চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন ৩টি কমিটি ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই বেশ কয়েকজন নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে দাবি করে তিনটি কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন তাঁরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে আগামী ৬ মাসের জন্য চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল। ৩টি কমিটিতে মোট ৭৫৪ জনের নাম রয়েছে। কমিটি গঠনের প্রতিবাদে আজ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, ৩ কমিটির অন্তত ৫০ থেকে ১০০ জন পদত্যাগ করেছেন। তবে সংবাদ সম্মেলনে ৩ কমিটিতে থাকা ৩০ জনের মতো উপস্থিত ছিলেন।

আজ বেলা তিনটার মধ্যে ওই তিনটি কমিটি বাতিল না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। একই সঙ্গে কমিটি বাতিল না করায় সৃষ্ট পরিস্থিতির দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেলকে নিতে হবে বলে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে তিন দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। সেগুলো হলো আজ বেলা তিনটার মধ্যে কমিটি বাতিল, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং কমিটিতে প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় তিন দিনের মধ্যে প্রকাশ করা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নতুন কমিটিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকা জোবায়রুল আলম, নগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকা চৌধুরী সিয়াম ইলাহি ও সংগঠক আবু বাছির নাঈম।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কমিটিতে সম্মুখযোদ্ধাদের সুযোগ দেওয়া হয়নি। যাঁদের বিরুদ্ধে নারী হেনস্তা ও কিশোর গ্যাংকে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের নিয়ে একপক্ষীয় কমিটি দেওয়া হয়েছে। সনাতন ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। নারী সহযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।

গতকাল রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিজাউর রহমানকে আহ্বায়ক ও সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী নিজাম উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে ৩১৫ সদস্যের মহানগর কমিটি দেওয়া হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবাইর হোসেনকে আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলামকে সদস্যসচিব করে ৩২৭ সদস্যের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইয়াছির আরফিন চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো.

রইছ উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে ১১২ সদস্যের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটি দেওয়া হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদস যসচ ব পদত য গ কম ট র কম ট ত সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ