অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে ধেয়ে যাচ্ছে বিরল ঘূর্ণিঝড় ‘আলফ্রেড’
Published: 5th, March 2025 GMT
অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে ‘বিরল’ ঘূর্ণিঝড় ‘আলফ্রেড’। পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
ক্যাটাগরি ১ ঘূর্ণিঝড় হারিকেনের সমতুল্য শক্তি নিয়ে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় আলফ্রেড শুক্রবার ভোরের দিকে কুইন্সল্যান্ডের রাজধানী ব্রিসবেনের দক্ষিণে উপকূল অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পানিতে তলিয়ে যেতে পারে এমন অঞ্চল থেকে সাধারণ মানুষকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া ব্যুরো (বিওএম) জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় আলফ্রেড উপকূল থেকে মাত্র ৪০০ কিলোমিটার (২৫০ মাইল) দূরে অবস্থান করছিল এবং ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) পর্যন্ত ধ্বংসাত্মক বাতাসের সঙ্গে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।
বুধবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বলেন, এটি একটি বিরল ঘটনা। দক্ষিণ-পূর্ব কুইন্সল্যান্ড এবং উত্তর নিউ সাউথ ওয়েলসের (এনএসডব্লিউ) গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে।
কুইন্সল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী ডেভিড ক্রাইসাফুল্লি বলেন, দক্ষিণপূর্ব কুইন্সল্যান্ডের জন্য এটি খুবই বিরল একটি ঘটনা। গত কয়েক দশকে রাজ্যের এই অঞ্চল কোনো সাইক্লোনের মুখোমুখি হয়নি।
ব্রিসবেনের কাছাকাছি একই শক্তির সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড়টি ছিল ১৯৭৪ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘জো’। যা শহর এবং এনএসডব্লিউর উত্তর নদী অঞ্চলে বড় বন্যা সৃষ্টি করেছিল।
ব্রিসবেনের জনসংখ্যা তখন থেকে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। শহরটিতে বর্তমানে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের বসবাস।
ব্রিসবেন সিটি কাউন্সিল জানিয়েছে, কুইন্সল্যান্ডের রাজধানী ব্রিসল্যান্ডের প্রায় ২০ হাজার বাড়ি ঝড় বা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের আগমনের আগে বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ব্রিসবেন শহরে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসী ফারুক রেজা সমকালকে বলেন, ব্রিসবেনে হালকা বাতাস বইছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে। এখানের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। গত ৫০ বছরে এমন ঘূর্ণিঝড় দেখেননি তারা। তবে অস্ট্রেলিয়া সরকার অনেক সহযোগিতা করছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ব্রিসবেন শহরে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার বাংলাদেশি থাকেন। তবে বৃহত্তর ব্রিসবেনে এর সংখ্যা প্রায় ৭-৮ হাজার।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় আলফ্রেডের সবচেয়ে খারাপ ঘূর্ণিঝড়টি ঝড়ের চোখের দক্ষিণে, গোল্ড কোস্ট থেকে উত্তর এনএসডাব্লু পর্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটন সৈকত বরাবর অনুভূত হতে পারে।
গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা গবেষক ড্যারেল স্ট্রাউস বলেন, গত ৫০ বছরে আমরা এমন কিছু দেখিনি। এমন কিছু অঞ্চল রয়েছে যেখানে ঝড়ের জলোচ্ছ্বাস সবচেয়ে বড় সমস্যা। তারপরে এমন কিছু অঞ্চল রয়েছে যেখানে উচ্চ ঢেউ এবং উপকূলীয় ক্ষয় এবং সরাসরি ঢেউয়ের কারণে সমুদ্র থেকে প্লাবিত হওয়া একটি বড় সমস্যা। সুতরাং, ব্রিসবেন থেকে নর্দার্ন রিভারস (এনএসডব্লিউ) পর্যন্ত আমরা এর সংমিশ্রণ পেয়েছি।
লর্ড মেয়রের অফিস থেকে জানানো হয়েছে, ব্রিসবেনের ২০ হাজার বাড়ি ঝড়ের জলোচ্ছ্বাস বা আকস্মিক বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
নিউ সাউথ ওয়েলসের উত্তরাঞ্চল এবং কুইন্সল্যান্ড উপকূলের সৈকতগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, কারণ কর্তৃপক্ষ ৫ মিটার (১৬ ফুট) এর বেশি উঁচু ঢেউয়ের সঙ্গে বিপজ্জনক সার্ফের বিষয়ে সতর্ক করেছে। নিউ সাউথ ওয়েলস স্টেট ইমার্জেন্সি সার্ভিসেস জানিয়েছে, ঝড়ের উচ্চতা ১০ মিটার (৩২ ফুট) পর্যন্ত হতে পারে।
কুইন্সল্যান্ডের প্রিমিয়ার ডেভিড ক্রিসাফুলি ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে বলেছেন। এছাড়া বড় বড় ক্রীড়া ইভেন্ট বাতিল করা হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় স্কুল বন্ধ থাকবে।
অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া ব্যুরো জানিয়েছে, আক্রান্ত অঞ্চলের কিছু জায়গায় ৮০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা মার্চের গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে অনেক বেশি।
সাইক্লোন আসার খবরে হাজার হাজার মানুষ উপকূলীয় অঞ্চলের বাড়ি থেকে সরে গেছেন। তাদের জায়গা করে দিতে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র খুলছে স্থানীয় সরকার। এছাড়া আতঙ্কে মানুষ পণ্য কিনে মজুত করছেন। এতে সুপারমার্কেগুলোয় পণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এছাড়া সেখানে বালুর ব্যাগেরও সংকট দেখা দিয়েছে।
সূত্র: সিএনএন, আলজাজিরা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঘ র ণ ঝড় ব র সব ন র আলফ র ড উপক ল
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।