ট্রাম্পের মন পেল না ভারত, ২ এপ্রিল থেকে পাল্টা শুল্ক
Published: 5th, March 2025 GMT
বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়ালকে তড়িঘড়ি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন পেল না ভারত। ভারতীয় সময় বুধবার সকালে মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে ট্রাম্প জানিয়ে দেন, ২ এপ্রিল থেকে ভারতের ক্ষেত্রেও চালু হবে পারস্পরিক শুল্ক নীতি।
এ প্রসঙ্গে অন্য কিছু দেশের নামের পাশাপাশি ট্রাম্প ভারতেরও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের কোনো কোনো পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপায়। এটা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ন্যায্য নয়।’
দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই ভারতের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে ট্রাম্প মুখর। একসময় ভারতকে তিনি ‘ট্যারিফ কিং’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়েও ট্রাম্প শুল্কনীতির প্রকাশ্য সমালোচনা করেছিলেন। মোদিকে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি অবশ্যই চান, কিন্তু তা কখনো শুল্ক ছাড়ের বিনিময়ে নয়।
দেয়াললিখন ভারত তখনই পড়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মন পেতে তাই আগেই সে দেশ থেকে আমদানি করা মোটরবাইক ও হুইস্কির মতো বেশ কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাস করেছিল। তারপর সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও প্রতিরক্ষা সম্ভার কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। নতুন বাণিজ্য চুক্তি করে ভারতের বিশাল বাজার তাদের জন্য খুলে দেওয়ার কথাও শুনিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও ট্রাম্প অস্বাভাবিক চড়া শুল্কনীতির সমালোচনা করেছিলেন। বুধবার জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভারতকেও পারস্পরিক শুল্কনীতির আওতায় আনার কথা তিনি জানিয়ে দিলেন।
ট্রাম্পকে ঠেকানোর শেষ চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী মোদি গত রোববার রাতেই তড়িঘড়ি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়ালকে। তাঁরই সঙ্গে পাঠানো হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রাজেশ আগরওয়ালকে। উদ্দেশ্য ছিল, ট্রাম্প প্রশাসনকে বোঝানো যে ভারত যখন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিতে আগ্রহী, তখন একতরফাভাবে পারস্পরিক শুল্কনীতি রূপায়নের আওতা থেকে ভারতকে বাইরে রাখা হোক। কিন্তু গোয়েলকে সেই সুযোগ দিতে ট্রাম্প প্রশাসন চাইল না।
মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ট্রাম্প বলেন, বহুদিন ধরে বিভিন্ন দেশ মার্কিন পণ্যের ওপর চড়া হারে শুল্ক চাপিয়ে এসেছে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের পালা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ব্রাজিল, ভারত, মেক্সিকো, কানাডাসহ অন্য দেশ যত শুল্ক আরোপ করবে, যুক্তরাষ্ট্রও তাদের রপ্তানির ওপর ঠিক ততটাই শুল্ক আরোপ করবে। এ প্রসঙ্গেই ভারতের উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোটরচালিত গাড়ির ওপর ওরা ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে। এটা মোটেই ন্যায্য নয়।
ট্রাম্প তাঁর ভাষণে বলেন, এই পারস্পরিক শুল্কনীতি ২ এপ্রিল থেকে চালু হবে। তিনি বলেন, ভেবেছিলেন ১ এপ্রিল থেকেই তা চালু করবেন। কিন্তু তাতে মনে হতে পারে, তিনি অন্যদের বোকা বানাতে চাইছেন। এপ্রিল ফুল করতে চাইছেন। তাই ২ এপ্রিল থেকে এই নীতি কার্যকর হবে। তিনি আরও বলেন, কেউ যদি মার্কিন পণ্য রপ্তানিতে অন্য ধরনের বাধা সৃষ্টির (নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার) চেষ্টা করেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রও তেমন বাধা সৃষ্টি করবে। এটাই ট্রাম্পের ‘টিট ফর ট্যাট’ নীতি, যা তিনি নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই বলে আসছেন।
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। পীযূষ গোয়ালের দূতিয়ালি নিয়েও সরকার এখনো নীরব।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির মতো সরু গাজার শিশুদের হাত
গাজার নাসের হাসপাতালের শিশু অপুষ্টি ওয়ার্ডের শিশুরা একরকম নিশ্চল হয়ে পড়ে আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তীব্র ক্ষুধার কারণে ক্লান্ত হয়ে এই শিশুরা কাঁদতে পারেন না।
চিকিৎসকরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সবচেয়ে তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসা করানো জায়গাগুলোতে নীরবতা এখন সাধারণ ঘটনা। শিশুদের এই নীরবতা তাদের শরীর কাজ না করার লক্ষণ।
১০ মাস বয়সী মারিয়া সুহাইব রাদওয়ানের মা জেইনা রাদওয়ান বলেন, “সে সবসময় নিশ্চল হয়ে পড়ে থাকে, এভাবে শুয়ে থাকে... ডাক দিলেও তার সাড়া পাওয়া যায় না।”
জেইনা তার শিশু সন্তানের জন্য দুধ বা পর্যাপ্ত খাবার খুঁজে পাচ্ছেন না এবং বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন না। কারণ তিনি নিজেও কম খাচ্ছেন, দিনে একবার খাবার খেয়ে বেঁচে আছেন।
গত সপ্তাহে, রয়টার্সের সাংবাদিকরা নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে পাঁচ দিন কাটিয়েছেন। এটি গাজার সবচেয়ে বিপজ্জনক ক্ষুধার্ত শিশুদের চিকিৎসা করতে সক্ষম মাত্র চারটি কেন্দ্রের মধ্যে একটি। রয়টার্সের সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত থাকাকালেই তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা ৫৩ জন শিশুকে ভর্তি করা হয়েছিল।
ইসরায়েল মার্চ মাসে ত্রাণের প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে গাজার খাদ্য মজুদ ফুরিয়ে আসছে। খাদ্য মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে জুন এবং জুলাই মাসে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ব্যাপক দুর্ভিক্ষের সতর্কবার্তা দেয় এবং ক্ষীণকায় শিশুদের ছবি বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ৮৯ জন শিশুসহ ১৫৪ জন অপুষ্টিতে মারা গেছে।
নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের শিশু ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ আল-ফাররা বলেন, “আমাদের শিশুদের জন্য দুধ দরকার। আমাদের চিকিৎসা সরঞ্জাম দরকার। আমাদের কিছু খাবার দরকার, পুষ্টি বিভাগের জন্য বিশেষ খাবার। হাসপাতালের জন্য আমাদের সবকিছু দরকার।”
তিনি জানান,তার হাসপাতাল এখন অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসা করছে যাদের আগে কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল না, যেমন শিশু ওয়াতিন আবু আমুনাহ। প্রায় তিন মাস আগে সুস্থভাবে জন্মগ্রহণ করেছিল। জন্মের সময় তার ওজনের চেয়ে ১০০ গ্রাম কম এখন তার ওজন।
ফাররা বলেন, “গত তিন মাসে তার ওজন এক গ্রামও বাড়েনি। বরং শিশুটির ওজন কমেছে। পেশী সম্পূর্ণরূপে হ্রাস পেয়েছে। হাড়ের উপরে কেবল ত্বক রয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে শিশুটি তীব্র অপুষ্টির পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এমনকি শিশুটির মুখ: তার গাল থেকে চর্বি টিস্যুও হারিয়ে গেছে।"
শিশুটির মা ইয়াসমিন আবু সুলতান শিশুটির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দিকে ইঙ্গিত করে জানান, তার বাহু তার মায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির মতো মোটা
তিনি বলেন, “দেখতে পারছেন? এগুলো তার পা... তার বাহুগুলোর দিকে তাকান।”
ঢাকা/শাহেদ