৩৩ বছর সংসারের পর স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি, পরে ঘটে হয়রানি, ছিলেন কারাবন্দী
Published: 27th, February 2025 GMT
জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নাক, কান ও গলা রোগ বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. সালেহ উদ্দিন সাঈদ আজ ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ব্যাপকভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেছেন।
অধ্যাপক সালেহ উদ্দিন জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শামছুন্নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মমতাজ বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের ২৩ বছর পর ২০১১ সালে তাঁদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। বিবাহবিচ্ছেদের এক বছর পর সালেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করেন মমতাজ বেগম। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন তিনি।
শুধু যৌতুকের মামলা নয়, বিবাহবিচ্ছেদের পর মমতাজ বেগম ও তাঁর ভাই ফরিদ আহমেদ তাঁর বিরুদ্ধে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করেন বলে জানান সালেহ উদ্দিন। তিনি অভিযোগ করেন, সর্বশেষ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় বিএনপি নেতা ও আন্দোলনকারীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাঁকে তুলে নিয়ে সাত দিন গুম করে রাখে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন অধ্যাপক সালেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, বিবাহবিচ্ছেদের পর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে ‘দাল্লা মেডিকেল সেন্টার’ নামের প্রতিষ্ঠানটি জোর করে দখল করে নেন মমতাজ বেগম ও তাঁর ভাই ফরিদ আহমেদ। ফরিদ চট্টগ্রামের মাদারবাড়ি এলাকার একটি ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা।
সাবেক স্ত্রী ও তাঁর ভাই মিলে চেক প্রত্যাখ্যানের যে মামলা করেছিলেন, সেই মামলায় তাঁর সাজা হয়েছে বলে জানান সালেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
সাবেক স্ত্রীর বিরুদ্ধে সরকারি জমি দখলের অভিযোগ তুলে অধ্যাপক সালেহ উদ্দিন বলেন, মমতাজ বেগম তাঁর স্ত্রী থাকা অবস্থায় ২০০৫ সালে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে অবস্থিত মেসার্স এস.
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সালেহ উদ্দিন জানান, তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে। তাঁর ছেলে বিয়ে করে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। মেয়েও সেখানে চাকরি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ ও চিকিৎসক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে ইকতেদার আহমেদ বলেন, ‘বিচ্ছেদের পর যৌতুকের মামলা আইনগতভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। তারপরও সেই মামলায় তাঁর সাজা হয়েছে। মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। আশা করছি, তিনি সেখানে প্রতিকার পাবেন।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব চ ছ দ র পর আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।