ট্রাম্পের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার জন্য দুঃখ প্রকাশ জেলেনস্কির
Published: 5th, March 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে হওয়া বাকবিতণ্ডার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে পথে এগোতে চাচ্ছে, সেই পথে ইউক্রেনও প্রস্তুত আছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
সূত্র বিবিসি।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে সব ধরনের সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর এই প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন জেলেনস্কি, যদিও তিনি তার পোস্টে এ বিষয়ে সরাসরি কিছু উল্লেখ করেননি।
জেলেনস্কি বলেন, আমি শান্তির প্রতি ইউক্রেনের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করতে চাই। আমরা কেউই সীমাহীন যুদ্ধ চাই না। দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যত দ্রুত সম্ভব আলোচনার টেবিলে আসতে প্রস্তুত ইউক্রেন। অন্যদের চেয়ে সবচেয়ে বেশি শান্তি চায় ইউক্রেন।
তিনি আরও বলেন, স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমি এবং আমার দল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শক্তিশালী নেতৃত্বে কাজ করতে প্রস্তুত। আমরা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে দ্রুত কাজ করতে প্রস্তুত।
যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য প্রথম ধাপ নিয়েও মন্তব্য করেছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে বন্দিদের মুক্তি, আকাশে মিসাইল ও ড্রোন উড্ডয়ন বন্ধ করা যেতে পারে। এছাড়া জ্বালানি ও অন্যান্য বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর হামলা বন্ধ করতে হবে। রাশিয়া যদি রাজি হয়, তাহলে সমুদ্রেও যুদ্ধবিরতি হতে পারে।
তিনি আরও যোগ করেন, প্রথম ধাপের পর আমরা দ্রুত পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যেতে চাই এবং একটি শক্তিশালী চূড়ান্ত চুক্তি করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে চাই।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কি। বিশেষ করে, তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশংসা করে বলেন, আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে, আমরা সেটিকে সত্যিই মূল্যবান বলে মনে করি। আমাদের মনে আছে সেই মুহূর্ত, যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনকে জ্যাভলিন মিসাইল দিয়েছিলেন, যা পরিস্থিতি বদলে দিয়েছিল। আমরা এর জন্য কৃতজ্ঞ।
ট্রাম্পের সঙ্গে সাম্প্রতিক বাকবিতণ্ডার বিষয়ে দুঃখপ্রকাশ করে জেলেনস্কি বলেন, গত শুক্রবার হোয়াইট হাউজে আমাদের বৈঠকটি যেভাবে হওয়ার কথা ছিল, সেভাবে হয়নি। এটি দুঃখজনক যে, বিষয়টি এমনভাবে ঘটেছে। এখন সময় এসেছে বিষয়গুলো ঠিক করার। আমরা চাই, ভবিষ্যতে সহযোগিতা ও যোগাযোগ আরও গঠনমূলক হোক।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে কোনো সময় খনিজ সম্পদ বিষয়ক চুক্তি করতে ইউক্রেন প্রস্তুত আছে বলেও জানান তিনি। তার মতে, এটি ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তি আনার একটি বড় ধাপ হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।