পবিত্র রমজান মাসের জন্য দোকানে পণ্য এনেছিলেন মুদিদোকানি শাহ আলম। আগুন লাগার খবরে গভীর রাতে বাসা থেকে ছুটে এসে দেখেন, দোকানে আগুন জ্বলছে। চোখের সামনে নিমেষেই দোকানের সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল।

আজ শুক্র ও আগামীকাল শনিবার রোজা উপলক্ষে দোকানে বিক্রি বেশি হবে, এমন আশায় চিড়া, মুড়ি, গুড়, কলা এনেছিলেন দোকানি জয়নাল আবেদিন। কিন্তু আগুনে সব পুড়ে গেছে।

শুধু দোকানি শাহ আলম ও জয়নাল আবেদিনই নন, মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়া মেট্রোরেলের পাশে অলি মিয়ার কাঁচাবাজারে মুদি, বাটা শোরুম, বৈদ্যুতিক দোকান, ফল, সবজি মুরগি ও মাছসহ শ খানেক দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফায়ার সার্ভিস বলেছে, আগুনে ৬০টির বেশি দোকান পুড়ে গেছে।

মাছ বিক্রেতা ফিরোজ মিয়া জানান, তাঁর দোকানে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার মাছ পুড়ে গেছে। আরেক মাছ বিক্রেতা জসিম উদ্দিন জানান, তাঁর দোকানের ৫০ হাজার টাকার মাছ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ সূত্র জানায়, গতকাল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে পশ্চিম শেওড়াপাড়া কাঁচাবাজারে আগুন লাগে। মুহূর্তে আগুন গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা একের পর এক দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আগুন দোতলার বৈদ্যুতিক দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। কাঁচাবাজারের সামনের ফুটপাত ঘেঁষে গড়ে ওঠা ফলের দোকানেও আগুন ধরে যায়।

বাজারের ভেতরে অন্তত ২০টি হাঁস–মুরগির দোকান ছিল। আগুন সেখানে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হলে আটটি ইউনিট আগুন নেভাতে অংশ নেয়। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তাঁরা আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়।

জানা যায়, আগুনে কয়েক শ হাঁস–মুরগি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

আজ সকালে যোগাযোগ করা হলে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্তব্যরত কর্মকর্তা লিমা খানম প্রথম আলোকে বলেন, বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। আগুনে ৫০ লাখ টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

আজ সকালে কাঁচাবাজারটিতে গেলে পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়। সব হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিরা কাঁচাবাজারের সামনে হাহাকার করছেন। তাঁরা বলছেন, সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে দোকান সাজিয়েছিলেন। কিন্তু সর্বনাশা আগুনে তাঁদের আশা–ভরসা পুড়ে ছাই হয়ে গেল। পুড়ে যাওয়া দোকানগুলোর পণ্যসামগ্রী ও ফলফলাদি ফুটপাতে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। দোকান পুড়ে যাওয়ায় মাছ বিক্রেতারা ফুটপাতে মাছ নিয়ে বসেছেন।

আরও পড়ুনমধ্যরাতে শেওড়াপাড়া কাঁচাবাজারে আগুন, ৪৫ মিনিট পর নিয়ন্ত্রণে১২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ই হয়

এছাড়াও পড়ুন:

কুড়িগ্রাম-৪ আসনে জামায়াত-বিএনপির প্রার্থী হলেন ২ ভাই

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কুড়িগ্রাম-৪ আসন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এই আসনে বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত হয়েছেন আপন দুই ভাই। ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা।

সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আরো পড়ুন:

মনোনয়ন না পেয়ে হাজী ইয়াছিনের সমর্থকদের মহাসড়কে বিক্ষোভ

গভীর রাতে সীতাকুণ্ডের ৪ বিএনপি নেতা বহিষ্কার

কুড়িগ্রাম-৪ আসনে প্রার্থী হিসেবে আজিজুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত হয়েছেন বিএনপি প্রার্থীর আপন ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক। দুই ভাইয়ের এই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীতা এখন এলাকার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়ে উঠেছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

জাতীয় সংসদের এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭১১ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৯২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৯ জন। কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলা নিয়ে আসনটি গঠিত।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আসনটি ঐতিহাসিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি ও জামায়াত উভয় দলেরই শক্ত ঘাঁটি হিসেবে কুড়িগ্রাম-৪ দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত। ফলে দুই ভাইয়ের মুখোমুখি লড়াই আসনটিকে জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত আসনে পরিণত করেছে। 

এক প্রবীণ রাজনীতিক বলেন, “রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারীর ইতিহাসে এমন দৃশ্য প্রথম। ভাইয়ের বিপরীতে ভাই-এটা নির্বাচনী মাঠে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জনমনে প্রশ্ন-কে এগিয়ে থাকবেন?” 

স্থানীয়রা বলছেন, দুই দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সক্রিয়তা ও প্রার্থীদের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার ওপরই নির্ভর করবে কে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হবেন।

জামায়াতের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাক বলেন, “আমার বড় ভাই বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হয়েছেন। তিনি যদি সত্যি মনোনয়ন পেয়ে যান, তাহলেও আমাকে পরাজিত করতে পারবে না। কেননা জামায়াতের জনপ্রিয়তা এখন অনেক বেড়েছে। দুই ভাই প্রার্থী হলেও নির্বাচনে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।”

বিএনপি প্রার্থী আজিজুর রহমান বলেন, “আমার ছোট ভাই একসময় বিএনপি করতো। আমার কারণে সে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তীতে জামায়াতে যোগদেন, সেই দলের প্রার্থী হয়েছেন।” 

তিনি আরো বলেন, “আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা না করলে আমার পরিচয় এবং পারিবারিক ইমেজের কারণে আমার ছোট ভাই এককভাবে নির্বাচনে সুবিধা নিতে পারত। তবে, আমি প্রার্থী হওয়ায় সেই সুযোগ থেকে সে বঞ্চিত হলো। জনগণ আমাকেই চাইছে। তাই আমি আশা করব, আগামী নির্বাচনে দল আমাকে ফাইনাল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেবে।”

ঢাকা/বাদশাহ/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ