১০ মাসের কাজে ৪ বছর পার, অর্ধেক অসমাপ্ত
Published: 27th, February 2025 GMT
কলমাকান্দা উপজেলায় তিন দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও গজারমারী থেকে খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হয়নি। ১০ মাসের কাজ প্রায় চার বছর চলে গেলেও এখন পর্যন্ত অর্ধেক কাজ বাকি। ভাঙাচোরা সড়ক দিয়েই হেলেদুলে চলছে যানবাহন। সড়কের সেতুগুলোর কাজও শেষ হয়নি। ফলে স্থানীয়রা সেতুর ওপর বাঁশের চাটাই দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও ঠিকাদারের সীমাহীন গাফিলতির কারণে এমনটা হচ্ছে। তবে উপজেলা প্রকৌশলীর দাবি, দ্রুত কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের তথ্যমতে, গজারমারী থেকে খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ পায় মেসার্স বিলকিছ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ব্যয় ধরা হয় ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮২ টাকা। ২০২১ সালের ৮ এপ্রিল কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এ কারণে সময় বাড়ানো হয় তিন দফায়। সে অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৩০ আগস্ট কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও বাকি রয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুরু থেকেই সড়কে ঢিমেতালে কাজসহ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেন ঠিকাদার। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয়নি।
খারনৈ এলাকার বাসিন্দা রহমত আলী বলেন, ঠিকাদার সড়ক সংস্কারে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়েঅর্ধেক কাজ বাকি রেখে পালিয়ে গেছেন। স্থানীয়রা বারবার প্রতিবাদ করলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, সড়ক সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে। যানবাহন চলাচল করায় আশপাশের এলাকা ধুলায় ছেয়ে যাচ্ছে। ধুলা থেকে কিছুটা রক্ষা পেতে ইজিবাইক, অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে থাকা যাত্রীরা নাক-মুখ ঢেকে রেখেছেন।
সড়কের বিভিন্ন অংশে ইটের খোয়া উঠে গেছে। অনেক জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে বেশ কিছু গর্ত। তা ছাড়া সড়কের সেতুগুলোর কাজও শেষ হয়নি। ফলে স্থানীয় লোকজন সেতুর ওপর বাঁশের চাটাই দিয়ে চলাচল করছে।
গজারমারী গ্রামের আবুচান বলেন, ‘১০ মাসের কাজ চার বছর হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। এই সড়কে চলাফেরা করতে গেলে ধুলায় কাপড়চোপড় ময়লা হয়ে যায়। কোনো যানবাহনও সহজে যেতে চায় না। গেলে বেশি ভাড়া দিতে হয়। এই সড়ক দিয়ে খারনৈ, লেংগুরা ও নাজিরপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রতিদিন অন্তত ২০ হাজার মানুষ চলাচল করে।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শামসুদ্দীন হায়দারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
তবে কলমাকান্দা উপজেলা প্রকৌশলী মমিনুল ইসলাম বলেন, এই সড়কের সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। ঠিকাদার কয়েক দিনের মধ্যে আবারও কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন। না করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ষ হয়ন সড়ক র স ই সড়ক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।