বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়ালকে তড়িঘড়ি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন পেল না ভারত। ভারতীয় সময় বুধবার সকালে মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে ট্রাম্প জানিয়ে দেন, ২ এপ্রিল থেকে ভারতের ক্ষেত্রেও চালু হবে পারস্পরিক শুল্ক নীতি।

এ প্রসঙ্গে অন্য কিছু দেশের নামের পাশাপাশি ট্রাম্প ভারতেরও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের কোনো কোনো পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপায়। এটা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ন্যায্য নয়।’

দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই ভারতের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে ট্রাম্প মুখর। একসময় ভারতকে তিনি ‘ট্যারিফ কিং’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়েও ট্রাম্প শুল্কনীতির প্রকাশ্য সমালোচনা করেছিলেন। মোদিকে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি অবশ্যই চান, কিন্তু তা কখনো শুল্ক ছাড়ের বিনিময়ে নয়।

দেয়াললিখন ভারত তখনই পড়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মন পেতে তাই আগেই সে দেশ থেকে আমদানি করা মোটরবাইক ও হুইস্কির মতো বেশ কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাস করেছিল। তারপর সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও প্রতিরক্ষা সম্ভার কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। নতুন বাণিজ্য চুক্তি করে ভারতের বিশাল বাজার তাদের জন্য খুলে দেওয়ার কথাও শুনিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও ট্রাম্প অস্বাভাবিক চড়া শুল্কনীতির সমালোচনা করেছিলেন। বুধবার জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভারতকেও পারস্পরিক শুল্কনীতির আওতায় আনার কথা তিনি জানিয়ে দিলেন।

ট্রাম্পকে ঠেকানোর শেষ চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী মোদি গত রোববার রাতেই তড়িঘড়ি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়ালকে। তাঁরই সঙ্গে পাঠানো হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রাজেশ আগরওয়ালকে। উদ্দেশ্য ছিল, ট্রাম্প প্রশাসনকে বোঝানো যে ভারত যখন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিতে আগ্রহী, তখন একতরফাভাবে পারস্পরিক শুল্কনীতি রূপায়নের আওতা থেকে ভারতকে বাইরে রাখা হোক। কিন্তু গোয়েলকে সেই সুযোগ দিতে ট্রাম্প প্রশাসন চাইল না।

মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ট্রাম্প বলেন, বহুদিন ধরে বিভিন্ন দেশ মার্কিন পণ্যের ওপর চড়া হারে শুল্ক চাপিয়ে এসেছে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের পালা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ব্রাজিল, ভারত, মেক্সিকো, কানাডাসহ অন্য দেশ যত শুল্ক আরোপ করবে, যুক্তরাষ্ট্রও তাদের রপ্তানির ওপর ঠিক ততটাই শুল্ক আরোপ করবে। এ প্রসঙ্গেই ভারতের উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোটরচালিত গাড়ির ওপর ওরা ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে। এটা মোটেই ন্যায্য নয়।

ট্রাম্প তাঁর ভাষণে বলেন, এই পারস্পরিক শুল্কনীতি ২ এপ্রিল থেকে চালু হবে। তিনি বলেন, ভেবেছিলেন ১ এপ্রিল থেকেই তা চালু করবেন। কিন্তু তাতে মনে হতে পারে, তিনি অন্যদের বোকা বানাতে চাইছেন। এপ্রিল ফুল করতে চাইছেন। তাই ২ এপ্রিল থেকে এই নীতি কার্যকর হবে। তিনি আরও বলেন, কেউ যদি মার্কিন পণ্য রপ্তানিতে অন্য ধরনের বাধা সৃষ্টির (নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার) চেষ্টা করেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রও তেমন বাধা সৃষ্টি করবে। এটাই ট্রাম্পের ‘টিট ফর ট্যাট’ নীতি, যা তিনি নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই বলে আসছেন।

ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। পীযূষ গোয়ালের দূতিয়ালি নিয়েও সরকার এখনো নীরব।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ল র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

পাহাড়ে বাড়ছে কাজুবাদামের চাষ, চাঙা ব্যবসা

রাঙামাটি সদর উপজেলার বালুখালী ইউনিয়নের বসন্ত পাংখোয়া পাড়ায় আড়াই একর জমিতে কাজুবাদাম চাষ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা চিয়ালজল পাংখোয়া। ২০২১ সালে চাষাবাদ শুরু করেন তিনি। এ বছর তাঁর বাগানের কিছু গাছে ফলন এসেছে।

চিয়ালজল পাংখোয়া প্রথম আলোকে বলেন, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৬০ কেজির মতো ফলন বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতি কেজি বিক্রি করেছেন ১০০ টাকা দরে। কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করার পর এসব কাজুবাদাম প্রতি কেজি প্রায় দেড় হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। বাগানে বিক্রি করার মতো আরও ফলন রয়েছে জানিয়ে চিয়ালজল বলেন, ‘প্রথমবার খুব একটা আয় হবে, এমনটা বলা যাবে না। তবে বাগানের সব গাছে ফলন এলে বিক্রি করে বছরে কয়েক লাখ টাকা আয় হবে’।

বেশি লাভের আশায় চিয়ালজল পাংখোয়ার মতো পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজুবাদামের বাণিজ্যিক চাষাবাদে ঝুঁকছেন অনেকেই। বিশেষ করে গত পাঁচ বছরে বেড়েছে কাজুবাদামের চাষ। এতে ফলন বাড়ায় জেলায় চাঙা হয়েছে কাজুবাদামের ব্যবসাও।

বাগানিদের কাছ থেকে কিনে আনা কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করার জন্য রাখা হয়েছে কারখানায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ