অ্যাপলের ‘ফাইন্ড মাই’ নেটওয়ার্ক সুবিধা কাজে লাগিয়ে সহজেই হারিয়ে বা চুরি যাওয়া আইফোন, এয়ারপডস ও এয়ারট্যাগের অবস্থান শনাক্ত করা যায়। তবে সম্প্রতি অ্যাপলের ফাইন্ড মাই নেটওয়ার্কে নিরাপত্তাত্রুটির সন্ধান পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ মেসন ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক। তাদের দাবি, ‘এন-রুটট্যাগ’ নামের এক নিরাপত্তাত্রুটির কারণে হারিয়ে যাওয়া আইফোন বা এয়ারপডস আশপাশে থাকা অন্যান্য যন্ত্রের সঙ্গে ব্লু-টুথ প্রযুক্তির মাধ্যমে সংকেত আদান-প্রদান করতে থাকে। ফলে যে কেউ আইফোন বা এয়ারপডসের অবস্থান শনাক্ত করতে পারে।

গবেষকদের দাবি, অ্যাপলের ফাইন্ড মাই নেটওয়ার্ক সুবিধা ডেস্কটপ কম্পিউটার, স্মার্টফোন ও অন্যান্য ইন্টারনেট সংযুক্ত যন্ত্রেও কাজ করে। তাই এ ত্রুটি কাজে লাগিয়ে ১০ ফুটের মধ্যে থাকা একটি কম্পিউটারের অবস্থান নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। এমনকি একটি চলন্ত ই-বাইকের গতিপথ জানার পাশাপাশি উড়োজাহাজে থাকা একটি গেমিং কনসোলের অবস্থানও শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এ বিষয়ে জর্জ মেসন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটারবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কিয়ান ঝেন্ড বলেন,‘স্মার্ট লকের নিরাপত্তা ভাঙা যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি সেটির সঠিক অবস্থান শনাক্ত করা আরও ভয়ংকর। আমাদের উদ্ভাবিত কৌশল দিয়ে সেটাই করা সম্ভব।’

অ্যাপলের তথ্য মতে, ফাইন্ড মাই নেটওয়ার্ক এন্ড টু এন্ড এনক্রিপটেড। ফলে অ্যাপল নিজেও কোনো যন্ত্রের সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানতে পারে না। তবে গবেষকদের দাবি, ব্লুটুথ অ্যাডড্রেস পরিবর্তন না করেও একটি নির্দিষ্ট কী ব্যবহার করে ফাইন্ড মাই নেটওয়ার্কে থাকা ত্রুটির মাধ্যমে বিভিন্ন যন্ত্রের অবস্থান জানা সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইন্ড মাই নেটওয়ার্কের ত্রুটি ব্যবহারের জন্য বিশেষ কোনো অনুমতি বা উন্নত প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। ফলে সাধারণ ব্যবহারকারীরাও এই প্রযুক্তির অপব্যবহার করতে পারে।

আরও পড়ুনআপনার আইফোন নিরাপদ আছে তো২১ মে ২০২২

গবেষকদের তথ্য মতে, ফাইন্ড মাই নেটওয়ার্কে থাকা নিরাপত্তাত্রুটির কারণে অ্যাপল পণ্য ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা মারাত্মক হুমকিতে পড়তে পারে। তাই বিষয়টি গত বছরই অ্যাপলকে অবহিত করেছেন তাঁরা। তবে ত্রুটি থাকার বিষয়টি স্বীকার করলেও এখন পর্যন্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানায়নি অ্যাপল। গবেষকদের ধারণা, এ সমস্যা সমাধানে বছরখানেক সময় প্রয়োজন হতে পারে। তাই সন্দেহজনক অ্যাপকে ব্লুটুথ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আইফোন ব্যবহারকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র অবস থ ন ব যবহ র আইফ ন

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ