খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। 

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কুয়েটের সহকারী রেজিস্ট্রার (লিগ্যাল) মো. সাইফুর রহমান বাদী হয়ে খানজাহান আলী থানায় মামলাটি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহেদুজ্জামান শেখ মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

এদিকে পুলিশ মামলা দায়েরের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেনি। খানজাহান আলী থানার ওসি মো.

কবির হোসেন জানান, তিনি থানার বাইরে আছেন। মামলা হয়েছে কি-না থানায় গিয়ে জানাতে পারবেন। 

আরো পড়ুন:

কুয়েটে সংঘর্ষ নিয়ে যা বলছে ছাত্রদল

বানিয়াচংয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত অনেক

থানার ডিউটি অফিসার এএসআই হযরত আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি রাত সোয়া ১০টার দিকে জানান, মামলা সংক্রান্ত কোনো কাগজ তিনি হাতে পাননি।  

এদিকে, আজ অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮তম জরুরি সিন্ডিকেট সভা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় হামলার ঘটনায় জড়িত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করা, ৯৩তম সিন্ডিকেট সভায় রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের আদেশটি বহাল রাখা ও শিক্ষার্থীদের সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধের ঘোষণা কঠোরভাবে অনুসরণ করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং এ আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান অনুযায়ী চাকরিচ্যুত করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, রাজনীতির সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও তদন্ত সাপেক্ষে আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করা হোক মর্মে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

কুয়েট থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মঙ্গলবার ছাত্রদের দুটি গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার প্রেক্ষিতে একটি অনাকাঙ্কিত ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে চারটি দাবি পেশ করা হয়। উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ভাইস-চ্যান্সেলর শিক্ষার্থীদের সব ধরনের সহযোগিতা ও যে কোনো অন্যায়ের বিচার করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। কোনরূপ কালক্ষেপণ না করে স্থানীয় আইনশৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ভাইস চ্যান্সেলর দ্রুত সহযোগিতা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। 

এছাড়া, ছাত্রদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য ভাইস চ্যান্সেলর সব ডিন, ইনস্টিটিউট পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধান, সব পরিচালক, প্রভোস্টদের নিয়ে বিকেলে একটি সভা আহ্বান করেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনী উপস্থিত হওয়ার আগেই বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরসহ আরো কয়েজন শিক্ষক স্ব-শরীরে সংঘর্ষ স্থলে যান এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিবৃত্তের চেষ্টা করেন। এসময়ে কয়েকজন শিক্ষক, ভাইস-চ্যান্সেলর, বহু শিক্ষার্থীসহ কর্মচারীও আহত হয়ে কুয়েট মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি হন। এসময় ভাইস চ্যান্সেলরের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলেও শিক্ষার্থীদের সব দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে পূরণের আশ্বাস প্রদান করেন। 

ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বা জানানো হয়েছে এবং আর যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ঘটনার বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ র জন য র জন ত স ঘর ষ ধরন র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
  • চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেল কক্ষে তল্লাশি, সমালোচনা 
  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচনের জন‌্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • গাজীপুরে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কারখানার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর, আটক ৪৩
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা