মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর মাঝপাড়া সীমান্ত দিয়ে ১৫ জনকে ঠেলে (পুশব্যাক) বাংলাদেশে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।

যাঁদের ঠেলে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে তাঁরা হলেন পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামের শিবাস হালদার (৫০), তাঁর ছেলে হরিদাস হালদার (২৪), চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার হরিশপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (২০), নরেন্দ্রপুর থানার আক্কাস আলী (২৮), রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সারেংপুর গ্রামের শাহিন আলী (২৭), চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের কাজীব আলী (২৩), হরিশপুর গ্রামের আবদুল্লাহ (২৭), পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বালিয়াপাড়া গ্রামের ইসাহাক আলী, তাঁর ছেলে আজিল আলী (৪৫), কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা-১৬ নম্বর ক্যাম্পে বসবাস করা তরুণ রিয়াজ (২৪)। বাকি পাঁচজনের নাম প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি।

সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলো বলেন, ২০১৮ সালের শুরুর দিকে দালালের খপ্পরে পড়ে সংযুক্ত আরব-আমিরাতে যাওয়ার লক্ষ্যে ভারতে যান তিনি। ভারতের তামিলনাড়ুতে একটি বহুতল ভবন নির্মাণকাজে লাগিয়ে দালাল চক্র লাপাত্তা হয়ে যায়। এর পর থেকে সেখানে অল্প বেতনে কাজ করছিলেন। গত বছরে জুলাই মাসে ভারতীয় পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। এর পর থেকে তিনি ভারতে কারাবন্দী ছিলেন।

মুজিবনগর থানার পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে ওই ব্যক্তিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছিল। সাজা ভোগ শেষে তাঁদের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর কারাগার থেকে নদিয়া জেলার হৃদয়পুর সীমান্ত দিয়ে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মুজিবনগরের নাজিরাকোনা সীমান্ত দিয়ে ঠেলে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। সীমান্ত পার হয়ে এসে তাঁরা মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করেন। পরে আজ বুধবার সকালে বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে নিজ নিজ গন্তব্যের পথে রওনা হন তাঁরা। বিষয়টি পুলিশ টের পাওয়ার আগেই তাঁরা সীমান্ত এলাকা ছেড়ে চলে যান। তবে তাঁদের ধরতে পুলিশ এলাকায় তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে।

আজিল আলী বলেন, একটু ভালো বেতনের আশায় কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে ছেলেসহ ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজও করেছেন। হঠাৎ একদিন পুলিশ এসে তাঁদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এর পর থেকে তাঁরা কারাগারে ছিলেন।

মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ১৫ জনের একটি দলকে বিএসএফ সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। এলাকায় তল্লাশি চলছে। যে কয়জনের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে, তাঁদের এলাকার সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম জ বনগর উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে আটক ১৯ জেলে ৯৭ দিন পর বাড়ি ফিরলেন

ভোলার সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ১৯ জেলে ৯৭ দিন ভারতে আটক থাকার পর দেশে ফিরেছেন। গত বুধবার রাতে তাঁরা নিজ নিজ বাড়ি ফিরেছেন।

দেশে ফেরত জেলেরা বলছেন, সাগরে মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে ঝড়ে দিগ্ভ্রান্ত হয়ে তাঁদের বহনকারী ট্রলার ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে যায়। পরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাঁদের আটক করে।

দেশে ফেরা জেলেরা হলেন সফিজল ব্যাপারী (মাঝি), শাহে আলম, ছিডু মুন্সি, রাজীব চন্দ্র দাস, আক্তার হোসেন, মিন্টু হাওলাদার, মো. ফরিদ, মো. আলমগীর, মোহাম্মদ ফরিদ, মো. ইউনুছ, মো. বাবুল সরদার, মো. নিরব হোসেন, মো. ইসমাইল, মো. শাহ আলম হাওলাদার, গৌতম চন্দ্র দাস, জাকির হোসেন, সগির সিকদার, মো. টুটুল ও শহীদুল ইসলাম। তাঁরা সবাই ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

জেলে ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, ৫ সেপ্টেম্বর শান্তির হাট ঘাট এলাকা থেকে একটি মাছ ধরার নৌকা নিয়ে বঙ্গোপসাগরে যান ওই জেলেরা। মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে ঝড়ে দিক হারিয়ে তাঁরা ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করেন। বিএসএফ তাঁদের আটক করে সুন্দরবনের কোস্টাল থানায় হস্তান্তর করে। সেখান থেকে তাঁদের আলীপুর সদর ও পরে বারাইপুর জেলে পাঠানো হয়। দুই দেশের সরকারের সিদ্ধান্তে বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বাউন্ডারিতে হস্তান্তরের পর পশ্চিমাঞ্চলীয় কোস্টগার্ডের সহায়তায় বুধবার সন্ধ্যায় মোংলা বন্দরে পৌঁছান তাঁরা। পরে দিবাগত রাত দুইটার দিকে নিজ নিজ বাড়িতে ফেরেন।

জেলেরা ফিরলেও মাছ ধরার নৌকাটি ফেরত দেওয়া হয়নি দাবি করেন সফিজল মাঝির ছেলে হোসাইন স্বাধীন। তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ টাকা মূল্যের ফিশিং বোটটি ফেরত পাইনি। নৌকাটি না পেলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।’

আরও পড়ুনবঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার বিকল, ভোলার ১৯ জেলে ভারতের কারাগারে২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জেলে মো. শাহে আলম বলেন, সাগর থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ পাওয়া গিয়েছিল। ভারতীয় প্রশাসন মাছসহ ফিশিং বোট নিয়ে গেছে।

ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওই জেলেদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছেন বলে দাবি করেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী ও জেলে সমিতির ভোলা সদর উপজেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মামুন শেখ। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেন আর কোনো জেলেকে এভাবে নির্যাতন না করা হয়, সেই অনুরোধ জানাই।’

আরও পড়ুনসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ১২ দিন ধরে ১৫ জেলে নিখোঁজ২২ নভেম্বর ২০২৫

আল মামুন শেখ বলেন, জেলেরা আটক হওয়ার খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবারের কাছ থেকে সব কাগজপত্র সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ফলে দীর্ঘ ৯৭ দিন পর কোস্টগার্ডের সহায়তায় ওই জেলেরা দেশে ফিরেছেন।

কোস্টগার্ড সূত্রে জানা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে বন্দিবিনিময়ের সিদ্ধান্ত হলে বাংলাদেশ ৪৭ ভারতীয় জেলেকে ও ভারত ৩২ বাংলাদেশি জেলেকে ফেরত দেয়।

ভোলা সদর ইউএনও মো. আরিফুজ্জামান বলেন, সাধারণত এ ধরনের ঘটনায় জেলেদের ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে ৯৭ দিনের মাথায় তাঁরা ফিরেছেন। আটক থাকা অবস্থায় তাঁদের পরিবারগুলোকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

আরও পড়ুনভোলায় সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ১৩ জেলে ভারতের কারাগারে বন্দী০১ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবকের লাশ হস্তান্তর
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বাংলাদেশির লাশ ফেরত দিল বিএসএফ
  • ভারতে আটক ১৯ জেলে ৯৭ দিন পর বাড়ি ফিরলেন