ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রাবাসে তল্লাশিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের উত্তেজনার ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আজ শুক্রবার বৈঠক করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এদিকে গত বুধবার সন্ধ্যার পর ছাত্রাবাস থেকে রামদা ও দেশি অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সদস্যসচিব আল নূর মো.

আয়াস বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে রামদা, রড, লোহার পাইপসহ দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের অস্ত্র কেন থাকবে? আমাদের চাওয়া হচ্ছে এ ধরনের কোনো অস্ত্র যেন ক্যাম্পাসে না থাকে। এর সঙ্গে যাঁরা জড়িত, দেশের আইন অনুযায়ী যেন তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তি হয়। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হয়েছে, এখন তাঁরা বিভিন্ন ব্যানারে রয়েছেন, সেসব ব্যানারেও যেন ছাত্রলীগ না থাকতে পারে এটি আমাদের দাবি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক নেতা বলেন, কলেজের ছাত্রাবাসগুলোর ওয়াশরুমসহ বিভিন্ন স্থানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র রয়েছে। কিন্তু কলেজ প্রশাসন সেগুলো বের করতে চাইছে না। বৈষম্যবিরোধীদের চাপে গতকাল রাত ৮টার দিকে কিছু অস্ত্র বের করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। সেগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পেয়েছে দেখিয়ে জড়িতদের বাঁচাতে চাচ্ছে।

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। শুক্রবার একাডেমিক কাম প্রশাসনিক কাউন্সিলের বৈঠক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যেসব অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা পাওয়া গেছে সেগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘কিছু দেশীয় অস্ত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ মামলা দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

আরও পড়ুনবৈষম্যবিরোধীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষের উত্তেজনা, ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বন্ধ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গত সোমবার বিকেলে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রাবাসে তল্লাশিকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এর জেরে রাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদেরও হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কলেজ প্রশাসন। পরদিন একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাউন্সিলের সভায় পুরো ঘটনা ও অভিযোগের বিষয় তদন্তে জেনারেল সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যপক রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সেই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল।

নগরের রহমতপুর বাইপাস এলাকায় ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তিনটি বিভাগে প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। আগে কলেজে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ ছিল। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কলেজে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে কলেজ প্রশাসন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কল জ র ছ ত র ব স তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক

জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।

গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’

২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।

থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।

জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে ১০ শ্রমিক আহত
  • ময়মনসিংহে জয়নুল আবেদিন উদ্যানে উচ্ছেদ হচ্ছে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক
  • অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড়ে ভূমিধসের শঙ্কা
  • ময়মনসিংহে ময়লা ছিটিয়ে টাকা ছিনতাই, দুই বছর পর ঢাকা থেকে আসামি গ্রেপ্তার
  • সাগরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত, ঢাকাসহ ৪ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
  • ময়মনসিংহের সেই মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কের চুক্তি বাতিল, অপসারণের উদ্যোগ
  • ময়মনসিংহে বন্ধুর বাড়িতে যুবকের রক্তাক্ত মরদেহ
  • টাঙ্গাইলে কুকুরের কামড়ে ২৫ জন আহত
  • জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
  • ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি, আজও বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস