শেওড়াপাড়ায় কারও পুড়েছে রোজায় আনা পণ্য, কারও মাছ, কারও হাঁস-মুরগি
Published: 28th, February 2025 GMT
পবিত্র রমজান মাসের জন্য দোকানে পণ্য এনেছিলেন মুদিদোকানি শাহ আলম। আগুন লাগার খবরে গভীর রাতে বাসা থেকে ছুটে এসে দেখেন, দোকানে আগুন জ্বলছে। চোখের সামনে নিমেষেই দোকানের সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল।
আজ শুক্র ও আগামীকাল শনিবার রোজা উপলক্ষে দোকানে বিক্রি বেশি হবে, এমন আশায় চিড়া, মুড়ি, গুড়, কলা এনেছিলেন দোকানি জয়নাল আবেদিন। কিন্তু আগুনে সব পুড়ে গেছে।
শুধু দোকানি শাহ আলম ও জয়নাল আবেদিনই নন, মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়া মেট্রোরেলের পাশে অলি মিয়ার কাঁচাবাজারে মুদি, বাটা শোরুম, বৈদ্যুতিক দোকান, ফল, সবজি মুরগি ও মাছসহ শ খানেক দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফায়ার সার্ভিস বলেছে, আগুনে ৬০টির বেশি দোকান পুড়ে গেছে।
মাছ বিক্রেতা ফিরোজ মিয়া জানান, তাঁর দোকানে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার মাছ পুড়ে গেছে। আরেক মাছ বিক্রেতা জসিম উদ্দিন জানান, তাঁর দোকানের ৫০ হাজার টাকার মাছ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ সূত্র জানায়, গতকাল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে পশ্চিম শেওড়াপাড়া কাঁচাবাজারে আগুন লাগে। মুহূর্তে আগুন গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা একের পর এক দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আগুন দোতলার বৈদ্যুতিক দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। কাঁচাবাজারের সামনের ফুটপাত ঘেঁষে গড়ে ওঠা ফলের দোকানেও আগুন ধরে যায়।
বাজারের ভেতরে অন্তত ২০টি হাঁস–মুরগির দোকান ছিল। আগুন সেখানে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হলে আটটি ইউনিট আগুন নেভাতে অংশ নেয়। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তাঁরা আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়।
জানা যায়, আগুনে কয়েক শ হাঁস–মুরগি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
আজ সকালে যোগাযোগ করা হলে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্তব্যরত কর্মকর্তা লিমা খানম প্রথম আলোকে বলেন, বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। আগুনে ৫০ লাখ টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
আজ সকালে কাঁচাবাজারটিতে গেলে পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়। সব হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিরা কাঁচাবাজারের সামনে হাহাকার করছেন। তাঁরা বলছেন, সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে দোকান সাজিয়েছিলেন। কিন্তু সর্বনাশা আগুনে তাঁদের আশা–ভরসা পুড়ে ছাই হয়ে গেল। পুড়ে যাওয়া দোকানগুলোর পণ্যসামগ্রী ও ফলফলাদি ফুটপাতে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। দোকান পুড়ে যাওয়ায় মাছ বিক্রেতারা ফুটপাতে মাছ নিয়ে বসেছেন।
আরও পড়ুনমধ্যরাতে শেওড়াপাড়া কাঁচাবাজারে আগুন, ৪৫ মিনিট পর নিয়ন্ত্রণে১২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ই হয়
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।