বাবার মৃত্যুর পর হাল ধরেন আরমান হোসেন। তিন দশক ধরে মিরপুর ১০ নম্বরে পরিবারটি চালাচ্ছে ‘মা মণি জেনারেল স্টোর’। বৃহস্পতিবার ভোরে প্রাইভেটকারে এসে শাটার ভেঙে এটিসহ আশপাশের কয়েকটি দোকানের মালপত্র ও টাকা নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। দুর্ধর্ষ এ ঘটনার পর আরমানের ভাষ্য, পাশে বেনারসিপল্লি; গভীর রাত পর্যন্ত লোকে গমগম। এখানে এমন ঘটনা কল্পনাও করিনি। একই সময়ে তারা কয়েকটি বাসায় হানা দেয়। ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপদ নই। মুদি দোকানের ওপর তিনটি পরিবার নির্ভরশীল। লুণ্ঠিত মালপত্র, টাকা হয়তো পাব না। তবে এমন ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি চাই না। মূলত পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় এসব হচ্ছে।

শুধু মিরপুর নয়, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধীদের বহুমাত্রিক তৎপরতার খবর মিলছে। জড়িতরা এতটা বেপরোয়া যে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করছে। কিছুই তোয়াক্কা করছে না। আবার দিনদুপুরে বাসে উঠে যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, টাকা কেড়ে নিচ্ছে। চলন্ত বাসে অস্ত্র দেখিয়ে করছে নারীর শ্লীলতাহানিও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান ‘ডেভিল হান্টের’ মধ্যেই বেপরোয়া অপরাধীরা। শুক্রবার রাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় তিনজনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যার পর দায় স্বীকার করেছে চরমপন্থি সংগঠন। বিভিন্ন অঞ্চলে এ ধরনের তৎপরতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে কিনা, আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, অভিযানের মধ্যেও অপরাধমূলক তৎপরতা ইঙ্গিত দেয় ততটা কার্যকরী অভিযান হচ্ছে না। অপরাধ প্রতিরোধে কাজ কম হচ্ছে। যদিও এ ধরনের ঘটনায় সাসপেন্ড, বদলির মতো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে দেখছি।

অপরাধ বিশ্লেষক ড.

তৌহিদুল হক বলেন, অপারেশন ডেভিল হান্টের মধ্যেও বহুমাত্রিক অপরাধ দেখছি। অভিযান সামগ্রিকভাবে না হলে কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট গুরুত্ব না দিয়ে যারা অপরাধে জড়াবে, তাদেরই আইনের আওতায় আনতে হবে।

জানতে চাইলে পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, পুলিশের রাতের টহল জোরদার হয়েছে। কৌশলগত স্থানে রয়েছে চেকপোস্ট। অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে নানা কৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন্স) এস এন মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। সামনে কিছু বিষয় দৃশ্যমান হবে। সব সংস্থা সমন্বিতভাবে অপারেশন চালাচ্ছে। ঢাকার মতো এত বড় শহরে তারপরও দু-চারটি ঘটনা ঘটতে পারে।
গতকাল শনিবার পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭৬৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। এ নিয়ে গত ১৪ দিনে মোট গ্রেপ্তার হলো ৮ হাজার ৭৯ জন। অন্যান্য মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে ৫৭২ জন।

পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি থেকে সব মিলিয়ে ৫ হাজার ৭৫০টি অস্ত্র লুট হয়। তার মধ্যে এখনও বেহাত ১ হাজার ৩৮৪টি। লুণ্ঠিত অনেক অস্ত্র পেশাদার অপরাধীদের হাতে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পুলিশের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত জানুয়ারিতে সারাদেশে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ২৯৪ জন। এ সময়ে ১৭১টি চুরি, ৭১ ডাকাতি, ১০৫ অপহরণ এবং নারী ও শিশু নিপীড়নের ঘটনা ঘটে ১ হাজার ৪৪০টি। গত বছর একই সময়ে হত্যার শিকার হন ২৩১ জন। ডাকাতি ২৯, চুরি ১৪১, অপহরণ ৪৩ এবং নারী ও শিশু নিপীড়নের ঘটনা ঘটে ১ হাজার ৪৩টি। গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় এবার চুরি, ডাকাতি, খুনাখুনি, অপহরণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে। যদিও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যান দিয়ে সমাজের প্রকৃত চিত্র বোঝানো কঠিন। কারণ, ঘটনার শিকার হয়ে অনেকে মামলা করতে চান না। আবার মামলা হলেও পুলিশ গড়িমসি করে।

পুলিশের দুই কর্মকর্তা সমকালকে জানান, বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে আরও কার্যকর সমন্বয় রেখে অভিযান পরিচালনার বিষয়ে কাজ চলছে। এরই অংশ হিসেবে রোববার পুলিশ-র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ইউনিটের মধ্যে সমন্বয় সভা হওয়ার কথা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, একের পর এক অপরাধমূলক তৎপরতার তথ্য পাওয়া গেলেও পুলিশের কারও কারও মধ্যে রয়েছে আত্মতুষ্টির ছাপ। কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সেটি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশি তৎপর হচ্ছে। ‘আলোচিত’ হওয়ার আগে ঘটনা ‘আমলে না নেওয়া’ বা ‘হালকা’ করে দেখার প্রবণতা রয়েছে অনেকের মধ্যে। এমনকি রাজধানীর অধিকাংশ থানায় নতুন মুখ হওয়ায় তারা এখনও এলাকাভিত্তিক অপরাধী এবং গোয়েন্দা তথ্য রাখার ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় যেতে পারেননি। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও অনেককে বড় অপরাধে জড়াতে দেখা যাচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে স্বামীর কাছে ফেরার পথে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয় পোশাক কর্মীকে। শুক্রবার ওই নারী বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

সম্প্রতি ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও দুই নারীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আবু রায়হান ইভান নামে শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় তার কাছে থাকা ৪৫ হাজার টাকা ও একটি দামি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।

১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে উত্তরায় ভিক্টর পরিবহনের একটি চলন্ত বাসে যাত্রীবেশী ৫-৬ যুবক অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাই করে। ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে এক নারী ও পুরুষকে রামদা দিয়ে কোপানোর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

১৮ ফেব্রুয়ারি রামপুরার বনশ্রী এলাকায় কাঁচাবাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শ্রমিক দলের নেতা জুয়েলকে গুলি করে তারই দলের আরেক গ্রুপ। ১৩ ফেব্রুয়ারি ইস্কাটনের দিলু রোড এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন দুই রিকশাযাত্রী।

২০ জানুয়ারি বিকেলে পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের সিরামিক রোডের বঙ্গবন্ধু কলেজের পাশে নতুন রাস্তার মুখে চাপাতি, সুইচ চাকু, ইট দিয়ে থেঁতলে হত্যা করা হয় বাবু নামে একজনকে। ওই এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে বাবু ও সন্ত্রাসী মুসার দ্বন্দ্ব চলছিল। তারই জেরে মুসার লোকজন ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে বাবুকে। অভিযুক্ত মুসা সাবেক এমপি আউয়ালের অনুসারী। অবিভক্ত মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মুসা। টিপু হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ওমানে পালিয়ে যাওয়া মুসাকে ফিরিয়েও আনে ডিবি পুলিশ। তার জবানবন্দিও গ্রহণ করা হয়। সম্প্রতি সে ওই হত্যা মামলায় জামিনে বের হয়ে বাবুকে হত্যা করে।

গত ২০ সেপ্টেম্বর মাদক কারবার ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মোহাম্মদপুরে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দুটি অপরাধী চক্রের সংঘর্ষে নাসির বিশ্বাস ও মুন্না হাওলাদার খুন হন। সংঘর্ষে জড়ানো অ্যালেক্স ইমন ও আরমানের অনুসারীরা চুরি-ছিনতাই, মাদক কারবারসহ নানা অপরাধে জড়িত। সম্প্রতি তারা জামিনে বেরিয়ে আবারও একই অপকর্মে জড়িয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ নত ই ন র ঘটন অপর ধ দ এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

তপসিল ঘোষণা, গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি ও নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ

সরকারের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ জোর দিয়ে বলেছিলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সেটা যে হয়নি, শুক্রবার ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাই তার প্রমাণ। তাঁর অবস্থা শঙ্কাজনক। রাজনৈতিকভাবে তিনি যেই মতেরই অনুসারী হোন না কেন, এভাবে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হবেন, এটা ভাবা যায় না।

বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেন। আর শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হলেন শুক্রবার দুপুরে। আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি একযোগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ ও গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তফসিল ঘোষণার পর জনমনে যেই উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা থাকার কথা, সেটি মিইয়ে গেল ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধের ঘটনায়। চারদিকে এখন থমথমে ভাব।

রাজনৈতিক সব পক্ষ থেকে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিবৃতি জানানো হয়েছে। ঢাকা–চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মিছিল বের হয়েছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পরিচিত মুখ হয়ে উঠা ওসমান হাদি এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। সবাই তাঁর ফিরে আসার প্রার্থনা করছেন। 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার সব ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে নিঃসংকোচে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরির ওপরও জোর দিয়েছেন।

কিন্তু এভাবে যদি নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে প্রার্থীকে গুলিবিদ্ধ হতে হয়, তাহলে নির্বাচনটি উৎসবমুখর পরিবেশে হবে কী করে? নির্বাচন সামনে রেখে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরও মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত আছেন।

আরও পড়ুনজাতীয় নির্বাচন ঘিরে শঙ্কা ও সতর্কতাগুলো কী০১ ডিসেম্বর ২০২৫

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এটাই একমাত্র সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা নয়।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১০ মাসে অন্তত ৭৫৬টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। ১১৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৬ হাজার ৯২ জন। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়ণতা, সমাবেশ ঘিরে সহিংসতা, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলের কারণে অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

গত ২৭ নভেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জামায়াতের দাবি, তাদের নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিএনপির লোকজন হামলা করেছেন। বিএনপি বলছে, গ্রামের লোকজন একত্র হয়ে জামায়াতের লোকজনকে ধাওয়া দিয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান। জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের আমির আবু তালেব মণ্ডল। উপজেলার চরগড়গড়ি গ্রামে কয়েক দিন ধরেই দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলছিল।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে ইতিহাসের সেরা ও স্মরণীয় নির্বাচন করা দূরে থাক, মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাও কঠিন হবে। প্রশাসনে এখন নানামুখী ধারা চলছে। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের আওতায় চলে গেলেও এর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর জনসংযোগে গুলি চালানো ব্যক্তি এক মাসেও শনাক্ত হয়নি। নেতা-কর্মীদের ভিড়ের মধ্যে খুব কাছ থেকে গুলি করে একজনকে খুন ও বিএনপি প্রার্থীকে আহত করার এ ঘটনায় প্রশিক্ষিত কোনো শুটার জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

গত ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার খন্দকারপাড়া এলাকায় নির্বাচনী জনসংযোগে গুলির করার এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে থাকা ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন ওই আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহসহ আরও পাঁচজন।

২৩ নভেম্বর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। আমরা যখন দায়িত্ব নিয়েছি, তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির মধ্যেই ছিল। আমাদের গত দেড় বছরের প্রচেষ্টায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।’ সরকার দেড় বছরে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি দেখলেও মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কেবল রাজনৈতিক হানাহানি বাড়ছে না, বাড়ছে সামাজিক অপরাধও।

আরও পড়ুনপ্রশাসন ও পুলিশের দুর্বল অবস্থার কারণে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দেখি২১ অক্টোবর ২০২৫

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে ইতিহাসের সেরা ও স্মরণীয় নির্বাচন করা দূরে থাক, মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাও কঠিন হবে। প্রশাসনে এখন নানামুখী ধারা চলছে। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের আওতায় চলে গেলেও এর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই।

ডিসি, এসপি, ইউএনওরা নির্বাচন কমিশনের চেয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপরই বেশি নির্ভরশীল। সে ক্ষেত্রে যে দলের প্রভাব ও ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা, বেশি তাদেরই সমীহ করেন। ‘প্রশাসন আমাদের কথায় ওঠবস করবে’, এ কথা বলে জামায়াতের এক নেতা বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন। মনে মনে সব দলের সব নেতাই এ রকম মনোভাব পোষণ করেন। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা কঠিন। আবার তারা ভিন্নচিন্তাও করতে পারছেন না।

এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ১৬ মাসের নীরবতা ভাঙলেন। বঙ্গভবন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি সরে যেতে চাই। আমি চলে যেতে আগ্রহী।’ তবে রাষ্ট্রপতি এ কথাও যুক্ত করেন যে  ‘নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমার দায়িত্ব পালন করে যাওয়া উচিত। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতির পদে থাকায় আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।’

আরও পড়ুনবাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান কী০৭ নভেম্বর ২০২৫

রাষ্ট্রপতির অভিযোগ, প্রায় সাত মাস হয় অধ্যাপক ইউনূস তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। তাঁর জনসংযোগ বিভাগ নিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে তাঁর ছবি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

কনস্যুলেট, দূতাবাস ও হাইকমিশন অফিসে রাষ্ট্রপতির যে ছবি ছিল, গত সেপ্টেম্বরে সেটিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি রয়টার্সকে বলেন,  হঠাৎ এক রাতেই সেগুলো উধাও করে ফেলা হয়েছে। এতে মানুষের কাছে একটি ভুল বার্তা গেছে যে সম্ভবত রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি খুবই অপমানিত বোধ করেছিলাম।’ প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলার বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূসকে তিনি লিখিতভাবে বলেছেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলনও করেছে। একবার বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা কখনো রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে মানতে পারেননি। তাঁর পদত্যাগের দাবিতে বহুবার আন্দোলন হয়েছে। একবার  বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করে কয়েকটি সংগঠন। কয়েকটি রাজনৈতিক দলও তাঁর অপসারণের পক্ষে ছিল। কিন্তু বিএনপি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার কারণে নতুন রাষ্ট্রপতি না আসা পর্যন্ত তাঁকে রেখে দেওয়ার কথা বলে আসছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হলে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সুযোগও তৈরি হবে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতজন রাষ্ট্রপতি এসেছেন, তাঁদের মধ্যে দুজন নিহত হয়েছেন সেনা অভ্যুত্থানে। দুজন দণ্ডিত হয়েছেন আদালতে। আবার ক্ষমতাসীনদের বিরাগভাজন হয়ে অসম্মানজনক পথে বিদায় নিতে হয়েছে কাউকে কাউকে। জুলাই সনদের সাংবিধানিক আদেশ কার নামে হবে, সে নিয়েও বিতর্ক উঠেছিল। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার আদেশ আদালতে চ্যালেঞ্জ হবে, এই বিবেচনা থেকে  সেটাও বাদ দিতে হয়। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির নামেই আদেশ জারি হয়। যেমন আওয়ামী লীগ সরকার বিতাড়িত হওয়ার পর তাঁর নামেই সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল।

সোহরাব হাসান সাংবাদিক ও কবি

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ওসমান হাদির ওপর আঘাত মানে জুলাইয়ের ওপর আঘাত: নুরুল হক
  • ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ঐক্যবদ্ধ থাকতে: সালাহউদ্দিন
  • আওয়ামী লীগ যাঁদের টার্গেট করেছে, গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি তাঁদের অন্যতম: রাশেদ খান
  • প্রাইম সাসপেক্টকে খুঁজছি, হোপফুলি হিট করতে পারব: ডিএমপি কমিশনার
  • পরিস্থিতির উন্নতির জন্য নির্বাচন হতেই হবে
  • তপসিল ঘোষণা, গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি ও নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ
  • স্কুলছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য বরখাস্ত
  • লিবিয়ায় তিন বাংলাদেশিকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবি
  • ৭ বছরের শিশুর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা, পাঁচ দিন পর বাবার বুকে ফিরল শিশুটি