সিদ্ধিরগঞ্জে বিস্ফোরণ: ঘরের নিচে পাইপলাইন, পরিণত হয়েছিল ‘গ্যাস চেম্বারে’
Published: 3rd, March 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শান্তিবাগ এলাকায় বিস্ফোরণে দুটি পরিবারের আটজন দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের ঘরের নিচে গ্যাসের পাইপলাইন আছে। ওই লাইন থেকে গ্যাস লিকেজ হয়ে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, এক বছর আগে সেখানকার দুটি কক্ষে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনার পরও গ্যাসের লিকেজ মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
গতকাল রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার ২ নম্বর ঢাকেশ্বরী শান্তিবাগ এলাকায় ইব্রাহিম খলিলের বাড়িতে ওই বিস্ফোরণ হয়। এতে সেখানকার ভাড়াটিয়া দুটি পরিবারের আটজন দগ্ধ হয়েছেন। তাঁরা হলেন সোহাগ আলী (২৪), তাঁর স্ত্রী রূপালী (২০) এবং এ দম্পতির দেড় বছরের মেয়ে সুমাইয়া; আবদুল হান্নান (৪০), তাঁর স্ত্রী লাকী বেগম (৩০), ছেলে সাব্বির (১২), দুই মেয়ে সামিয়া (৯) ও জান্নাত (৩)। সোহাগ ও রূপালী গার্মেন্টস শ্রমিক। হান্নান পেশায় দিনমজুর আর লাকী বেগম গার্মেন্টস শ্রমিক। গুরুতর অবস্থায় তাঁদের ঢাকার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, আধা পাকা ওই কক্ষের নিচ দিয়ে গ্যাসের পাইপলাইন গেছে। কক্ষের দেয়ালের চারপাশে পানি ঢেলে দিয়ে দেখা গেছে, এক কোনা দিয়ে বুদ বুদ করে গ্যাস বের হচ্ছে।
আরও পড়ুনসিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ৮ জন দগ্ধ৫ ঘণ্টা আগেসরেজমিন দেখা যায়, ইব্রাহিম খলিলের বাড়িতে দুই সারিতে আধা পাকা আটটি টিনের ঘর। ঘরের টিনের চালার দেয়াল ভেঙে গেছে; ঘরের আসবাব পুড়ে গেছে। সেখানে দুটি কক্ষে সোহাগ আলী ও আবদুল হান্নান স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকতেন।
তাঁদের প্রতিবেশী সাবিনা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে জানান, গতকাল রাতে বিকট শব্দে তাঁদের ঘুম ভেঙে যায়। দরজা ধাক্কাধাক্কির শব্দ শুনে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে দেখেন পাশের দুটি ঘরের ভেতরে আগুন জ্বলছে। দরজা ভেঙে দগ্ধ আটজনকে অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আরও কয়েকজন ছুটে এসে পানি দিয়ে আগুন নেভান। দগ্ধ ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যান প্রতিবেশী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক জাহাঙ্গীর হোসেন।
গত বছর ইব্রাহিম খলিলের বাড়ির ওই দুই কক্ষে আগুন লেগেছিল বলে জানান ভাড়াটিয়া সাবিনা ইয়াসমিন ও স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন। তাঁরা জানান, গত বছর আগুনে কক্ষের মালামাল পুড়ে গিয়েছিল, তবে কেউ দগ্ধ হননি। গ্যাসের লাইন মেরামত করা হলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না।
এদিকে আজ ১১টার দিকে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থলে যান তিতাস গ্যাসের কর্মীরা। তবে তাঁরা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা না বলে সেখান থেকে চলে যান।
আগুন লাগার কারণে সর্ম্পকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ গ্যাসের লিকেজ রয়েছে। গ্যাস লিকেজ হয়ে পুরো রুমের ভেতরে গ্যাস চেম্বার হয়ে গিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, রাতে মশাল কয়েল অথবা সাহ্রি খাওয়ার সময় বৈদ্যুতিক সুইচ অন-অফ করতে গিয়ে কোনো একপর্যায়ে স্পার্কে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
বাড়ির মালিক ইব্রাহিম খলিল মুঠোফোনে বলেন, ‘রাত থেকে দগ্ধ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় হাসপাতালে আছি। সাধ্য অনুযায়ী তাঁদের চিকিৎসার চেষ্টা চলছে। মিস্ত্রিরা কাজ করেছেন; রুমের নিচ দিয়ে পাইপলাইন থাকার কথা নয়। এর আগে আগুন লেগেছিল কি না, সেটি আমার জানা নেই।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ পাকিংয়ে তীব্র যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। এ যানজটের কারণে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা পেরুতে সময় লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ফলে প্রতিনিয়ত চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগ কিংবা সিটি কর্পোরেশন এ যানজট থেকে জেলাবাসীকে পরিত্রাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে দিন যতই বড়ছে ততই বাড়ছে নারায়ণগঞ্জবাসীর দুর্ভোগ।
নারায়ণগঞ্জে এমন কোন সড়ক নাই সেই সড়কে যানজট নাই। মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি সব জায়গায়ই যানজট আর যানজট। তবে এ যানজটের পেছনে মূল সড়কের যানজটকেই দায়ি করছেন অনেকে।
তারা বলছেন, মূল সড়ক যদি যানজট মুক্ত থাকতো তাহলে এর আশেপাশের সড়কগুলো যানজটের সুষ্টি হতো না। মূল সড়কে তীব্র যানজটের কারণেই এর প্রভাব পড়ছে অন্য সড়কগুলোতেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে শহরের চাইতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণে করেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের কথা শুনলেই মানুষ আতকে উঠে। কারণ, যানজটের মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা পাড় হতে সময় লাগে ঘন্টার পর ঘন্টা।
এ রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীকেও যানজটে আটতে থাকতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। একবার যানজটে আটকা পড়লেই দিন শেষ। কখন বাড়ী কিংবা অফিসে যাবেন তার কোন ঠিক নেই।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, এ যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। ফ্লাইওভারের কর্মযজ্ঞের ফলে যানবাহনগুলোকে একটু ধীর গতিতে যেতে হয়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে এ যানজটের আরও একটি বড় কারণ চোঁখে পড়ে, আর তা হলো পঞ্চবটি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে এবং চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কের দু’পাশে ট্রাক ও কভার্ডভ্যানগুলো অবৈধভাবে পাকিং করে রাখা।
এসব যানবাহনগুলো সড়কের দু’পাশে পার্কিং করে রাখার কারণে মূল সড়ক অনেকটাই সরো হয়ে যায়। ফলে এ সড়ক দিয়ে অন্যসব যানবাহনগুলো ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অথচ, পঞ্চবটির খুব কাছেই রয়েছে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড। যানবাহনের চালকরা ওই স্ট্যান্ডে গাড়ী না রেখে সড়কের পাশে অবৈধভাবে বাঁকাত্যাঁড়া গাড়ীগুলো রাখছেন। এর ফলে যে, ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং যানজটের কবলে পড়ে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, এ বিষয়ে যেন তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
তাদের ভাব-নমুনা দেখা মনে হয় যে, তারাই যেন এ সড়কটির মূল মালিক। না পুলিশে তাদের কিছু বলে, না তারা জনগণের কোন কথা শোনে। তারা তাদের ইচ্ছেমত গাড়ীগুলো রেখে যানজটের সৃষ্টি করছেন।
চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে চলাচল করা ভুক্তভোগী পথচারিরা বলছেন, এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করাটা বর্তমানে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত ভয়াবহ যানজট আমরা কখনোই চোঁখে দেখিনি। পঞ্চবটি ফ্লাইওভারের নিচে যেভাবে ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো রাখা হয় পুরো সড়কটা তারা কিনে নিয়েছে। পুলিশও কিছু বলে না।
এছাড়া চাষাঢ়া থকে পঞ্চবটি পর্যন্ত পুরো সড়কে দু’পাশেই তারা গাড়ীগুলো রাখছেন। রাস্তাটি পাশে এমনিতেই জায়গা কম, আবার যদি তারা এভাবে গাড়ী রাখেন তাহলে যানজটের সৃষ্টিতো হবেই। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল বলেন, আসলে নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আইভী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিনি শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে পঞ্চবটি এলাকাতে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলেন এবং সেখানে এ স্ট্যান্ডকে স্থানান্তর করেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
এখন তারা কিছু গাড়ী ওই স্ট্যান্ডে রাখে বাকি গাড়ীগুলো সড়ক দখল করে এলোপাথারিভাবে রাখে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও যেন কারো কোন কিছু বলার নেই। কারণ, এ সমস্যা নিয়ে বহুবার ডিসি-এসপির সাথে বসা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে কিন্তু সুরাহা হয় নাই।
তবে, ৫ আগস্টে দেশে একটি বড় পরিবর্তনের পর আশা করছিলাম এবার হয়তো এর একটা সুরাহা হবে। কিন্তু না। সড়ক দখল করে রাখা ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে মানুষকে বাধ্য হয়েই যানজটের মত দুর্ভোগ দুর্দশাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পথ চলতে হচ্ছে।
তারা বলেন, আসলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সেদিন ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এতবড় একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু দেশের মানুষ যদি সেই শান্তি শৃঙ্খলা ভোগই করতে না পারে, তাহলে এত প্রাণ দিয়ে কি লাভ হলো?
আমরা জানিন না, প্রশাসন আসলে কাদেরকে খুশি করাতে চাচ্ছেন? মুষ্টিম কিছু চালকদের জন্য হাজার হাজার মানুষের এ কষ্ট কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করবো, তারা যেন খুব শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। নারায়ণগঞ্জবাসীকে যেন কিছুটা স্বস্তি দেয়।
এ বিষয়ে টিআই করিম বলেন, ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে যানজটের যে ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছিলো বর্তমানে তা কমে আসছে। আশাকরছি, আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। পঞ্চবটি সড়কে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য এ রুটে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্তায় যদি কোন চালক রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গাড়ী পার্কিং করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।