নওগাঁ শহরের বাসাবাড়ির বর্জ্য ছোট যমুনায়, বাড়ছে দূষণ, ঝুঁকিতে জলজ প্রাণী
Published: 27th, February 2025 GMT
পচা ও উচ্ছিষ্ট খাবার এবং গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনা স্তূপ হয়ে আছে নদীর পাড়ে। স্তূপে প্লাস্টিকের খালি বোতল থেকে শুরু করে পলিথিনসহ বিভিন্ন ধরনের অপচনশীল নানা সামগ্রী আছে। এসব বর্জ্য নদীর পানিতে পড়ে পানি দূষিত হচ্ছে। ময়লার স্তূপের পাশেই ঘাট। ঘাটে থালাবাটি পরিষ্কার করছিলেন এক গৃহবধূ। সম্প্রতি নওগাঁর ‘হৃৎপিণ্ড’ নামে পরিচিত ছোট যমুনা নদীর পারঘাটি এলাকায় গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।
শুধু পারঘাটি এলাকায় নয়, নওগাঁ শহরের অন্তত ২৫টি স্থানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা ও বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীর তীরে। এর ফলে নদীর পানি কালো হয়ে পড়েছে। আশপাশে মশা-মাছি উড়ছে। নদীতীরের বাসিন্দারা পড়েছেন দুর্ভোগে।
পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ছোট যমুনা নদীর তীরে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও বাসিন্দাদের অসচেতনতার কারণে নদীটি দূষিত হচ্ছে। বর্জ্য ফেলার কার্যক্রম বন্ধ করা না হলে দূষণ আরও ভয়াবহ হবে।
নওগাঁ শহরের পারঘাটি ধোপাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মিলন চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘শহরের অন্যান্য এলাকায় বাসাবাড়ি থেকে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা-আবর্জনা নিয়ে যান। কিন্তু আমাদের এলাকায় বাসাবাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা নেওয়া হয় না। এ ছাড়া আশপাশে ডাস্টবিনও নেই। ফলে বাধ্য হয়ে বাসাবাড়ির বর্জ্য নদীর তীরে গিয়ে ফেলছেন বাসিন্দারা।’
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, শহরের ডিগ্রি কলেজ, পারঘাটি, শিবপুর, আলুহাটি, লিটন ব্রিজ, কালিতলাসহ অন্তত ২৫টি ঘাটসংলগ্ন নদীর তীরে বাসাবাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও কারখানার বর্জ্য ফেলে দূষণ করা হচ্ছে। অনেক স্থানে নদীর বাঁধ থেকে নদীর ভেতরের অংশে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, চালকল গড়ে তোলা হচ্ছে। এগুলো থেকে বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া বাসাবাড়ির শৌচাগার থেকে বর্জ্য নালা দিয়ে নদীতে পড়ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ থেকে নজরদারি এবং পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকায় এমন দূষণ চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হয়েছে ছোট যমুনার পাড়ে। সম্প্রতি নওগাঁ শহরের পারঘাটি এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব স ব ড় র বর জ য বর জ য ফ ল এল ক য় শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।