাঁর সঙ্গে ঘুমের মধ্যে সময় কাটানো, কথা বলা যাচ্ছে।
এই ভাবনা যেন স্বপ্নের মতো। ইতোমধ্যে কিছু কোম্পানি মানুষের চেতনা একটি বিকল্প পরিবেশে স্থানান্তরের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। একবার তা সফল হলে, সম্ভাবনার কোনো শেষ থাকবে না– মানবসভ্যতার বিবর্তন নতুন ধাপে প্রবেশ করবে।
লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে নানারকম প্রয়োগ সম্ভব– শরীরগত সমস্যা সমাধান থেকে শুরু করে দক্ষতা অর্জন পর্যন্ত। আগের এক গবেষণায় রেমস্পেস দেখিয়েছে, মুখের পেশিতে সূক্ষ্ম সাড়া থেকে স্বপ্নে উচ্চারিত শব্দ শনাক্ত করা সম্ভব। এখান থেকেই ‘রেমিও’ নামে এক স্বপ্ন-ভাষার জন্ম, যা সেন্সরের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।
লুসিড ড্রিমে যে র্যানডম শব্দ শোনানো হয় অংশগ্রহণকারীদের, সেখানে ‘রেমিও’ স্বপ্ন-ভাষা ব্যবহার করা হয়। রেমস্পেস জানায়, এই সাফল্য এসেছে পাঁচ বছরের গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের পর। গবেষকরা প্রথম পরীক্ষার পর থেকে প্রতিটি পর্যায়ে প্রযুক্তি আরও উন্নত করেছেন। এবার তাদের লক্ষ্য আরও বড়– লুসিড ড্রিমে রিয়েল-টাইম যোগাযোগ। যদিও এটি অনেক জটিল, গবেষকদের আশা, আগামী কয়েক মাসেই তারা সফল হবেন।
শেষ কথা
যেখানে স্বপ্নে যোগাযোগ এতদিন ছিল সায়েন্স ফিকশন সিনেমা বা উপন্যাসের বিষয়; এই পরীক্ষা সেটিকে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। যদি অন্যান্য বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠান একে যাচাই করে, তবে এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ধরনই বদলে দিতে পারে– যেখানে ঘুমের মাঝেও আমরা অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারব। এখনই অতি উত্তেজিত না হয়ে সতর্ক আশাবাদী হওয়াই ভালো– প্রযুক্তিটির সাফল্য এখনও গবেষণাগারে পর্যালোচনার অপেক্ষায়; তাতেও একে পুরোপুরি বাস্তব করতে দশককাল লেগে যেতে পারে। v