জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নবগঠিত সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে আজ শনিবার পরিচিতি সভা করেছে। এসময় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ বা বিরাজনীতিকরণ কোনো সমস্যার সমাধান নয়। শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় ও দেশের কল্যাণে ছাত্ররাজনীতি থাকতে হবে। তারা ক্যাম্পাসে সহাবস্থান এবং ডাকসু নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। 

বিকেলে মধুর ক্যান্টিনে এই পরিচিতি সভার আয়োজন করে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সভায় ছাত্রসংসদের ঢাবি শাখার সভাপতি আব্দুল কাদের, ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মানসুরা আলম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ঢাবি শাখার সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত, ঢাবি ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি মহিউদ্দীন খান, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল, ছাত্রফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষের খালেদ সাইফুল্লাহ, ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বক্তব্য দেন। 

ছাত্রদলের মানসুরা আলম বলেন, ছাত্রসংসদের নেতারা ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার রাজত্বের অবসানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমরাও (ছাত্রদল) একই সঙ্গে মাঠে ছিলাম। ক্যাম্পাসে সকল ক্রিয়াশীল সংগঠনকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে রাজনীতি করতে হবে। 

ছাত্রশিবিরের মহিউদ্দীন খান বলেন, ক্যাম্পাসগুলোতে দীর্ঘসময় রাজনৈতিক সহাবস্থান ছিল না। সহাবস্থান রাখতে হবে। তিনি আশা করেন ছাত্রসংসদের নেতারা যেভাবে জুলাইয়ে অবদান রেখেছেন, আগামী দিনে ক্যাম্পাসে এবং দেশ বিনির্মাণে তারা একইভাবে কাজ করবেন।  
 
ছাত্রইউনিয়ন মেঘমল্লার বসু বলেন, ক্যাম্পাসে বিরাজনীতিকরণ কোনো সমাধান নয়। অতীতে অনেকে বিরাজনীতির কথা বলেছেন। এটি সঠিক পথ হতে পারে না। 
 
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ইয়াসিন আরাফাত বলেন, একাত্তরকে আওয়ামী লীগ এককেন্দ্রিক করে তুলেছিল। জুলাই যাতে একদলের কেন্দ্রীভূত বিষয় না হয়। বাস্তবতা মেনে রাজনীতি করতে হবে। 
 
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলাই হলো ছাত্ররাজনীতি। দখলদারিত্ব-সন্ত্রাসের রাজনীতি আমরা চাই না। বিরাজনীতি সমাধান নয়, সমাধান হলো- আমরা একটি আদর্শভিত্তিক রাজনীতি চাই, যে রাজনীতির মধ্য দিয়ে ছাত্রদের অধিকার নিশ্চিত হবে, যে রাজনীতির মধ্যে গণতন্ত্রের পক্ষে লড়তে পারব। সামনের দিনে একটি সোহার্দ্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশে আমরা মতামত চর্চা করব। 
 
স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন খালিদ বলেন, দিন দিন ক্যাম্পাসের পরিবেশের উন্নতি হচ্ছে। ডাকসু নির্বাচনের দিকে আমাদের যেতে হবে। 
 
ছাত্রফেডারেশনের সৈকত আরিফ বলেন, ছাত্রসংসদে যারা দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদেরকে আমরা জুলাইয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখেছি। দেশে আগামীতে হয়তো আরও অনেক ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।   
 
বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং আহতদের পুনর্বাসনে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। 
 
আব্দুল কাদের বলেন, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকল ছাত্রসংগঠন একত্র হতে পেরেছি। আমরা বিভাজনের রাজনীতি ভুলে গিয়ে ঐক্যের ডাক দিতে চাই। আমরা ক্যাম্পাসে সুস্থ রাজনীতির পরিসর বিনির্মাণ করতে চাই। সবার রাজনৈতিক সহাবস্থান যেন বজায় থাকে।
 
ঢাবি শাখা ছাত্রসংসদের মুখ্য সংগঠক হাসিব আল ইসলাম এবং মুখপাত্র রাফিইয়া রেহনুমা হৃদির সঞ্চালনায় সভায় ছাত্রসংসদ ঢাবির শাখার সদস্যসচিব মহির আলম সমাপনী বক্তব্য দেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র জন ত ক ব র জন ত র জন ত র ছ ত রদল স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ