ফেনীতে সমন্বয়ক পরিচয়ে ঘরে ঢুকে তল্লাশি, আটক ৫
Published: 25th, February 2025 GMT
ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়ায় সমন্বয়ক পরিচয়ে ঘরে ঢুকে তল্লাশি করার অভিযোগে পাঁচ জনকে আটক করেছে গ্রামবাসী। পরবর্তীতে মুচলেকা নিয়ে তাদের থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।   
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে লেমুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আটকরা হলেন- ফেনী পৌরসভার বারাহীপুর ভূঁইয়া বাড়ির এনামুল হক বাবু, শান্তিধারা এলাকার আবদুল্লাহ আল ওহি, ডাক্তারপাড়া এলাকার জিহাদ হাসান প্রান্ত, সদর উপজেলার ফাজিলপুর এলাকার শাহরিয়ার ইসলাম আলভি ও চাড়িপুর এলাকার শাহাদাত হোসেন। তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিল।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা মমিন ভূঞা ঢাকায় ব্যবসা করেন। বিগত সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। তবে কোনো পদ-পদবি বা মামলার আসামির তালিকায় তার নাম নেই। গত শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাড়ি ফেরেন তিনি। পরবর্তী অনুষ্ঠান শেষে আবার তিনি ঢাকায় ফিরে যান।
সোমবার রাতে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে পাঁচজন মমিনের ঘরে ঢুকে তল্লাশি শুরু করেন। এসময় ঘরে থাকা নারী ও শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে এসে তাদের আটক করে পুলিশে খবর দেন।
সমাজ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি আলী মনছুর সুমন বলেন, “মমিন ভূঞা আমাদের সমাজের সভাপতি। তার বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের কথা বলে সমন্বয়ক পরিচয়ে এখানে এসে তারা চাঁদাবাজির চেষ্টা করেছে। শুরুতে পরিবারের সদস্যরা দরজা খুলতে না চাইলেও তারা সেনাবাহিনীর লোকজন নিয়ে এসেছেন বলে দরজা খুলতে বাধ্য করেন।”
লেমুয়া ইউনিয়ন জামায়াতের আমির কামরুল ইসলাম বলেন, “মমিন আওয়ামী লীগের সমর্থক হলেও কখনো পদ-পদবিতে ছিলেন না। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ। কিন্তু রাতে হঠাৎ তারা এসে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ঘরে ঢুকে তল্লাশি করেন। যদি কোনো অপরাধীকেও এভাবে আটক করতে হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছেন। প্রয়োজনে সেখানে তারা (সমন্বয়ক) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতে পারেন। মূলত এখানে তারা চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে এসেছেন। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আটক করে বোগদাদিয়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছি।”
এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের থানায় নিয়ে আসে। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত অবগত হয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/এন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক