ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়ায় সমন্বয়ক পরিচয়ে ঘরে ঢুকে তল্লাশি করার অভিযোগে পাঁচ জনকে আটক করেছে গ্রামবাসী। পরবর্তীতে মুচলেকা নিয়ে তাদের থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে লেমুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আটকরা হলেন- ফেনী পৌরসভার বারাহীপুর ভূঁইয়া বাড়ির এনামুল হক বাবু, শান্তিধারা এলাকার আবদুল্লাহ আল ওহি, ডাক্তারপাড়া এলাকার জিহাদ হাসান প্রান্ত, সদর উপজেলার ফাজিলপুর এলাকার শাহরিয়ার ইসলাম আলভি ও চাড়িপুর এলাকার শাহাদাত হোসেন। তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিল। 

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা মমিন ভূঞা ঢাকায় ব্যবসা করেন। বিগত সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। তবে কোনো পদ-পদবি বা মামলার আসামির তালিকায় তার নাম নেই। গত শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাড়ি ফেরেন তিনি। পরবর্তী অনুষ্ঠান শেষে আবার তিনি ঢাকায় ফিরে যান। 

সোমবার রাতে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে পাঁচজন মমিনের ঘরে ঢুকে তল্লাশি শুরু করেন। এসময় ঘরে থাকা নারী ও শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে এসে তাদের আটক করে পুলিশে খবর দেন। 

সমাজ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি আলী মনছুর সুমন বলেন, “মমিন ভূঞা আমাদের সমাজের সভাপতি। তার বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের কথা বলে সমন্বয়ক পরিচয়ে এখানে এসে তারা চাঁদাবাজির চেষ্টা করেছে। শুরুতে পরিবারের সদস্যরা দরজা খুলতে না চাইলেও তারা সেনাবাহিনীর লোকজন নিয়ে এসেছেন বলে দরজা খুলতে বাধ্য করেন।”

লেমুয়া ইউনিয়ন জামায়াতের আমির কামরুল ইসলাম বলেন, “মমিন আওয়ামী লীগের সমর্থক হলেও কখনো পদ-পদবিতে ছিলেন না। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ। কিন্তু রাতে হঠাৎ তারা এসে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ঘরে ঢুকে তল্লাশি করেন। যদি কোনো অপরাধীকেও এভাবে আটক করতে হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছেন। প্রয়োজনে সেখানে তারা (সমন্বয়ক) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতে পারেন। মূলত এখানে তারা চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে এসেছেন। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আটক করে বোগদাদিয়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছি।” 

এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের থানায় নিয়ে আসে। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত অবগত হয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”

ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/এন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এল ক র

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লা পুলিশের সহায়তায় আপন ঠিকানায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারী
  • দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩