চাঁদা দাবির ‘সত্যতা’ পাওয়ায় ছাত্রসংসদ নেতা অপুর পদ স্থগিত
Published: 8th, March 2025 GMT
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ীর থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করায় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া অপুর সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব জাহিদ আহসান সমকালকে বলেছেন, প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গোলাম কিবরিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হলের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের ছাত্র।
শনিবার জাহিদ আহসান প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে সদস্যপদ স্থগিত এবং এক কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাংগঠনিক আচরণবিধি ভঙ্গ ও নৈতিক স্খলনজনিত কারণে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া অপুর বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ এর সদস্য পদ স্থগিত করা হলো এবং তাকে কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না এজন্য এক কার্যদিবসের মধ্যে আহ্বায়ক বরাবর সদুত্তর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।
জানতে চাইলে জাহিদ আহসান বলেন, ‘প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় সদস্যপদ স্থগিত করেছি। আমরা ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছি, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার সঙ্গে কথা বলেছি। ভিক্টিমের সঙ্গে কথা বলে এবং তার পাঠানো অডিও রেকর্ড বিশ্লেষণ করে মনে হয়েছে, ঘটনা সত্য হতে পারে। তবুও আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আমরা তাকে একদিন সময় দিয়েছি- কারণ দর্শানোর। এখন সদস্যপদ স্থগিত আছে, কারণ দর্শাতে না পারলে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে।’
এর আগে ঘটনাটি জানাজানি হয় গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের মাধ্যমে। তিনি শুক্রবার রাতে একটি ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, তার এলাকার এক ব্রডব্র্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রথমে পঞ্চাশ হাজার এবং আলোচনার ভিত্তিতে কমিয়ে ত্রিশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছেন গোলাম কিবরিয়া। পরে রাশেদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যবসায়ীর সঙ্গে গোলাম কিবরিয়ার হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথনের দুইটি রেকর্ড পাঠান।
একটিতে ব্যবসায়ীকে বলতে শোনা যায়, ‘বিগত সময়ে ব্যবসা করছি.
আরেকটি ক্লিপে ব্যবসায়ীকে বলতে শোনা যায়, ‘এটা আসলে বেশি হয়ে যায়, ব্যবসা এরকম না, দেখেন কী করা যায়?’ তখন কিবরিয়া জানতে চান, ‘আপনার কাছে স্বাভাবিক মনে হয় কত?’, ব্যবসায়ী জবাবে বলেন, ‘আমারে তো অফিস থেকে বিশের কথা বলছিল।’ কিবরিয়া বলেন, ‘অর্ধেকও না, আচ্ছা আপনি ত্রিশের কথা বলেন যদি হয় তাহলে আজকে রাতে..’।
এ বিষয়ে জানতে ভুক্তভোগীর যোগাযোগ নাম্বার চাইলে নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রাশেদ খান নম্বর দেননি। এ ব্যাপারে তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম কিবরিয়া সমকালকে বলেন, ‘ঘটনাটা এমন না। আমি বিস্তারিত কিছুক্ষণের মধ্যেই জানাবো।’ এরপর আর তিনি কিছু জানাননি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ ল ম ক বর য় ব যবস য় সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।