মাদারীপুরে বালু ব্যবসা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন প্রতিপক্ষের লোকজন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের সরদার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলায় আরও তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

নিহত ওই দুই ভাই হলেন আতাউর রহমান সরদার ওরফে আতাবুর (৩৫) ও সাইফুল ইসলাম ওরফে হিটার সাইফুল (৩০)। তাঁরা সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের সরদার বাড়ি এলাকার আজিবর সরদারের ছেলে। এর মধ্যে সাইফুল খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। হামলার সময় বসতঘরেও ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষের লোকজন। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এ ঘটনায় গুরুতর আহত তিনজন হলেন পলাশ সরদার (১৭), তাজেল হাওলাদার (১৮) ও অলিল সরদারকে (৪০)। আহত তিনজনের মধ্যে অলিল সরদার নিহত ব্যক্তিদের বড় ভাই।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সদর উপজেলার খোয়াজপুর টেকেরহাট এলাকার মোল্লা বাড়ি ও সরদার বাড়ির মাঝামাঝি এলাকায় বালু তোলা নিয়ে দুই বংশের লোকজনের মধ্যে লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার জেরে শনিবার সকালে মোল্লা বাড়ির লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সরদার বাড়িতে হামলা চালান। প্রতিপক্ষের হামলা থেকে বাঁচতে সাইফুল ও তাঁর আরও দুই ভাই বাড়ির সামনে একটি মসজিদে আশ্রয় নেন। পরে হামলাকারীরা মসজিদের মধ্যে ঢুকে তিন ভাইকে কুপিয়ে জখম করেন। এ সময় তাঁদের উদ্ধারে এগিয়ে এলে হামলায় আহত হন আরও দুজন। পরে হামলাকারীরা আতাউর ও সাইফুলের বসতঘর ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যান।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আতাউল ও সাইফুলের লাশ উদ্ধার করে সাড়ে ১১টার দিকে মাদারীপুরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এর আগে আহত তিনজনকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

মাদারপুরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে দুজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। এ ঘটনায় আহত আরও তিনজনকে গুরতর অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রত্যেকের শরীরে ধারালো অস্ত্রের গভীর জখম রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য আহত তিনজনকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

আতাউর সরদারের স্ত্রী মাহামুদা বেগম স্বামী ও দেবরের লাশ নিয়ে হাসপাতালে আসেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামীর কী দোষ! তিনি এলাকায় সবার উপকার করত। শাজাহান মোল্লা, হাসান সরদার, হোসেন সরদার মিলে আমার স্বামী ও দেবরকে খুন করছে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিছে। আমি কার কাছে যামু? আমি হত্যাকারীগো ফাঁসি চাই।’

নিহত দুজনে বড় ভাবি রোজিনা বেগম বলেন, ‘মোল্লার বাড়ির লোকজন অতর্কিতভাবে আমাদের ওপর হামলা করে। আমার স্বামী ও দুই দেবরকে ওরা কোপাইছে। আমার দুই দেবর শেষ। স্বামীর অবস্থাও খুব খারাপ। সব শ্যাষ হয়ে গেল।’

আতাউর রহমান ও সাইফুলের নিহত ঘটনায় তার বড় ভাবির আহাজারি। শনিবার দুপুরে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরদ র ব ড় র ল কজন র সরদ র অবস থ এ ঘটন ঘটন য় আহত ত

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ