জুলাই আন্দোলনে নিহতদের ৮৭ শতাংশ গুলিতে: এমএসএফ
Published: 27th, February 2025 GMT
জুলাই আন্দোলনকারীদের মধ্যে প্রায় ৮৭ শতাংশ মানুষ গুলির আঘাতে মারা গিয়েছেন বলে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) নামের এক সংস্থার জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জুলাই আন্দোলনে মোট ১২ হাজার ৪৩৫ জন আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্য ওপর এই জরিপ চালানো হয়। জরিপে ৮৮১ জন নিহতের তথ্য উঠে আসে। তাদের মধ্যে ৭৬৫ জন (৮৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ) গুলির আঘাতে ও ৬৯ জন (৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ) পুড়ে মারা যান। এছাড়া ৪৫ জনকে (৫ দশমিক ১১ শতাংশ) পিটিয়ে মারা হয়। অন্যদিকে, ১ জন ( দশমিক ১১ শতাংশ) ছুরিকাঘাত এবং ১ জন ( দশমিক ১১) ইটের আঘাতে মারা গেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনায় ‘হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশনস স্টাডি রিপোর্ট’ শীর্ষক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উঠে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন তুলে ধরেন এই জরিপের প্রকল্প সমন্বয়ক নূরুননবী শান্ত। তিনি জানান, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সারাদেশে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
জরিপে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ৬৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া শ্রমিক ১৮ দশমিক ৬২ শতাংশ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ, বেসরকারি চাকরিজীবী ২ দশমিক ৬১ শতাংশ, কৃষক ১ দশমিক শুন্য ২ শতাংশ, শিক্ষক দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং ডাক্তার দশমিক ৫৭ শতাংশ মারা গেছেন। বাকিরা বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ছিলেন।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিহত, আহত, নির্যাতন, হুমকি, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট, সনাতন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, নিখোঁজ, মন্দির ও মাজারে আক্রমণের শিকার হয় ১১ হাজার ৩৪৮ জন। সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৮৭৩, হুমকির শিকার ৯৩৩ জন, নির্যাতনের শিকার ৭৩১ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন ৫৪ জন।
৫ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৮৭৬টি, যার মধ্যে অগ্নিসংযোগ ৩৩৩, ভাঙচুর ও লুটপাট ৩০০, সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি আক্রমণ ২২৩, মন্দির ও মাজারে আক্রমণের ঘটনা ২০টি।
এমএসএফের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট মো.
অনুষ্ঠানের সালমা আলী বলেন, জুলাই আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা কোনোভাবেই খাটো করে দেখা যাবে না। যথাযথভাবে ভূক্তভোগীদের জন্য সাপোর্ট সার্ভিসের ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশের পুনর্বিন্যাস করে পুলিশকে নারীবান্ধব করতে হবে। প্রচার ও প্রসারে সাংবাদিকদের উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সাইদুর রহমান বলেন, আগের যে কোনো গণঅভ্যুথান থেকে এবারের ঘটনা সম্পূর্ণ আলাদা। নিহত ৮৮১ নিহতের মধ্যে মাত্র ৩০০ জনের স্বজনেরা মামলা করেছেন। মামলা না করার কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, অজানা ভয় ও হুমকির কারণে তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। পূর্বের অসংঙ্গতি সমস্যগুলো এখনও বিরজমান রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন আগস ট র ঘটন দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।