স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ফ্ল্যাটে ঢুকেছেন, এই খবর পেয়ে পুলিশ ভবনটিতে অভিযান চালায়। কিন্তু ওই নেতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাউকে পাওয়া যায়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী নগরের কাদিরগঞ্জ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

আওয়ামী লীগের ওই নেতার নাম মোস্তাক আহমেদ ওরফে ‘ব্যাটারি বাবু’। তিনি নগরের বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। নগরের স্টেডিয়াম মার্কেটে তাঁর ‘সাব্বির আয়রন স্টোর’ নামের একটি ব্যাটারির দোকান আছে। তিনি স্থানীয়ভাবে ব্যাটারি বাবু নামে পরিচিত। তিনি গত জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি। গণ–অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন।

২০০৩ সালে ক্রিকেটার জিকো হত্যা মামলার আসামি ছিলেন মোস্তাক আহমেদ। ওই মামলা হওয়ার পর তিনি মধ্যপ্রাচ্যে চলেন যান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সালের দিকে তিনি দেশে ফেরেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক বেচাকেনার অভিযোগও আছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাতে খবর ছড়িতে পড়ে মোস্তাক আহমেদ রাজশাহী নগরের কাদিরগঞ্জ এলাকার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে উঠেছেন। এলাকার লোকজন ভবনটি ঘেরাও করেন। খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে সেখানে যায় থানা-পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সিআরটি। এ ছাড়া ছিলেন সেনা ও র‌্যাবের সদস্যরা। পুলিশের সদস্যরা ভেতরে গিয়ে তল্লাশি করলেও মোস্তাক আহমেদের খোঁজ পাননি। আজ শুক্রবার ভোর পর্যন্ত ভবনটি ঘিরে রাখেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, গতকাল রাত তিনটা পর্যন্ত অভিযান চলেছে। কিন্তু আসামিকে পাওয়া যায়নি। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম স ত ক আহম দ র সদস নগর র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

১২ ঘণ্টা পর নিভল কেরানীগঞ্জের বহুতল ভবনের আগুন

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে ‘জাবালে নুর টাওয়ার’ নামের বহুতল ভবনে লাগা আগুন ১২ ঘণ্টা পর নির্বাপণ করা হয়েছে। ভোর চারটার দিকে লাগা আগুন ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিটের চেষ্টায় নেভে সন্ধ্যা ছয়টায়। তবে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ওই ভবনে বসবাসরত ৪৫ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আগানগর এলাকায় বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুসংলগ্ন (বাবুবাজার সেতু) ওই ভবনের ভূগর্ভস্থ কাপড়ের গুদামে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে প্রথমে কেরানীগঞ্জ, সদরঘাট, লালবাগ, মিরপুর, সিদ্দিকবাজারসহ ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। তবে আগুন নেভাতে বেগ পাওয়ায় দুপুর ১২টার দিকে আরও ছয়টি ইউনিটসহ মোট ২০টি ইউনিট অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রমে অংশ নেয়।

আরও পড়ুনকেরানীগঞ্জে ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৪ ইউনিট, ৪২ জন উদ্ধার১২ ঘণ্টা আগে

সন্ধ্যা ছয়টার দিকে অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ভোর ৫টা ৩৭ মিনিটে আগুনের খবর পাওয়ার পর আট মিনিটের মধ্যেই প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে। পরে অন্যান্য ইউনিট যুক্ত হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (গণমাধ্যম) শাহজাহান শিকদার জানান, গুদাম ও দোকানগুলোর তালা, শাটার ও কলাপসিবল গেট কেটে আগুন নেভাতে হচ্ছে। ভেতরে বিপুল পরিমাণ কাপড় ও দাহ্য সামগ্রী থাকায় এবং ঘন ধোঁয়ার কারণে অগ্নিনির্বাপণে বেগ পেতে হয়েছে। ভবন থেকে ৪৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভবনটির মালিক হলেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. ফারুক হোসেন এবং আবাসন ব্যবসায়ী নুরে আলম। ৪২ শতাংশ জমির ওপর জাবালে নুর টাওয়ারটি সাতটি পৃথক ভবনের সমন্বয়ে গঠিত। কিন্তু এগুলোর বেজমেন্ট (ভিত্তিমাত্র) একটি। ভবনের ভূগর্ভস্থ, প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ঝুট কাপড়ের গুদাম ও দোকান রয়েছে। তৃতীয় তলা থেকে দশম তলা পর্যন্ত আবাসিক ফ্ল্যাট। অভিযোগ রয়েছে ভবনটি নির্মাণের সময় যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। এ ছাড়া ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ও জরুরি বহির্গমনের (ইমার্জেন্সি এক্সিট) কোনো ব্যবস্থাও ছিল না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ভবনের ভূগর্ভস্থলে ঝুট কাপড়ের গুদামের এক ভাড়াটে বলেন, ‘তিন বছর আগে মাসে ২০ হাজার টাকায় ফারুক হোসেনের কাছ থেকে একটি গুদাম ভাড়া নিই। আজকের আগুনের ঘটনায় আমার গুদামের সব মালামাল পুড়ে গেছে। এতে আমার প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আজ দুপুরে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফতাব আহমেদকে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উমর ফারুক বলেন, ভবনটি অনুমোদনহীন। তাঁদের গাফিলতি ও অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। অগ্নিকাণ্ডে যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করা হবে।

জাবালে নুর টাওয়ার ভবনটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জোন-৭–এর আওতাধীন। এ জোনের ইমারত পরিদর্শক বিটু কুমার বলেন, ‘আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আগামীকাল রোববার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী জাবালে নুর টাওয়ারের ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে মালিক ফারুক হোসেন ও নুরে আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা বারবার সংযোগ কেটে দেন।

ঢাকার কেরানীগঞ্জে জাবালে নুর টাওয়ার নামের একটি বহুতল ভবনের ভূগর্ভস্থ গুদামে শনিবার ভোরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১২ ঘণ্টা পর নিভল কেরানীগঞ্জের বহুতল ভবনের আগুন