গত ১৫ বছর ছিল ‘মানবাধিকার সংকটের ভয়াবহ সময়’
Published: 10th, December 2025 GMT
একাত্তরের পর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন ছিল, তা পূরণ হয়নি। গত ১৫ বছর ছিল মানবাধিকার সংকটের ভয়াবহ সময় এবং ’২৪–এর গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও তা পুরোপুরি বদলায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ছাত্রলীগের মাধ্যমে ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে’ পরিণত করা হয়েছিল। সেখান থেকে পরিবর্তনের এই পথে নারীদের উপস্থিতি অপরিহার্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার অডিটরিয়ামে ডাকসুর উদ্যোগে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় গুম কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন বলেন, পূর্বে ছাত্রসংগঠনগুলোর নির্যাতনের ফলে ছাত্রদের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে; এসব ঘটনা পরিবর্তন করাই ডাকসুর দায়িত্ব। তিনি বলেন, অতীতে বহু মানুষ র্যাব তুলে নেওয়ার পর নিখোঁজ হয়েছেন। বহু পরিবার ভয়ে পথ চলতে পারেনি; অনেকে চোখের সামনে প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, গুমের ঘটনা ভুলে গেলে চলবে না, কমিশন প্রতিটি ঘটনার সত্য উদ্ঘাটনে কাজ করছে।
গুম কমিশনের সদস্য ও বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত নাবিলা ইদ্রীস গুমের শিকার ভুক্তভোগীদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, অনেককে ইলেকট্রিক শক পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। ফলে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নাবিলা ইদ্রীস ছাত্ররাজনীতি সংশ্লিষ্ট টর্চার ও গেস্টরুম সংস্কৃতির প্রতিটি ঘটনা নথিবদ্ধ করার পরামর্শ দেন। নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবর্তনের পথে নারীদের উপস্থিতি অপরিহার্য।’
গুমের শিকার ব্যারিস্টার আহমেদ বিন মীর কাশিম (আরমান) বলেন, শত শত পরিবার এখনো জানে না তাদের প্রিয়জন জীবিত না মৃত, রাষ্ট্র তাদের জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, গুম একটি জাতীয় ক্ষত, যা থেকে মুক্তি পেতে প্রথম শর্ত হলো কঠোর জবাবদিহি।
গুমের ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর পুনর্বাসনকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করেন আহমেদ বিন মীর কাশিম। তিনি বলেন, হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প করা সম্ভব হলেও গুম পূর্ববর্তী পরিবারগুলোর আর্থিক নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্র কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের মিশনপ্রধান (ভারপ্রাপ্ত) হুমা খান বলেন, মানবাধিকার কোনো কঠিন বা জটিল বিষয় নয়। এটি খুব সহজভাবে বলা যায়, মানুষ হিসেবে সবাই সমান অধিকার পাবে, তাদের ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ, রং বা শ্রেণি যা–ই হোক না কেন।
হুমা খান আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান জনগণের সেবায় নিয়োজিত হওয়ার কথা, কারণ জনগণের ট্যাক্সের অর্থেই তাদের বেতন চলে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও জনগণের সেবক—শাসক নন। আমাদের এই মানসিক পরিবর্তন আনতে হবে এবং তরুণ প্রজন্মই এ পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে পারে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের প্রতি আমার গভীর প্রত্যাশা, আপনারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তুলবেন, যা ন্যায়বিচার, সমতা ও পারস্পরিক সম্মান এই তিন মূলনীতির ওপর দাঁড়াবে।’
ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম বলেন, ‘যাঁরা মানবাধিকারকর্মীর নামে গুম–খুন এবং দমননীতিকে বৈধতা দিয়েছিলেন, তাঁরা “জাতির শত্রু”। তাঁদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। নতুন বাংলাদেশেও কিছু দল পুরোনো দমন নীতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।’ তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ হবে সব মানুষের অধিকার ও ইনসাফের দেশ, যেখানে গুম–টর্চার থাকবে না।
ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ বলেন, ৭১-এর পর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন ছিল, তা পূরণ হয়নি। গত ১৫ বছর ছিল মানবাধিকার সংকটের ভয়াবহ সময় এবং ২০২৪–পরবর্তী সময়েও তা পুরোপুরি বদলায়নি। তিনি বলেন, শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়—ব্যক্তি পর্যায় থেকে অন্যের অধিকার রক্ষার অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম নব ধ ক র পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
জামায়াত ধর্মকে ব্যবহার করে বিভা সহিংসতার রাজনীতি উসকে দিচ্ছে: এনসিপি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিভাজন, ঘৃণা ও সহিংসতার রাজনীতি উসকে দিচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি।
দলটি বলছে, ৫ আগস্ট-পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে গ্রহণ করার পরিবর্তে জামায়াত পুরনো সহিংস ও আধিপত্যবাদী রাজনীতির পথে ‘নতুন খেলোয়াড়’ হিসেবে আবির্ভূত হতে চাচ্ছে, যা দেশের জন্য অশুভ সংকেত।
আরো পড়ুন:
কোটালীপাড়া জামায়াতের হিন্দু শাখার ৯ নেতাকর্মীর পদত্যাগ
জামায়াত দায়িত্ব পেলে ইসলামের ভিত্তিতে রাষ্ট্র চালাবে: এটিএম আজহারুল
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব ও মিডিয়া সেল সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে এনসিপি জানায়, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেনকে উদ্দেশ্য করে ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যে অসত্য, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর বিবৃতি দিয়েছে, এনসিপি তা প্রত্যাখ্যান করছে এবং এর বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও কঠোর প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
জামায়াতের এই বিবৃতি বাস্তবতাবিবর্জিত, রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং জনমত বিভ্রান্ত করার স্পষ্ট অপচেষ্টা।
এতে বলা হয়েছে, ৬ ডিসেম্বর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ন্যাশনাল প্রফেশনালস অ্যালায়েন্স (এনপিএ)-এর আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এনসিপি সদস্য সচিব আখতার হোসেন সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার প্রমাণনির্ভর যে মন্তব্য করেন, তা সম্পূর্ণ তথ্যসম্মত ও দায়িত্বশীল। ২৭ নভেম্বর পাবনার ঈশ্বরদী থানায় নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে গুলি চালানো তুষার মণ্ডল যে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী, তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে এবং অস্ত্র-গুলিসহ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এমন স্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বাস্তবতা অস্বীকার করা সত্য গোপন ও দায় এড়ানোর নিন্দনীয় অপচেষ্টা ছাড়া অন্য কিছু নয়।
এনসিপি মনে করে, জামায়াতে ইসলামী ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিভাজন, ঘৃণা ও সহিংসতার রাজনীতি উসকে দিচ্ছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে গ্রহণ করার পরিবর্তে তারা পুরনো সহিংস ও আধিপত্যবাদী রাজনীতির পথে ‘নতুন খেলোয়াড়’ হিসেবে আবির্ভূত হতে চাচ্ছে, যা দেশের জন্য অশুভ সংকেত।
এনসিপি পরিষ্কারভাবে জানাচ্ছে, সহিংসতা, অস্ত্রনির্ভরতা ও ধর্মের অপব্যবহার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিপন্থী। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল আচরণ অপরিহার্য।
জাতীয় নাগরিক পার্টি জামায়াতে ইসলামীকে সত্য, শান্তি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পক্ষে সুস্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
ঢাকা/রায়হান/সাইফ