ভারতীয় সংসদের চরিত্র আরও ৩০ বছর অপরিবর্তিত রাখা হোক। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের ডাকা আজ বুধবারের সর্বদলীয় বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবে এই দাবি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, লোকসভা ও রাজ্যসভার আসনসংখ্যা এখন যেমন আছে, আরও ৩০ বছর তেমনই থাকুক। এই সময়ে দেশের অন্যত্র জননিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সফল করা হোক।

বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন দাক্ষিণাত্যের সব রাজ্যের রাজনৈতিক দল নিয়ে এক যৌথ অ্যাকশন কমিটি তৈরির প্রস্তাব করেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংসদের বহর বাড়ানো হলে তা দক্ষিণের রাজ্যগুলোর পক্ষে কতটা ক্ষতিকর হবে, সেই বিষয়ে ওই কমিটি সর্বত্র জনমত গঠন করবে, যাতে একযোগে প্রতিরোধ করা সম্ভবপর হয়। ওই প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে।

তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইয়ে আজ বুধবার ওই বৈঠক ডাকা হয়েছিল। বৈঠকে ডিএমকে, এআইএডিএমকে, কংগ্রেস, বামপন্থী দলগুলো ছাড়াও অন্যান্য স্থানীয় দলের নেতারা যোগ দেন। তবে বিজেপি, তামিল মানিলা কংগ্রেস ও এনটিকের মতো দল ওই বৈঠক বর্জন করে।

জনগণনার ভিত্তিতে লোকসভার আসন বৃদ্ধি হলে দক্ষিণের রাজ্যগুলোর তুলনায় উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম ভারতীয় রাজ্যগুলোর আসন অনেক বেশি বাড়বে। ফলে সংসদে দাক্ষিণাত্যের প্রতিনিধিত্ব ও প্রভাব কমে যাবে। শুধু তা-ই নয়, দক্ষিণের রাজ্যগুলোর আশঙ্কা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্রসহ হিন্দি বলয়ের আসন এতটাই বেড়ে যাবে যে দাক্ষিণাত্যের সমর্থন ছাড়াই কোনো সর্বভারতীয় দল ভারত শাসন করতে পারবে। এই আশঙ্কা থেকেই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন রাজনৈতিক প্রতিরোধে উদ্যোগী হয়েছেন।

বিভিন্ন রাজ্যের জনসংখ্যা অনুযায়ী, সংসদের আসনসংখ্যা নির্ধারিত হয়ে আসছে। ১৯৫১, ১৯৬১ ও ১৯৭১ সালের জনগণনার ভিত্তিতে বিভিন্ন রাজ্যের আয়তন ও জনসংখ্যার নিরিখে লোকসভার আসন সেভাবেই নির্ধারিত হয়ে এসেছে। ১৯৭৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকার জননিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গ্রহণ করার সময় সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ঠিক করে, পরবর্তী ২৫ বছর সংসদের আসনসংখ্যায় কোনোরকম হেরফের ঘটানো হবে না।

কর্মসূচির সাফল্য দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ২০০১ সালে আরেকবার সংবিধান সংশোধন করে সেই মেয়াদ আরও ২৫ বছর বাড়ানো হয়। সেই নিরিখে ২০২৬ সালের পর সংসদের আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করার কথা।

ভারতে শেষ জনগণনা হয় ২০১১ সালে। কোভিড-১৯-এর কারণে ২০২১ সালে গণনা সম্ভবপর হয়নি। ২০২৬ সালে তা হওয়ার কথা। শেষ জনগণনার হিসাব অনুযায়ী, সংসদের আসন বৃদ্ধি হলে দেখা যাচ্ছে, তামিলনাড়ুর আসন ৩৯ থেকে বেড়ে হবে ৪১, কর্ণাটকের আসন ২৮ থেকে বেড়ে হবে ৩৬, তেলেঙ্গানা ১৭ থেকে বেড়ে ২০, অন্ধ্র প্রদেশ ২৫ থেকে হবে ২৮। কেরালার আসন ২০টিতেই আটকে থাকবে।

ভারতের দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে এত কম আসন বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে ওই অঞ্চলে জননিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বিপুল সাফল্য। অথচ সেই কর্মসূচির ব্যর্থতার দরুন হিন্দি বলয়ের আসন বাড়বে অনেক বেশি। যেমন উত্তর প্রদেশে আসন ৮০ থেকে বেড়ে হবে ১২৮, বিহার ৪০ থেকে ৭০, মধ্যপ্রদেশ ২৯ থেকে ৪৭, মহারাষ্ট্র ৪৮ থেকে ৬৮টি।

বৈঠকের পর স্ট্যালিন সংবাদমাধ্যমে বলেন, সংসদের আসন বৃদ্ধি আরও ৩০ বছর স্থগিত রাখা হোক। ওই সময়ে দেশের অন্যত্র জননিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সফল করা হোক, যাতে দক্ষিণের সাফল্যের সঙ্গে অবশিষ্ট ভারতের সাফল্য সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে। বর্তমানে ১৯৭১ সালের জনগণনা অনুযায়ী সংসদের আসন নির্ধারিত। সেটাই আগামী ৩০ বছর অপরিবর্তিত রাখা হোক।

মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন বলেছেন, জননিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সাফল্যের শাস্তি দাক্ষিণাত্যকে দেওয়া অনুচিত। তিনি মনে করেন, শুধু জনসংখ্যাই সংসদে প্রতিনিধিত্বের একমাত্র মানদণ্ড হতে পারে না। দেশের প্রবৃদ্ধিতে রাজ্যের অর্থনৈতিক অবদানও বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।

ভারতের মোট জাতীয় উৎপাদনের ৩০ শতাংশ দক্ষিণের পাঁচ রাজ্যের অবদান। পাশাপাশি শুধু উত্তর প্রদেশ ও বিহারে থাকেন দেশের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার ২৬ শতাংশ। জন্মনিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে ব্যর্থ এই দুই রাজ্যের প্রতিনিধিরাই সংসদ পুনর্গঠনে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আরও ৩০ বছর ম খ যমন ত র আসন ব দ ধ র স ফল য জনস খ য র আসন ব দ র আসন ল কসভ

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা কমানো ও নতুন ১৮ বিভাগ চালুর সুপারিশ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সার্বিকভাবে আসনসংখ্যা কমানো, আরও ১৮টি বিভাগের অন্তর্ভুক্তি, ৪টি ইনস্টিটিউট চালু এবং ১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে আসনসংখ্যা কমানো হচ্ছে বলে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে।

গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৯তম একাডেমিক কাউন্সিল সভায় এসব বিষয়ে সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে আরও ১৮টি বিভাগের অন্তর্ভুক্তি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী, কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে ল্যাব বেজড বিভাগগুলোতে আসনসংখ্যা ৪০টি এবং ল্যাববিহীন বিভাগগুলোতে ৫০টি আসন রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। যার কারণে সার্বিকভাবে কিছু আসন কমে আসবে। এ ছাড়া নতুন আরও ১৮টি বিভাগের অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ, জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগ এবং জৈবপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জনসংখ্যাবিজ্ঞান বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ। কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত গুলো হলো- ইসলামিক স্টাডিজ ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ এবং দর্শন বিভাগ।

আরও পড়ুনদুই দশকে ‘লালমাটির সবুজ ক্যাম্পাস’, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বর্ণাঢ্য আয়োজন ২৮ মে ২০২৫

ব্যবসায় অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ব্যবসায়িক তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ, আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগ এবং লজিস্টিক ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ।

প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ, রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ, পুরকৌশল বিভাগ এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগ। আইন অনুষদভুক্ত বিভাগটি হলো অপরাধবিদ্যা বিভাগ।

এদিকে সভায় চারটি ইনস্টিটিউট গঠনের সুপারিশ করা হয়। এগুলো হলো আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্র। এগুলোর গঠনকাঠামোও সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট ও শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, নিয়মিত অধ্যাপক দুজন, তিনজন সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার বা ব্যবস্থাপক একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুজন এবং একজন ক্লিনার।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং অ্যাকাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্র- এদুটোর জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, অতিথি অধ্যাপক থাকবেন একজন, অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার অথবা ব্যবস্থাপক হিসেবে একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং ক্লিনার-১ জন।

এ ছাড়া ১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ২৬ জন করে শিক্ষক রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হায়দার আলী বলেন, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এখনই এগুলো না দেখে বলা যাচ্ছে না। রেজ্যুলেশন পাশ হলে বিস্তারিত বলতে পারব। এ জন্য কিছুটা সময় লাগবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আলোচনায় এগুলোর সুপারিশ করেছি; কোনোটিই এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। আর অর্গানোগ্রাম অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় ডিপার্টমেন্টের জন্য ছাড়পত্র চায়, তারপর কমিশন (ইউজিসি) যদি অনুমোদন দেয়, তখন সেটা অর্গানাগ্রামে যুক্ত হয়। অর্গানোগ্রামে থাকলেই যে বিভাগ হয়ে যাবে, বিষয়টি এমনও না। ইউজিসি একটা অনুমোদন দিয়ে রাখে। এই অনুমোদনের আলোকে আবার যখন আবেদন দেওয়া হবে, তখন কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে। মূল কথা হলো এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েল এমন পরিকল্পনা থাকে। আমাদের এসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে অন্তত ২০৩২ সাল পর্যন্ত।’  

অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, ইউজিসি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে আসন সংখ্যা কমাতে, যাতে কোয়ালিটি এডুকেশনের নিশ্চিত হয়। এ জন্য তাঁরা ল্যাব বেজড বিভাগের জন্য ৪০টি আসন এবং ল্যাববিহীন বিভাগের জন্য ৫০ টি আসন বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। আর ১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা কমানো ও নতুন ১৮ বিভাগ চালুর সুপারিশ