ইউক্রেনের মিত্র দেশ পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক ঘোষণা করেছেন, তার দেশের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে ব্যাপক পরিসরে সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এ লক্ষে কাজ শুরু হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি। খবর বিবিসির।

পোল্যান্ডের পার্লামেন্টে এক বক্তব্যে টাস্ক বলেন, “এবছরের শেষেই আমরা একটি মডেল প্রস্তুত করার চেষ্টা করব। যাতে পোল্যান্ডের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ যুদ্ধকালে প্রশিক্ষিত থাকতে পারে এবং সম্ভাব্য হুমকির ক্ষেত্রে এই রিজার্ভ বাহিনী সমতুল্য এবং পর্যাপ্ত হয়।”

টাস্ক জানান, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ৮ লাখ সেনা আছে। রাশিয়ার আছে ১৩ লাখ সেনা। আর তিনি রিজার্ভ সেনাসহ পোলিশ সেনাবাহিনীর আকার বাড়াতে চান, যে সংখ্যা দাঁড়াবে এখনকার প্রায় ২ লাখ থেকে ৫ লাখে।

তিনি বলেন, “আমরা পোল্যান্ডে ৫ লাখ সদস্যের সেনাবাহিনী গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছি, যার মধ্যে থাকবে রিজার্ভ সেনাও। আমি এ বিষয়ে অবিরাম প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছি। মনে হচ্ছে যদি আমরা বিচক্ষণভাবে বিষয়গুলো সংগঠিত করি তাহলে আমাদেরকে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে।”

“এর মানে হচ্ছে, রিজার্ভ সেনাদের পাশাপাশি যারা কখনও পুরোপুরিভাবে সেনাবাহিনীতে যায়নি এবং যুদ্ধের সময় দক্ষ সেনা ছিল না তাদেরকেও নিবিড় প্রশিক্ষণ দিতে হবে”, বলেন তিনি।

এ ছাড়া নারীদেরও সামরিক প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। যদিও এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “যুদ্ধ এখনো অনেকাংশেই পুরুষদের বিষয়।”

বিবিসি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পোলিশদের মধ্যে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

পোল্যান্ডের বেশিরভাগ নাগরিকই মনে করে ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়াটা তাদের নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রয়োজন।

টাস্ক জানান, পোল্যান্ড বর্তমানে জিডিপির ৪.

৭ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার পরিকল্পনা করছে, যা ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এই ব্যয় বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে বলেও মত দেন তিনি।

ঢাকা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ