ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো গোল করলে আল নাসর জিতে। এই পর্তুগিজ মহাতারকা গোল শূন্য থাকলে জয়শূন্য থাকে সৌদি ক্লাবটি। ব্যাপারটা আবারও প্রমাণিত হলো। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) সৌদি প্রো লিগের ম্যাচে ম্যাচের ৮১ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও অপ্রত্যাশিতভাবে আল ইত্তিফাকের বিপক্ষে ২-৩ গোলে হারতে হয়েছে আল নাসরকে।

ঘরের মাঠ প্রিন্স ফয়সাল বিন ফাহাদ স্টেডিয়ামে আল ইত্তিফাকের বিপক্ষে অবশ্য বেশি কেছু সহজ সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন রোনালদো। প্রথমার্ধেই গোল করার জন্য তিনটি ভালো সুযোগ পান ৫ বারের ব্যালন ডি-অর জয়ী এই ফরোয়ার্ড। কিন্তু সফরকারী দলের গোলরক্ষক রোডাককে পরাস্ত করতে পারেননি রোনালদো। তবে কেবল তার জন্যই যে দল হেরেছে বিষয়টা তেমন নয়। নূন্যতম ব্যবধানে এগিয়ে থাকার সময় আল নাসরের ইতালিয়ান কোচ স্টেফানো পিওলি একটি বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত নেন। দলের সেরা ডিফেন্ডার আইমেরিক লাপোর্তেকে মাঠ থেকে তুলে নেন। এরপরই গোল হজম করে হারতে হয় সৌদি ক্লাবটিকে।

বিরতির আগে লক্ষ্যে ১৩ শট নেওয়ার পর অবশেষে ৪৭ মিনিটে আইমান ইয়াহিয়ার হেডে প্রথম গোলের দেখা পায় আল নাসর। তবে ৮ মিনিট পরই জর্জিনিও উইজনালডামের অসাধারণ গোলে ১-১ সমতায় ফেরে ইত্তিফাক। এরপর ৬৫ মিনিটে আবারও দুর্দান্ত হেডে আল নাসরকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন ডিফেন্ডার মোহাম্মদ আল ফাতিল।

আরো পড়ুন:

চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলো ড্র
রিয়াল পেল নগর প্রতিদ্বন্দ্বীকে, বার্সেলোনা বেনফিকাকে

বিদ্রোহী ১৮ জনকে বাদ দিয়ে নারী ফুটবল দল ঘোষণা

একটা সময় মনে হচ্ছিল স্বাগতিক ক্লাবটি পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়বে। তবে এগিয়ে গিয়েও রক্ষণে মনোযোগ দেননি আল নাসরের কোচ পিওলি। সেই ভুলের খেসারত দেয় তারা ম্যাচের ৮২ মিনিটে। আল ইত্তেফাকের ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে বিষ্ময়করভাবে তা নিজেদের জালে জড়িয়ে দেন আল নাসর ডিফেন্ডার আল ফাতিল।

এরপর কোচ পিওলির সেই হতবাক করা সিদ্ধান্ত। লাপোরর্তের পরিবর্তে মিডফিল্ডার আবদুলমাজেদ আল সুলাইহিমকে মাঠে নামান ইতালিয়ান কোচ। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৮৯ মিনিটে পেনাল্টি বক্সের ভেতরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উইজনালডাম সহজেই গোল করেন। এতে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে যায় আল ইত্তিফাক।

নিশ্চিত ৩ পয়েন্টের পুরোটাই খুইয়ে এলোমেলো হয়ে যায় স্বাগতিকরা। অ্যাস্টন ভিলা থেকে শীতকালীন দল বদলে আল নাসরে আসা জন ডুরান প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের মাথায় আঘাত করে বসেন। ফলে এই কলম্বিয়ান ফরোয়ার্ড দেখতে হয় লাল কার্ড। রোনালদো রেফারির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখালেও সতীর্থের শাস্তি কমাতে পারেননি।

২১ ম্যাচে ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে আল নাসর। শীর্ষে থাকা আল ইত্তিহাদের চেয়ে ৮ পয়েন্ট পিছিয়ে রোনালদোরা। আগামী মৌসুমের এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে হলে অবশ্যই সেরা তিনে থেকে মৌসুম শেষ করতে হবে আল নাসরকে।

ঢাকা/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ